ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া

ক্ষমতায় গেলে দেশের স্বার্থ বিরোধী সব চুক্তি ও এমওইউ রিভিউ করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

ক্ষমতায় গেলে দেশের স্বার্থ বিরোধী সব চুক্তি ও এমওইউ রিভিউ করা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ভারতকে সব দিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন তাই তার এ সফর চরম ব্যর্থ ও অন্তঃসারশূন্য বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বুধবার বিকেলে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগ একটি অরাজনৈতিক দল বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে করা চুক্তি ও সমঝোতার প্রতিবাদে কোন আন্দোলন কর্মসূচী দেবেন কি না বা বিএনপি ক্ষমতায় গেলে চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, সংবাদ সম্মেলনও একটি কর্মসূচী। দেশের মানুষকে জানাতে আমাদের এ আয়োজন। ক্ষমতায় গেলে দেশের স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি ও সমঝোতা রিভিউ করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন তা দেশের মানুষ জানে না। জনগণকে অন্ধকারে রেখে সরকার এসব সমঝোতা ও চুক্তি করেছে। একতরফা সংসদেও এ নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভারত-বাংলাদেশের ওই নির্বাচন ও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ন্যক্কারজনকভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। সে নির্বাচনে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও এটিকে প্রহসনের নির্বাচন বলা হয়েছে। কারণ, এ নির্বাচনে শতকরা ৫ ভাগ ভোটারও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেনি। তাই ওই নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের কোন নৈতিক ভিত্তি নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে সহায়তা করছে ভারত। খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত সফর নিয়ে তিনি তৃপ্ত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কতগুলো আশ্বাস দিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছেন। এ জন্য দেশের মানুষ আতঙ্কিত ও প্রধানমন্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত। ভারত সফরে গিয়ে জাতীয় স্বার্থ ও দেশের মর্যাদা বিসর্জন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে করা প্রতিরক্ষা সমঝোতায় দেশের মানুষ শঙ্কিত। আমাদের সুন্দরবন ও রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের স্থান পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একটি কথাও বলেননি। তবে দেশ ও জাতির ভবিষ্যত জড়িত রয়েছে এমন কোন বিষয়ে বিএনপি চুপ থাকতে পারে না। খালেদা জিয়া বলেন, আমারা সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, ভারতের সঙ্গে আমাদের বৈরিতা নেই। আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধানে আমরা বিশ্বাসী। তিনি বলেন, ভাঁটির দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক সব নদীর পানি পাওয়া আমাদের অধিকার। এটা কারও দয়ার বিষয় নয়। তিস্তার পানি জটিলতার বিষয়টি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই সমাধান করতে হব। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সংবাদ সম্মেলনে যেসব সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেছেন তার বেশিরভাগ অসত্য ও একতরফা। শেখ হাসিনার ভারত সফর চরমভাবে ব্যর্থ বলে মনে করে দেশের জনগণ। এটা শুধু দেয়ার সফর, তবে পাওয়ার সফর না। তিনি বলেন, বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিদেশী মদদে আবারও ক্ষমতায় আসার চক্রান্ত করেছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ভারতে স্বাগত জানানো, কোথায় থাকতে দেয়া হয়েছেÑ এসব বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণ জানতে চায় না। দেশের মানুষ আপ্যায়নের চাইতে তাদের ন্যায্য পাওনা কী এসেছে তা জানতে চায়। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে বিএনপি কখনও ব্যবহার করেনি। তারা সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের বাধ্যতামূলকভাবে একমাত্র রাজনৈতিক দল বাকশাল-এর অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। জেনারেল এরশাদ ও মঈনের ক্ষমতা দখল এবং জেনারেল নাসিমের সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় তারাই প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছিলেন। কাজেই নিজেদের অপরাধ অন্যের কাঁধে চাপিয়ে তারা পার পাবেন না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দু’দেশের যৌথ ইশতেহারে যে গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশে এখন সেই গণতন্ত্র নেই। জনগণের কোন অধিকার নেই। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নেই। জনগণ তাদের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে। গণতান্ত্রিক ভারতের অবস্থান সেই গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে থাকবে সেটাই সকলের প্রত্যাশা। তাহলেই দু’দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা আরও দৃঢ় ও ফলপ্রসূ হবে। খালেদা জিয়া বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের কোন বৈরিতা নেই। অগনিত প্রাণদান ও ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতার কথা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে অর্থনীতি, বাণিজ্য, পানিসম্পদ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাবলির নিরসনের নীতিতে আমরা বিশ্বাসী। ভারতের জনগণের সঙ্গে শান্তি ও সহযোগিতার আবহে আমরা পাশাপাশি বাস করতে চাই। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেশী দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ব্যাহত করতে ভারতের বিগত শাসকদের একতরফা ভূমিকায় বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। আমরা আশা করি, ভারতের বর্তমান সরকার অতীতের সেই ভুল থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের মনোভাবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন। গণবিচ্ছিন্ন কোন পক্ষের সঙ্গে কোন চুক্তি করা বা চাপিয়ে দেয়াই বড় কথা নয়। মানুষের সমর্থন ছাড়া কোন সমঝোতা বা চুক্তিই যে কেবল গায়ের জোরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, তার প্রমাণ নিকট ইতিহাসেই রয়েছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শান্তিচুক্তি নামে স্বাক্ষরিত ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি সরকার পরিবর্তনের পর দীর্ঘকাল যে একটি কাগুজে দলিলে পর্যবসিত হয়েছিল তা আমরা সকলেই দেখেছি। তাই জাতিকে অন্ধকারে রেখে, জনগণের মতামত যাচাই না করে দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে চুক্তি বা সমঝোতা করে অবিশ্বাস আরও ঘনীভূত করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। খালেদা জিয়া বলেন, ভাঁটির দেশ হিসেবে সকল আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের অধিকার। এটা কারও কোন দয়া-দাক্ষিণ্য বা করুণার বিষয় নয়। তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি দুই সার্বভৌম দেশের মধ্যকার বিষয়। এ জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই বিষয়টি ফয়সালা করতে হবে। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দুই দেশের মধ্যেকার আলোচনায় সংশ্লিষ্ট করায় বাংলাদেশের সার্বভৌম মর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে। প্রতিরক্ষা খাতে দেয়া ৫০ কোটি ডলারের সহায়তার আওতায় ভারত কোন ধরনের সমরাস্ত্র সরবরাহ করবে জানতে চাওয়া হলে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, এখনও এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি, তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পছন্দকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এ থেকেই বোঝা যায়, শেখ হাসিনা যাই বলুন না কেন একমাত্র ভারতই হবে ওই ঋণের আওতায় একমাত্র অস্ত্র সরবরাহকারী। এই সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যেভাবে ভারতের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে তার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস, কারিকুলাম ও অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয়াদি অযাচিত হস্তক্ষেপের মুখে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে আরও লক্ষ্য করেছি, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করার জন্য যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, আওয়ামী লীগ একটি অরাজনৈতিক দল। তারা ৫ জানুয়ারি একটি প্রহসনের নির্বাচন দিয়ে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। তাদের এ নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। ভোটাররাও নির্বাচন বর্জন করেছে। কাজেই এই সরকারের কোন গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে ভারত সফরে গিয়েছিলেন অনেক আশা নিয়ে। কিন্তু তার কোন আশাই পূরণ হয়নি। এ সফরে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরের পর মঙ্গলবার এ সফরের ওপর সম্মেলনও করেছেন। তার এই সফরের আগে থেকেই দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত ছিলাম। কারণ প্রস্তাবিত চুক্তি ও সমঝোতা নিয়ে সফরের আগেও রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে কোন আলোচনা করা হয়নি এবং কারও মতামত নেয়া হয়নি। এই গোপনীয়তার কারণে সকলের মধ্যে যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছিল সফরের পর তা যথার্থ প্রমাণিত হয়েছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং বাংলাদেশী রফতানি-পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার মতো বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোতে এই সফরে কোনই অগ্রগতি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীকে কতগুলো আশ্বাস নিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, অতীতের ধারাবাহিকতায় ভারতের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ও প্রস্তাবিত বিষয়গুলোতেই কেবল অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা সই করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে প্রতিরক্ষা বিষয়ক কোন চুক্তি ও সমঝোতা সই না করার ব্যাপারে সফরের আগেই বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্যমত গড়ে উঠেছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের মতামতের প্রতিধ্বনি করে আমরাও এ ধরনের কোন চুক্তি স্বাক্ষর না করার দাবি জানিয়েছিলাম। তা সত্ত্বেও জনসাধারণের মতামতকে উপেক্ষা করে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। এর সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে জনগণের সঙ্গে আমরাও শঙ্কিত। বিএনপি সাধ্যমতো আন্দোলন চালিয়ে আসছে। অনেক বিষয়েই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব রয়েছে। তা সত্ত্বেও জাতীয় স্বার্থ, মর্যাদা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এবং জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার বিষয়ে আমরা সকলে মিলে একটি অভিন্ন অবস্থান গ্রহণের পক্ষে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ভারতের সামরিক পরিকল্পনার অংশ করে এসেছেন। খালেদা জিয়া বলেন, পাট রফতানির ক্ষেত্রে ভারত যে এ্যান্টি-ডাম্পিং ক্লজ প্রয়োগ করে থাকে তা তুলে নেয়ার ব্যাপারেও এই সফরে প্রধানমন্ত্রী কিছুই করতে পারেননি। সফর শেষে প্রকাশিত দু’দেশের যৌথ ইশতেহারে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার কথা বলা হলেও এই প্রতিশ্রুতি অতীতের মতোই অন্তঃসারশূন্য হয়ে থাকবে বলে দেশবাসীর মতো আমাদেরও আশঙ্কা। খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি দিল্লীতে কিছু চাইতে যাননি। কেবল বন্ধুত্বের জন্য গিয়েছিলেন এবং সেটা তিনি পেয়েছেন। কিসের এই বায়বীয় বন্ধুত্ব তা দেশবাসীই বিচার করে দেখবেন। তবে এই কথার মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন, ভারত থেকে তিনি দেশের জন্য কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি। বরং ভারতের চাহিদা মোতাবেক সবকিছুই দিয়ে এসেছেন। এর ফলে বাংলাদেশের ওপর ভারতের ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যই কেবল বাড়বে। খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনা তার সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে তার এবং তাদের সরকারের যেসব সাফল্য দাবি করেছেন সেগুলোর বেশিরভাগই অসত্য ও একতরফা। সরকার একটি ধারাবাহিকতা। আমাদের সরকারের কিছু উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে তিনি সেগুলো বাস্তবায়নের একতরফা সাফল্য দাবি করেছেন। প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে জিয়াউর রহমান এবং আমাদের সরকার কী কী করেছে তা দেশবাসী জানেন। দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অনুভূতিকে নিজেদের পক্ষে নেয়ার জন্য শেখ হাসিনা ভারত সফরের আগে আলেম সম্মেলন করেন। ফিরে এসে আবার হেফাজতে ইসলাম প্রভাবিত কওমী মাদ্রাসার ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলেমদের সঙ্গে তার অতীত আচরণ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর ক্রমাগত আঘাতের কথা দেশবাসী নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি। এখন তিনি নিজেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। অতীতেও দেশে ইসলামী শরিয়তী আইন চালুর জন্য একই ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। এখন কওমী মাদ্রাসা সনদকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলে ধোঁকা দিচ্ছেন। খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার সত্যিকার অর্থে দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে নির্বাচনের নামে একটি প্রহসন করেছিল। এর আগেই জাতীয় সংসদের অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ১৫৪টি আসনের প্রার্থীদের কোন রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। আমাদের ডাকে ভোটাররাও একতরফা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন সেই নির্বাচনী প্রহসন ব্যাপকভাবে বর্জন করেন। ওই নির্বাচনে ভারতের তদানীন্তন বিদেশ সচিব বাংলাদেশ সফরে এসে ক্ষমতাসীনদের প্রহসনের নির্বাচনের নীলনক্সা বাস্তবায়নে প্রকাশ্যে যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা কারও অজানা নয়। এ কারণেই বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ভারতের সঙ্গে কোন চুক্তি বা সমঝোতার ক্ষেত্রেই জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারেনি বা করেনি। তারা কেবল কৃতজ্ঞতার ঋণই ক্রমাগত শোধ করে চলেছে। এতে বিসর্জন দেয়া হচ্ছে জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা। খর্ব হয়েছে আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব। জনগণের সম্মতি ও প্রতিনিধিত্বহীন এ ধরনের সরকারের জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার ও অধিকারও থাকে না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনÑ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লেঃ জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, মীর নাসির, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, রুহুল আলম চৌধুরী, ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ প্রমুখ।
×