ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘গণহত্যার বিশ্ব স্বীকৃতি আদায়ে যথাযথ নথি পেশ জরুরী’

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৪ এপ্রিল ২০১৭

‘গণহত্যার বিশ্ব স্বীকৃতি আদায়ে যথাযথ নথি পেশ জরুরী’

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে জাতিসংঘে যথাযথভাবে নথি উপস্থাপন করতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে ধীরে ধীরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ছে। আগামীতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা আরও বাড়বে। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি এ্যাবার্ট এ কথা বলেন। এছাড়া বর্তমান সময়ে ফ্রান্স নিজ দেশে জিহাদী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিস) উদ্যোগে দেশভিত্তিক বক্তৃতা সিরিজের অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিস মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে ‘ফ্রান্সের চ্যালেঞ্জ ও পররাষ্ট্র নীতি’ শীর্ষক বক্তব্য রাখেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি এ্যাবার্ট। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন বিস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুর রহমান। সোফি এ্যাবার্ট তাঁর বক্তৃতায় ফ্রান্সের সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ ও পররাষ্ট্র নীতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ফ্রান্স বর্তমানে তিনটি সমস্যা চ্যালেঞ্জ হিসেবে মোকাবেলা করছে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো ইউরোপীয় চ্যালেঞ্জ, দ্বিতীয়টি জিহাদী চ্যালেঞ্জ ও তৃতীয়টি সাইবার নিরাপত্তা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২৮টি দেশ রয়েছে। তবে এসব দেশের সকলের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ একই ধরনের নয়। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিটের মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে চলেছে। অন্যান্য দেশের মতো ফ্রান্সকেও ইউরোপীয় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে মুসলিম জিহাদীদের কার্যক্রম তুলে ধলে সোফি এ্যাবার্ট বলেন, মুসলিম জিহাদীরা এখন বিশ্বের সামনে একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই হুমকি ফ্রান্সকেও বিশেষভাবে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আপনারা দেখেছেন, ফ্রান্সে ইতোমধ্যেই জিহাদীরা কয়েক দফায় হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জিহাদী জঙ্গী হামলা মোকাবেলা করা আমাদের সামনে বড় একটি চ্যালেঞ্জ। ফরাসী রাষ্ট্রদূত বলেন, ফ্রান্স একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। সেখানে সকলেরই সমানভাবে ধর্মপালনের অধিকার রয়েছে। তবে সেখানে জিহাদী জঙ্গী তৎপরতা কোনভাবেই আমরা চলতে দিতে পারি না। তিনি বলেন, ফ্রান্সে জিহাদীদের তৎপরতার দিকে বিশেষভাবে নজর রাখছে সরকার। ইতোমধ্যেই একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণেও তৎপর রয়েছে বলেও তিনি জানান। সোফি এ্যাবার্ট বলেন, বর্তমান বিশ্বে অন্যান্য দেশের মতো ফ্রান্সও সাইবার আক্রমণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। অনেক দেশই সাইবার আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ফ্রান্সও এই সাইবার হুমকি থেকে মুক্ত নয়। সে কারণে এই হামলা মোকাবেলায় আমরা প্রযুক্তিগতভাবে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। অনুষ্ঠানে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে ফ্রান্সের লাফার্জ কোম্পানির বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে। এখানে ফ্রান্সের সানোফি ওষুধ কোম্পানিও বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, তেল শোধনাগার, পানি শোধনাগারসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামীতে এই সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে ফ্রান্স বাংলাদেশকে সমর্থন জানাবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সোফি এ্যাবার্ট বলেন, ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশকে যথাযথ নথি জাতিসংঘে উপস্থাপন করতে হবে। আর এটাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে এ্যাবার্ট বলেন, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ফ্রান্সের উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হয়েছে। তবে সেসব দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ফ্রান্স তাদের প্রতি কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বিস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ফ্রান্স বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ফ্রান্সে বাংলাদেশের প্রায় ১২ হাজার অভিবাসী রয়েছে। তারা ফ্রান্সের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। দুই দেশের মধ্যে ধীরে ধীরে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাও বাড়ছে। আমরা আশা করি দুই দেশের মধ্যে আগামীতে আরও গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হবে।
×