ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৪ এপ্রিল ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ উৎসবের বৈশাখ এলো। এলো বাঙালিত্বের গৌরব নিয়ে জেগে ওঠার দিন। আজ শুক্রবার ১৪২৪ বঙ্গাব্দের প্রথম দিনে শেকড়ের সন্ধান করবে বাঙালী। নিজের সংস্কৃতিকে সবকিছুর উর্ধে তুলে ধরবে। সে লক্ষ্যে অনেক দিন ধরেই চলছিল প্রস্তুতি। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় আর কিছু তেমন দেখা যায়নি। বৈশাখ দৃশ্যমান হচ্ছিল শুধু। একটু একটু করে সামনে আসছিল। এভাবে নতুন বছর শুরুর আগেই রঙিন হয়ে উঠেছিল চারপাশ। বৃহস্পতিবার ছিল চৈত্রসংক্রান্তি। বর্ষবিদায়ের এই আনুষ্ঠানিকতা অনেক পুরনো। ধর্ম বর্ণ নির্বিশিষে সকলেই উদযাপন করে থাকেন। ঐতিহ্য মেনে এদিনও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান পালন করেছেন রাজধানীবাসী। প্রতিবারের মতো এবারও সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে বর্ষবিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে আয়োজিত অনুষ্ঠান সংস্কৃতি কর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। নানা আনুষ্ঠানিকতায় পুরনো বছর ১৪২৩ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানানো হয়। মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সরোদ বাজিয়ে শোনান প্রখ্যাত শিল্পী শাহাদত হোসেন খান। ময়মনসিংহের জসিম পাগলা ও তার দল পরিবেশন করে পালাগান গাজীকালু-চম্পাবতী। ছিল গম্ভীরা, পুঁথি পাঠ, লোক গান, নাচ, আবৃত্তি। উৎসবে যোগ দেয়া সকলকে মুড়ি-মুড়কি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। চৈত্রসংক্রান্তির এই অনুষ্ঠান চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। ততক্ষণে বর্ষবরণের প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে এসেছিল। চারুকলা অনুষদে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল বিশাল শিল্পকাঠামো চেহারা। এগুলো সঙ্গে নিয়েই আজ সকালে বের করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। কাজ শেষ করতে পারার আনন্দটা নানাভাবে প্রকাশ করছিলেন শিক্ষার্থীরা। নাচ গানসহ নানা আয়োজনে মেতে ছিলেন তারা। সমন্বয়কদের একজন সবুজ বললেন, বিশাল কর্মযজ্ঞ। সফল করতে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে। এর পরও ভাল লাগছে যে, আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি গৌরবের সঙ্গে তুলে ধরতে পেরেছি। সব অন্যায় অশুভকে পায়ে মাড়িয়ে সবাইকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। পহেলা বৈশাখের আরেক ঐতিহ্য আলপনা। গ্রামীণ জীবনে ঘরের মেঝেতে ওঠানে আলপনা করতেন আমাদের মায়েরা। সেই ঐতিহ্য মেনে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে আলপনা আঁকা হয়েছে। মানিক মিয়া এভিনিউতে বৃহস্পতিবার রাতে আলপনা আঁকার কাজ করেন শিল্পীরা। যৌথভাবে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমীন চৌধুরী ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। মানিক মিয়া এভিনিউয়ের প্রায় ৪ লাখ বর্গফুট এলাকায় আলপনা আঁকেন দুই শতাধিক চিত্রশিল্পী। তাদের সঙ্গে যোগ দেন কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ। আয়োজকরা জানান, ‘আলপনায় বাংলাদেশ’ নামের উৎসবটি একইসঙ্গে চলবে পাঁচ বিভাগীয় শহরে। উৎসবের আয়োজক এশিয়াটিক ইএক্সপি, টাইটেল স্পন্সর বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেড। সহযোগী স্পন্সর বার্জার পেইন্টস লিমিটেড। একই দিন আলপনা আঁকা হয় গেন্ডারিয়া এলাকায়। ‘আঁকবো আমরা রাঙাবো গেন্ডারিয়া’ সেøাগানে রাতে রাস্তায় নামে এলাকার তরুণরা। আলপনা উৎসব শুরু হয় সীমান্ত গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণের মূল রাস্তা থেকে। আজগর আলী হাসপাতাল থেকে ধূপখোলার দীননাথ সেন রোড পুরোটা এবং সাধনা ঔষধালয়ের কার্যালয় পর্যন্ত আলপনা আঁকা হয়। এ উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, সম্মিলিতি সাংস্কৃতিক জোটের নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ম্যানজার চৌধুরী সুইট, সীমান্ত গ্রন্থাগারের সভাপতি মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতান আহমেদ টোকন প্রমুখ। অবশ্য প্রতিবাদ প্রতিরোধের কথাও বলতে হবে। বৈশাখ শুরুর ক্ষণে বৈশাখ রুখে দেয়ার হুঙ্কার দিচ্ছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। তাদের প্রতিহত করার প্রত্যয়ে এবার উদযাপিত হবে বৈশাখ। উগ্রপন্থীদের নানা আস্ফালনের প্রতিবাদে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা। বৃহস্পতিবার শাহবাগে তারা প্রতিবাদী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সরকার সজ্ঞানে গোখরো সাপ নিয়ে খেলছে বলে মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, মৌলবাদী গোষ্ঠীর দাবি অনুযায়ী সরকার পাঠ্যপুস্তক থেকে প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দিয়েছে। এখন সেই একই গোষ্ঠীর দাবির প্রেক্ষিতে সরকার সুপ্রীমকোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য অপসারণ করার কথা বলছে। এটা মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাছে নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ।
×