ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বেয়ার্নকে হারিয়ে সেমিতে এক পা রিয়ালের

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৪ এপ্রিল ২০১৭

বেয়ার্নকে হারিয়ে সেমিতে এক পা রিয়ালের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছিল না ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। ভুগছিলেন গোলখরায়। অবশেষে কি দুর্দান্তভাবেই না তৃষ্ণা মেটালেন পর্তুগীজ সুপারস্টার। বুধবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে রিয়াল মাদ্রিদকে একাই জিতিয়েছেন সি আর সেভেন। মিউনিখের এ্যালিয়েঞ্জ এ্যারানায় স্বাগতিক বেয়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েও রোনাল্ডোর জোড়া গোলে ভর করে রিয়াল জয় পেয়েছে ২-১ গোলে। প্রতিপক্ষের মাঠে দাপুটে এই জয়ে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ১৮ এপ্রিল ঘরের মাঠ সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে খেলবে রিয়াল। ওই ম্যাচে বড় কোন অঘটন না ঘটলে বেয়ার্নের বিদায় অনেকটাই নিশ্চিত। পুরো ম্যাচেই ছন্দময় ফুটবলের পসরা সাজায় অতিথিরা। তবে প্রথমার্ধের লড়াইটা ছিল সেয়ানে সেয়ানে। সেখানে ভাগ্যবিড়ম্বনায় গোল পায়নি জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা। কিন্তু প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। তবে বিরতির পরের গল্প শুধুই রিয়ালের। এ অর্ধের পুরো সময়ই বেয়ার্নের রক্ষণভাগে আক্রমণের ঢেউ বইয়ে দেন রোনাল্ডো, বেনজামা, টনি ক্রুসরা। বিশেষ করে রোনাল্ডো ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। জোড়া গোল করলেও সি আর সেভেন মিস করেন দু’টি লোপ্পা সুযোগ। বেনজামাও ফাঁকা পোস্টে গোল করতে ব্যর্থ হন। তাছাড়া বেনজামার একটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। শেষদিকে অধিনায়ক রামোসের দুর্দান্ত হেড জালে জড়ালেও অফসাইডের কারণে গোল দেননি রেফারি। এসব কারণে জয়ের ব্যবধান বাড়েনি রিয়ালের। গোল না বাড়ার আরেকটি কারণ বেয়ার্ন গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নিউয়ের অসাধারণ দক্ষতা। চার-পাঁচটি গোল হজম করা থেকে তিনি দলকে রক্ষা করেন। নাহলে এক হালি বা তার বেশি গোল হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। অন্যদিকে দ্বিতীয়ার্ধে গোল করার মতো একটি আক্রমণও শাণাতে পারেননি রোবেন, রিবেরিরা। চোটের কারণে খেলতে না পারা ফরোয়ার্ড রবার্ট লেভানডোস্কির অভাবটাই হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছে বাভারিয়ানরা। এ্যালিয়েঞ্জ এ্যারানায় শুরুতে গোছানো ফুটবল খেলে দু’দলই। বড় কোন আক্রমণ শাণাতে না পারলেও চেষ্টা ছিল। ম্যাচের ১৮ মিনিটে প্রথম সুযোগটা পায় অতিথিরাই। টনি ক্রুসের বাড়ানো বলে করিম বেনজামার হেড ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ম্যাচের ২৫ মিনিটে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। থিয়াগো আলকানটারার কর্নার থেকে পাওয়া বলে জোরালো হেডে লক্ষ্যভেদ করেন বেয়ার্নের চিলিয়ান ফরোযার্ড আর্টুরো ভিদাল। পরে এই ভিদালই আবার প্রথমার্ধে দুইবার হতাশার সাগরে ভাসিয়েছেন স্বাগতিক সমর্থকদের। ৪১ মিনিটে আরিয়ান রোবেনের দারুণ এক ক্রসে মাথা ছুঁয়ে বারের বাইরে পাঠান। ৪৫ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েও বারপোস্টের ওপর দিয়ে শট মেরে দলকে গোলবঞ্চিত করেন। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল এটাই। গোলটি হলে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়তো রিয়াল। সেক্ষেত্রে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকমও হতে পারত। অবশ্য রেফারির পেনাল্টির সিদ্ধান্তটি ছিল বিতর্কিত। প্রাঙ্ক রিবেরির শট দানি কারবাহালের বুকে লাগলেও হ্যান্ডবল ভেবে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। বিরতির পর শুরু থেকেই ম্যাচে ফিরতি মরিয়া প্রচেষ্টা চালাতে থাকে রিয়াল। ফলও আসে প্রথম প্রচেষ্টায় ম্যাচের ৪৭ মিনিটে। রামোসের বাড়ানো বলে কারভাহালের ক্রসে ডান পায়ের শটে বেয়ার্নের জাল খুঁজে নেন সি আর সেভেন। এরপর আরেকটি গোলের সহজ সুযোগ হাতছাড়া হয় অতিথিদের। ৫৬ মিনিটে গ্যারেথ বেলের মাথা ছুঁয়ে আসা বল দারুণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন বাভারিয়ান গোলরক্ষক। ম্যাচের ৬১ মিনিটে রোনাল্ডোকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বেয়ার্নের স্প্যানিশ মিডফিল্ডার জ্যাভিয়ের মার্টিনেস। দশ জনের দলের বিরুদ্ধে রিয়ালের আক্রমণ আরও জোরালো হয়। বারবার স্বাগতিকদের রক্ষণে হামলে পড়েন অতিথি খেলোয়াড়রা। ৭২ এবং ৭৪ মিনিটে বেনজামা ও রোনাল্ডোর জোরালো শট নিউয়ের ফিরিয়ে না দিলে ব্যবধান এক হালি পূর্ণ করতে পারত লস ব্লাঙ্কোসরা। তবে ৭৭ মিনিটে রোনাল্ডোকে আর রুখতে পারেনি বাভারিয়ান গোলরক্ষক। বেলের পরিবর্তে মাঠে নামা মার্কো আসেনসিয়োর পাসে বল পেয়ে আলতো টোকায় ম্যাচে নিজের এবং দলের জোড়া গোল পূর্ণ করেন সি আর সেভেন। গত মৌসুমে মাঝপথে দায়িত্ব পেয়ে রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন করান জিনেদিন জিদান। এবারও তার দল উড়ছে। স্বভাবতই বেজায় খুশি ফরাসী কিংবদন্তি। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, সবাই অসাধারণ খেলেছে। আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। খুব খুশি লাগছে। অন্যদিকে হতাশ বেয়ার্ন কোচ কার্লো আনচেলোত্তি। তিনি বলেন, আমরা সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। নাহলে ফলাফল অন্যরকম হতে পারত। ফিরতি লেগে আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করতে হবে।
×