ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চীনের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা শেষে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

গঙ্গার পানির সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য নতুন ব্যারাজ হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

গঙ্গার পানির সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য নতুন ব্যারাজ হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজবাড়ীর পাংশায় প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। অন্য কোন স্থানে এ ব্যারাজ নির্মাণে একটি উচ্চপর্যায়ের কারিগরি কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। সচিবালয়ে বুধবার চীনের পানিসম্পদমন্ত্রী চেন লি’র নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর আনিসুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে কারও কোন দ্বিমত নেই। এটা কোথায় হবে, কী ভাবে হবে? এটার নক্সা নিয়ে প্রশ্ন আছে। গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প হবে। ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি অনুযায়ী যে পানি পাচ্ছি, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সেটা কিভাবে করা হবে, অন্য আর কী কী উপায় আছে- তাই পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে জানাবে উচ্চপর্যায়ে কমিটি। কমিটি কবে নাগাদ হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কমিটি আমরা শীঘ্রই করে ফেলব। ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় গঙ্গা ব্যারাজ নামে যে ব্যারাজের সমীক্ষা ও যে ডিজাইনইনটা তৈরি করেছে সেটা সম্পূর্ণ ভুল। এটা আমি নাকচ করে দিয়েছি। কারণ এটা আমাদের জন্য আরও আত্মঘাতী হবে, ওই তিস্তা ব্যারাজের মতো আত্মঘাতী হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পানিসম্পদমন্ত্রী বলেন, আমি কিছুদিন আগে পানি দিবসে বলেছিলাম আমরা এটা (পাংশায় গঙ্গা ব্যারাজ) পরীক্ষা করছি। গঙ্গা ব্যারাজের বর্তমান যে পরিকল্পনা এটা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, একটি উচ্চপর্যায়ের কারিগরি কমিটি করা হবে। অন্য অপশন কী কী আছে তা খুঁজে বের করার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলে আমরা কমিটি গঠন করব। এখন বাঁধটা কি গঙ্গার শাখা নদীতে হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির নেতা আনিসুল বলেন, কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে বিকল্প কি? সে বিকল্প যদি শাখা নদীতে ব্যারাজ করা যায়, করবে। অন্য কোন কিছু যদি করা যায় করবে। পাংশায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি কি বাতিল বলা যায়- এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত যেটা আছে, তা রেখে আমরা যদি অন্য জিনিস দেখি, আপাতত তো এটা বন্ধই। এটা পরিত্যক্ত এটা তো বলতে পারি- এ বিষয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী বলেন, পরিত্যক্ত বলতে পারেন। গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে নানা ধরনের কথা উঠেছে, সেই জিনিসগুলো যাতে আমাদের ক্ষেত্রে না হয়, পরে যাতে আমরা কোন সমস্যায় না পড়ি সেজন্য অন্যান্য বিকল্প চাচ্ছি। চীনের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, পানিসম্পদ উন্নয়নে, বিশেষ করে নদী শাসনের ক্ষেত্রে, বন্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে, দুযোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে চীনের অনেক অভিজ্ঞতা আছে। যা আমরা কাজে লাগাতে পারি। মিটিংয়ে এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের (চীন) সহযোগিতায় আমাদের নদীগুলো খননের ব্যাপারে আমরা আগ্রহ প্রকাশ করেছি। এতে তারাও সম্মত আছেন বলে জানিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট কোন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) রয়েছে, একটি সমন্বিত প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও মেঘনার ৪০০ কিলোমিটার নদী ব্যবস্থাপনার বিষয়ে। এটার বিষয়ে একটি স্টাডি রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা এটিকে এগিয়ে নিতে চাই। আমরা চাচ্ছি চীন যাতে এতে যুক্ত হয়। হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য-উপাত্ত আদান-প্রদানের বিষয়ে আলোচনা করেছি। এখন আমরা তিন থেকে চারদিন আগে বন্যার পূর্বাভাস দিতে পারি। চীনকে অনুরোধ করেছি এটা কিভাবে আরও বেশি সময় আগে করা যায় সে বিষয়ে সহায়তা চেয়েছি। বৈঠকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন্যস্ত সংস্থা প্রধান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াংসহ চীন সরকারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×