ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুফতি হান্নানের ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

মুফতি হান্নানের ফাঁসি

মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সি ওরফে মুফতি হান্নান এবং তার দুই সহযোগী শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল পাটোয়ারী ও দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি গত বুধবার রাতে কার্যকর করা হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর এবং সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। মুফতি হান্নান ছিলেন নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা এবং অপর দু’জন তার সহযোগী। ২০০৪ সালের ২১ মে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় অনুযায়ী কার্যকর করা হয় এই মৃত্যুদ-। উল্লেখ্য, ১৮ বছর আগে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের দুর্ধর্ষ ও রক্তাক্ত অধ্যায় শুরু করে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী-বাংলাদেশ (হুজিবি)। এরপরের ছয় বছরে ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাসহ অন্তত ১৬টি ভয়ঙ্কর বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গী সংগঠনটি। এর মধ্যে আরও উল্লেখ্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে দু’দফায় হত্যাচেষ্টাসহ রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা। এসব হামলারই মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মুফতি হান্নান ও তার দল হুজি। তার ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে দেশে জঙ্গীবাদের অন্তত একটি কুখ্যাত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল বলা চলে। অবশ্য মুফতি হান্নানের মামলা ও ফাঁসি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ রয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট ভয়াবহ এসব গ্রেনেড হামলাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার হীন অপচেষ্টা চালিয়েছে। তবু সব কিছুর উর্ধে বেরিয়ে এসেছে সত্য, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ন্যায়বিচার, এটুকুই যা সান্ত¡নার। ফাঁসি কার্যকরের কিছুদিন আগে টঙ্গীতে কুখ্যাত জঙ্গী নেতা বহু অপরাধে অপরাধী ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালায় জঙ্গীরা। সে সময় চাপাতি ও হাতবোমাসহ দু’জন জঙ্গীকে গ্রেফতারের খবর আছে। তার মানে দেশ থেকে জঙ্গীবাদ ও তৎপরতা একেবারে নির্মূল হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও তা স্বীকার করেছেন। সরকার ইতোমধ্যে আনসার আল ইসলামসহ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গীদের হাতবোমা, অস্ত্রশস্ত্র, জিহাদী বইসহ ধরাও হচ্ছে। গোলাগুলিতে নিহত ও আহত হওয়ার খবরও আছে। এত কিছুর পরও তাদের তৎপরতা অব্যাহত, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি ও জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুখ্যাত জামায়াত-শিবির হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে প্রসার ঘটায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনই শিকড় গেঁড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয় বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। টঙ্গী ও কুমিল্লায় জনপ্রতিরোধের বিষয়টি লক্ষণীয়। দেশ যদি আধুনিক শিক্ষা ও স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে দৃঢ় পদক্ষেপে অগ্রসর হতে পারে, তাহলে এমনিতেই জঙ্গীবাদ নির্মূল হতে বাধ্য। তদুপরি দীর্ঘসূত্রতা পরিহারে জঙ্গীদের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
×