ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেগমজান ॥ বিদ্যার নতুন চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

বেগমজান ॥ বিদ্যার নতুন চ্যালেঞ্জ

বাঙালি চিত্রনির্মাতা সৃজিত মুখার্জি খুুব অল্প সময়ের মধ্যে একজন মেধাবী, গুণী চিত্রনির্মাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কলকাতার বাংলা সিনেমার অঙ্গনে রীতিমত ঝড় তুলেছেন তিনি নিজের পরিচালনায় নির্মিত অটোগ্রাফ’, ‘বাইশে শ্রাবণ’,‘হেসলক সোসাইটি’,‘মিশর রহস্য’,‘জাতিশ্মর’,‘ চতুস্কোন, ‘নির্বাক’,‘রাজকাহিনী’ ছবিগুলোতে। তার প্রতিটি সিনেমাই দর্শকনন্দিত হওয়ার পাশাপাশি সমালোচক বোদ্ধাদের অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করেছে। ৩৯ বছর বয়সী সৃর্জিত ২০১০ সাল থেকে সিনেমা পরিচালনা করছেন। ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে তিনি ৮টি ছবি বানিয়েছেন। টালিউড থেকে বলিউডে পা রেখেছেন। তার পরিচালতি প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘বেগম জান’ মুক্তি পাচ্ছে এ সপ্তাহে। নিজের পরিচালিত বহুল আলোচিত বাংলা ছবি ‘রাজকাহিনী’র হিন্দি রিমেক ‘বেগমজান’ মুক্তির আগেই বিভিন্ন কারনে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সর্বমহলে আগ্রহের সঞ্চার করেছে এ ছবি/ ধারনা করা যায় বলিউডে সৃজিত মুখাজ্জির অভিষেক ও সফল হিসেবে বিবেচিত হবে। বর্তমানে পরিচালক সৃজিতের হাতে পাঁচটি হিন্দি ছবি ও দুটি বাংলা ছবি রয়েছে। এর মধ্যে দুটি ছবি তার বাংলা ছবি ‘হেমলক সোসাইটি’ এবং ‘চতুস্কোণে’র হিন্দি সংস্করণ। সমালোচকদের দ্বারা উচ্চ প্রশংসিত রাজকাহিনী’ ছবির হিন্দি সংস্করনে বিদ্যা বালানকে দেখা যাবে বেগমজান এর চরিত্রে। ভারত বিভাগের পটভূমিকায় নির্মিত এ ছবিতে পাঞ্জাব এলাকার এক পতিতালয় এবং সেখানকার বাসিন্দাদের গল্প তুলে ধরা হয়েছে ‘বেগমজান’ ছবিতে। বেগমজান সেই পতিতালয়ের মালিক। ভারত-পাকিস্তান দেশ ভাগের সময় বেগমজান তার পতিতালয়ের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ব্যস্ত।এটি তাদের মানে যৌনকর্মীদের বাঁচার লড়াইয়ের গল্প। তারাও মানুষ তাদের ও পৃথিবীতে এই সমাজে সুন্দরভাবে বাঁচার স্বপ্ন আছে, তাঁদের ও মানুষ হিসেবে নিজস্ব পছন্দ অপছন্দ আছে, আছে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক , আবেগ। তাদেরকে ঘৃণ্য, অবহেলিত, অদ্যৃৎ ভেবে সমাজের এক কোণে ঠেলে দেওয়া চরম অন্যায় এবং অমানবিকও বটে। তেমন বক্তব্যতুলে ধরার চেষ্টা করেছেন গুণী চিত্রনির্মাতা সৃজিত মুখার্জ্জি তার নতুন ছবি ‘বেগমজান এ। মূল বাংলা ছবি রাজকাহিনী’তে দেখানো হয়েছিল ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় দেশবিভাগের সময়কাল চালু থাকা একটি পতিতালয়ের চলচিত্র। সে ছবির মূল চরিত্রে ছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তার সাথে আরও ছিলেন বাংলা দেশের গুণী অভিনেত্রী জয়া আহসান। জয়া অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল রুবিনা। মসুলমান এই মেয়েটিও সেই পতিতাপল্লীর একজন বাসিন্দা ছিল। ‘রাজকাহিনী ‘ ছবিতে জয়ার অভিনয় নিয়ে অনেক আলোচনা, সমালোচনা ও বির্তক যেমন হয়েছে তেমনিভাবে প্রশংসিতও হয়েছে তার পারফরমেন্স। ‘আমাদের এখান থেকে কেউ উচ্ছেদ করতে চাইলে আমি তার হাত-পা ও জিসমের মধ্যেও কেয়া কেহেতে হ্যায় পাটির্শন করে দেব’,‘রাজকাহিনী’ ছবিতে বেগমজানরূপি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের মুখের সইে দুর্দান্ত সংলাপ দর্শক এখনও মনে রেখেছেন। এবার বলিউডে নির্মিত ‘বেগমজান’ ছবিতে মূলভূমিকায় রূপদান করেছেন বিদ্যা বালান। পতিতালয়ের বাসিন্দা অন্যান্য চরিত্রে দেকা যাবে গওহর খান, ইল অরুণ, পল্লবী সারদ অনবদ্য অভিনয় করলেও ‘কাহানি টু’ আগের ছবি ‘কাহানি’র মতো বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। বেগমজান ছবিতে নিজের অভিনয় নিয়ে অনেকটাই খোলামেল কথা বলেছেন বিদ্যা বালান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছবির স্ক্রিপ্টটাই আমাকে তৈরি করেছে। আমি ছবির পরিচালক সৃজিতের সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি ‘বেগমজান চরিত্রটি কোথা থেকে এসেছে তা বোঝার জন্য। তার সঙ্গে আড্ডা এবং আলাপগুলো আমার হোমওয়ার্ক ছিল। শুটিং শেষে হোটেলে ফিরে আমি একা থাকতাম। আমার কো-আটিস্টরা সবাই প্রায় প্রতিদিনই একসঙ্গে পার্টি করত। কিন্তু আমি নিজেকে ঘরবন্দী করে ফেলতাম। কারণ আমার বেগমজানকে অনুভব করাটা দরকার ছিল। এই সিনেমার গোটা জার্নিটাই নাকি বেশ কঠিন ছিল বিদ্যার জন্য। ডাটি পিকচার, ‘দেড় ইশকিয়া’ প্রভৃতি ছবি দুর্দান্ত অভিনয়ের পর তিনি যেভাবে নিজেকে উপরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু গত কয়েক বছরে ‘ববি জাসুস’, হামারি আধুরি কাহানি প্রভৃতি ছবির ক্রম ব্যর্থতা তাকে অনেকটাই ম্লান অবস্থানে নিয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোন ছবি ফ্লপ করলেই সেটা নিঃসন্দেহে দুঃখের। তার জন্য খারাপ লাগা থাকেই। কিন্তু তাই বলেন থমকে গেলে তো চলবে না। সামনে এগিয়ে তো যেতে হবে। ‘বেগমজান’ ছবিটি নিয়ে বলিউডে চলছে দারুন তোলপাড়। এরই মধ্যে ছবিটির ওপর কাঁচি চালিয়েছে ভারতীয় সেন্সর বোর্ড। ছবি থেকে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য কেটে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংলাপ নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ছবিতে বিদ্যা বালান মানে বেগমজানের মুখে কোন ধরনের অশ্লীল শব্দ ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও অভিনীত চরিত্রের প্রয়োজনে বিদ্যার মুখের সংলাপে বেশকিছু অশ্লীল বাক্য, শব্দ এসেছে। কিন্তু সেগুলোও কেটে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর তা ছেঁটে ফেলার পরও শর্তসাপেক্ষ সেন্সর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। যদিও কর্তনকৃত অংশ ফেলে দেয়ার পরও ‘বেগমজান’ ছবির গ্রেডিং হচ্ছে ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য।’
×