ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষবরণে নামবে মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৪ এপ্রিল ২০১৭

বর্ষবরণে নামবে মানুষের ঢল

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাঙালীর ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে রয়েছে বৈশাখ। বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিসি হিলে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষ বিদায়ের পর্ব। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এ বিদায়কে ঘিরে নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছে ডিসি হিল প্রাঙ্গণে। এদিকে, আজ পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ বাংলা ১৪২৪ বর্ষকে বরণ করতে নগরীর তিনটি বৃহৎ স্পটে নামবে মানুষের ঢল। পাহাড়ের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা ডিসি হিল আর শতবর্ষী গাছের গুঁড়িতে মঞ্চায়িত হয়েছে শিরীষতলা। কর্ণফুলী নদী আর বঙ্গোপসাগরের মোহনা তথা নেভাল একাডেমিসহ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সর্বস্তরের মানুষের অবস্থান থাকবে তিল ধারণের বাইরে। বাংলা ১৪২৪ বর্ষকে বরণ করতে চট্টগ্রামে নানা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে সাজানো হয়েছে বেশ কয়েকটি স্পট। নগরবাসীকে বাঙালীর প্রাণের উৎসব পালনে ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনী। সিসি ক্যামেরা থেকে শুরু করে আর্চওয়ে গেট এমনকি ব্যাপক তল্লাশির মধ্য দিয়ে আগতদের প্রবেশাধিকারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএমপি। এদিকে, নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি ও পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা ডিসি হিল মঞ্চে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সংস্কৃতিপ্রেমীদের আগমন শুরু হয়েছে বর্ষকে বিদায় জানাতে। চৈত্রের শেষ বিকেলে দেশীয় ঐতিহ্য ও গ্রামবাংলার সে অনাবিল চিত্র কবিতা আবৃতি ও গানে গানে ফুটিয়ে তুলেছে শিল্পীরা। আজ ডিসি হিল, সিআরবি শিরীষতলা, পতেঙ্গা সি বীচ এলাকায় বৈশাখী উৎসবকে ঘিরে নগরীর কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএমপি। এসব স্পট ঘিরে থাকা সড়কগুলোতে যান চলাচল ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। বরিশাল খোকন আহম্মেদ হীরা বরিশাল থেকে জানান, বাঙালী সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অপরিহার্য অঙ্গ হচ্ছে মেলা। আমাদের জীবনের সঙ্গে মেলার যোগ দীর্ঘকালের। উৎসব, বিনোদন, বিকিকিনি আর সামাজিক মেলামেশার উদার ক্ষেত্র হচ্ছে মেলা। বিভিন্ন পার্বণে মেলা হয়ে থাকে। নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলা বাঙালীর চেতনাকে উজ্জীবিত করে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাঙালীর জীবনে নতুন আরেকটি বছরের আগমনের অধ্যায়। আজ পহেলা বৈশাখ থেকে শহর, বন্দর, গ্রামগঞ্জে বৈশাখী মেলা শুরু হবে। মেলায় বাবা, চাচা, মামা কিংবা ভাইয়ের হাত ধরে বোন আসে বেড়াতে। মেলা উপলক্ষে দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন। লোকজন সেসব দেখেশুনে প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করে থাকেন। মেলায় অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু নাগরদোলা। ‘একটি সময় ছিল যখন গ্রামের মেঠোপথ ধরে হেঁটে যেতাম তখন কোন জমির আইলে বসে থেকে রাখালেরা বাঁশি বাজাত অথবা কোন এক পূর্ণিমা রাতে সুরেলা শব্দ ভেসে আসত, হয়ত কেউ একজন বাঁশি বাজাত।’ এখন আর আগের মতো বাঁশির সুর কানে বাজে না। এসব বাঁশের বাঁশি মেলা থেকেই ক্রয় করা হতো। বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ বাংলাদেশ। প্রতি মাসেই কোন না কোন উৎসব হয়ে থাকে। বৈশাখ মাস তার ব্যতিক্রম নয়। আর পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করা হয় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে। এ দিনটির সঙ্গে অন্য যে বিষয়টি নিবিড়ভাবে জড়িত তা হলো মেলা। মেলায় শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীসহ পরিণত মানুষের বিশাল সমাবেশ ঘটে। শিশুরা বাবা, মায়ের হাত ধরে কিংবা কোলে বা কাঁধে চড়ে মেলায় এসে নির্মল আনন্দ উপভোগ করে। মেলার অর্থ মিলন বা সম্মিলন। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে মেলা হয়ে থাকে। দীর্ঘকাল ধরেই মেলার প্রবর্তন। মেলা উপলক্ষে যেসব খাবার, খেলনা ও কারুপণ্য তৈরি হয় তা আমাদের কৃষ্টির অন্যতম উপাদান। অতীতে বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলায় কৃষিপণ্য, কৃষি উপকরণ ও বীজ পাওয়া যেত। এখন এগুলো তেমন দেখা যায় না। মৃৎ ও কুটির শিল্পজাত বিভিন্ন পণ্যে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। অনেক ক্ষেত্রে মেলা আয়োজনেও এসেছে নতুনত্ব। বাঙালী চেতনা ও বাঙালী সংস্কৃতির প্রবহমান ধারা হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ও বৈশাখী মেলা। আগের অবস্থার কিছু পরিবর্তন ঘটলেও মেলা এখনও জমজমাট। সর্বস্তরের সব বয়সের মানুষের কাছে মেলা অনাবিল আনন্দের উৎস হিসেবে চিহ্নিত। মেলার মাধ্যমে সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার পরিচয় মেলে। যশোর স্টাফ রিপোর্টার যশোর অফিস থেকে জানান, মাহবুব জামাল শামীম বরাবরই সৃজনশীল একজন মানুষ। শিশুদের নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করার লক্ষ্যে যশোরে তিনি ‘চারুপীঠ’ নামে এক ব্যতিক্রমী সংগঠন গড়ে তোলেন। তিনি সব সময় বাঙালীর নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে করেছেন ভিন্ন ভিন্ন কাজ। ১৯৮৫ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরিতে নানা রকম ভিজ্যুয়াল কাজ, বাহারি পোশাক আর হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য দিয়ে বর্ণিল এক শোভাযাত্রা করে তাক লাগিয়ে দেন যশোরবাসীকে। এরপর তিনি মুগ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেন আসছে পহেলা বৈশাখেও আয়োজন করবেন এমন ব্যতিক্রমী শোভাযাত্রার। চারুপীঠের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী মাহবুব জামাল, হিরন্ময় চন্দ, ছোট শামীমসহ কয়েকজন উদ্যোগ নিলেন পহেলা বৈশাখে বর্ণিল শোভাযাত্রা করার। যেই ভাবা সেই কাজ, বাঙালী সংস্কৃতিকে থিম করে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন গ্রামীণ সব উপকরণ, বিশালাকার পুতুল আর মুখোশ তৈরির কাজে। আর এভাবেই ১৯৮৫ সালে দেশের মধ্যে যশোরেই প্রথম আয়োজিত হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার। এরপর ধীরে ধীরে এ শোভাযাত্রার কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৯ সালে যখন মাহবুব জামাল চারুকলায় ভর্তি হলেন, তখন পহেলা বৈশাখে শোভাযাত্রা আয়োজনের কথা বলা হয়। এরপর চারুকলার শিক্ষার্থীরা মিলে তৈরি করলেন মুখোশ, আনলেন দেশীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন পণ্য আর মন ভরা উদ্দীপনা নিয়ে সবাই নেমে পড়লেন নববর্ষকে বরণ করতে। তখন ওই শোভাযাত্রা ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিতি ছিল। পরে ১৯৯৬ সাল থেকে তা মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে পরিচিত হতে থাকে। সফল এ শোভাযাত্রায় সকল বর্ণ-ধর্মের মানুষের প্রচুর সাড়া পাওয়ায় প্রতি বছরই আয়োজিত হয় এ শোভাযাত্রা। এরপর ধীরে ধীরে এ মঙ্গল শোভাযাত্রার রীতি ছড়িয়ে পড়ে বরিশাল, ময়মনসিংহ এমনকি ভারতেও। এখন দেশের সব জায়গাতেই পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। লক্ষ্মীপুর নিজস্ব সংবাদদাতা লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, চার শ’ বছর পূর্বে মোগল সম্রাট আকবরের আমল থেকে বাংলা সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এবং পশ্চিম বাংলায় (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) বাংলা নববর্ষ আগমন উপলক্ষে নানান উৎসবের আয়োজন চলে আসছে। এর মাধ্যমে জানান দেয়া হয় বাঙালীয়ানার আচার-আচরণ, ভাষা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সামাজিক রীতিনীতি, শত রকমের খানা-পিনার বাহারি প্রচার, ব্যবসায়ীদের পুরাতন হিসাব-নিকাশ কষে নতুন হিসাবের নতুন খাতা (খাতাহাল) খোলার মাধ্যমে। প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসায়ীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি এর প্রবণতা চলে আসছে। এরই একটি অংশ হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে দেশীয় শত রকমের বাহারি পণ্যের মেলার আয়োজন। ক্রমেই এর প্রয়োজনীয়তা বাঙালীর হৃদয়ে সাড়া জাগায়। বিভিন্ন স্থানে এর ব্যাপ্তি এবং প্রসার ঘটতে থাকে বটতলার মেলাসহ বিভিন্ন আয়োজন। চন্দ্রতিথি এবং বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতি বছর লক্ষ্মীপুর সদরের শমসেরাবাদ, চন্দ্রগঞ্জ, কালীবাজার, মান্দারী, পশ্চিম লক্ষ্মীপুরে বটগাছের ছায়ার নিচে বিভিন্ন হাট-বাজার বসতে থাকে। তবে সারাদেশে ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পালন করা হলেও সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা চন্দ্রতিথি এবং পঞ্জিকা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে মিল রেখে বাংলা নববর্ষ পালন ও এ মেলার আয়োজন করে থাকেন ১৫ এপ্রিল। রাঙ্গামাটি নিজস্ব সংবাদদাতা রাঙ্গামাটি থেকে জানান, মূল বিজু উৎসব পালিত হয়েছে। মূল বিজুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে বসবাসরত সব সম্পদায়ের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়। চৈত্র মাসের শেষ দিনকে বলে মূল বিজু। এদিন পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকেরা ঘরদোর পরিষ্কার করে ঘরে ঘরে নানা ধরনের ২১টি তরকারি একসঙ্গে মিশিয়ে অত্যন্ত সুসাদু পাচন রান্না করে থাকে। ঈদ উৎসবের মতো এক পাড়ার লোক অপর পাড়ায় গিয়ে মনের আনন্দে মুরব্বিদের প্রণাম করে হৈ-হল্লা করে নানা সুসাদু খাবার খেয়ে আসে। প্রতিটি মহল্লায় চলে আনন্দ উৎসব। এ উৎসব হয়ে ওঠে সব সম্প্রদায়ের লোকের মিলনমেলা। এ উৎসবে পাহাড়ী-বাঙালী নারী-পুরুষ দলবেঁধে একের ঘরে অপরে গিয়ে পাচন খেয়ে আসে এবং বয়োজ্যেষ্ঠকে প্রণাম করে। ঘরের মহিলারা দিনভর নানা আনুষ্ঠানিকতা ও অতিথি আপ্যায়ন করে দিন কাটায়। পরের দিনকে গজ্যাপজ্যা বলে। এদিন সবাই গল্প-গুজব করে আরাম করে। মূলত তিন দিনের এ উৎসব হলেও ফুল বিজু ও মূল বিজুর দিন সবাই বেশ আনন্দ করে। রাঙ্গামাটিতে চাকমা রাজার ঘাট ও গর্জনতলী ঘাটে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে ফুল বিজু পালন করে। উপকূলে ইলিশ নিয়ে টানাটানি স্টাফ রিপোর্টার গলাচিপা থেকে জানান, কথিত পান্তা-ইলিশের চাহিদা মেটাতে পটুয়াখালীসহ গোটা দক্ষিণ উপকূলে চলছে শেষ মুহূর্তের ইলিশ নিয়ে টানাটানি। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এমনকি জাটকার চাহিদাও তুঙ্গে উঠেছে। এ সুযোগে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী তিন-চার মাস আগের বরফজাত ইলিশ বাজারে ছেড়ে কামিয়ে নিয়েছে মোটা অঙ্কের মুনাফা। সারাদেশে সাড়ম্বরে পালিত হবে নববর্ষ। আবার বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী শনিবার পহেলা বৈশাখ। দেশের দোকানি ব্যবসায়ীসহ বহু মানুষ শনিবারে নববর্ষ উদযাপন করবে। দু’দিন নববর্ষ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি খুশি ব্যবসায়ীরা। ভাতের পাতে টাটকা মাছের রকমারি পদ, বাংলা নববর্ষ উদযাপনের এ রেওয়াজ দক্ষিণাঞ্চলে কয়েকশ’ বছরের পুরনো। এর সঙ্গে গত কয়েক বছরে যুক্ত হয়েছে এক শ্রেণীর মানুষের পান্তা-ইলিশ বিলাস। ইতিহাস-ঐতিহ্যে থাক না থাক, তাদের কথিত এ প্রথা অনেকের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পান্তার সঙ্গে ইলিশ বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী ইলিশ বর্জন করছে। কিন্তু এ প্রথা একেবারে বিলুপ্ত হয়নি। শহরে বন্দরে অনেকেই হন্যে হয়ে খুঁজছে ইলিশ। এ কারণে ইলিশের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে কোথাও কোথাও ইলিশ একেবারেই মিলছে না। ইলিশের জন্য বিখ্যাত দক্ষিণ-উপকূলে গত কয়েকদিন ধরেই ইলিশের আকাল চলছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল শহরের পোর্ট রোডে ইলিশের আড়তগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ আড়ত ইলিশ শূন্য। কোন কোন আড়তে দু’চার মণ ইলিশ এলে তাতে হুমরি খেয়ে পড়ছে সবাই। মুহূর্তেই তা প্যাকেট হয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকায়। আড়তদাররা জানিয়েছেন, ইলিশের দাম এতটাই বেড়েছে যে, ইলিশের গায়ে হাত দেয়া যাচ্ছে না। পাঁচশ’ গ্রাম ওজনের নিচের সাইজের জাটকা ইলিশ কয়েকদিন আগেও প্রতি কেজি আড়াই থেকে তিনশ’ এবং প্রতি মণ ২০-২২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন এর দাম উঠেছে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আটশ’ গ্রাম ওজনের নিচের ইলিশ প্রতি মণের দাম ছিল ৩০ হাজার টাকার নিচে। এখন এর দাম ৫০ হাজারের ওপরে। এক কেজি সাইজের ইলিশের প্রতি মণের দাম ছিল ৬০-৭০ হাজার টাকা। এখন এর দাম সর্বশেষ সোয়া লাখ টাকায় পৌঁছেছে। এদিকে বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলা অঞ্চলের কয়েকটি নদীতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা শিকারে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে নৌবাহিনীও কাজ করছে। ফলে জাটকা আহরণ কমে গেছে। এতেও পান্তা-ইলিশ বিলাসীরা বিপাকে পড়েছে। বান্দরবান নিজস্ব সংবাদদাতা বান্দরবান থেকে জানান, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় আদিবাসী ঐতিহ্যের সাজে বর্ণিল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে মারমা আদিবাসীদের পাঁচ দিনব্যাপী বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাই শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের আয়োজনে বান্দরবান শহরের রাজারমাঠ থেকে বর্ণিল শোভাযাত্রা বের করা হয়। পরে শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজারমাঠে শেষ হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেনÑ বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চাকমা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হারুন অর রশীদ, সিভিল সার্জন উদয় শংকর চাকমা, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ক্য সা প্রু মার্মা, লক্ষ্মীপদ দাস, ফিলিপ ত্রিপুরা, ম্রাচা খেয়াং, উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি হ্লা গ্য চিং মার্মা, সাধারণ সম্পাদক কো কো চিং প্রমুখ। এছাড়াও মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা, বম, লুসাই, চাক, ম্রো, খুমীসহ ১২টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ, আদিবাসী তরুণ-তরুণী তাদের ঐতিহ্য অনুসারে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। খাগড়াছড়ি জীতেন বড়ুয়া খাগড়াছড়ি থেকে জানান, খাগড়াছড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয় পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর প্রধান ও বৃহৎ সামাজিক উৎসব বৈসাবি। ঘরে ঘরে পাচনের সুবাস। বৈসাবিকে ঘিরে পাহাড় এখন পরিণত হয়েছে পাহাড়ী-বাঙালীর মিলনমেলায়। ঘরে ঘরে চলছে অতিথি আপ্যায়ন। নতুন পোশাকে আদিবাসী তরুণ-তরুণীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে পাড়ায় পাড়ায়। দেবতা পুকুরে বসেছে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মেলা। বৃহস্পতিবার বৈসাবি উৎসবের দ্বিতীয় দিনে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির মাইচছড়িতে পাহাড়ের প্রায় এক হাজার ফুট চূড়ায় অবস্থিত দেবতা পুকুরের পাদদেশে বসেছে (ত্রিপুরা ভাষায় যা মাতাই পুখরী) ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মেলা। সকাল থেকে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের হাজার হাজার তরুণ-তরুণী দেবতা পুকুরে সমবেত হয়।
×