ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মলয় বিকাশ দেবনাথ

দ্বৈত ও অদ্বৈতের আখ্যান ‘গহনযাত্রা’

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

দ্বৈত ও অদ্বৈতের আখ্যান ‘গহনযাত্রা’

দ্বৈতাদৈতবাদী শিল্পতত্ত্ব যার প্রবর্তনকারী নাট্যজগতের প্রাণপুরুষ প্রয়াত নাট্যকার, নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন। তারই প্রত্যক্ষ ছাত্র রুবাইয়াত আহমেদ এই শিল্পতত্ত্বের সঞ্চারণ ঘটিয়েছেন এককাভিনীত নাটক গহনযাত্রায়। বর্ণনারীতির এই নাটকটি পদাতিক নাট্যসংসদের (টিএসসি) প্রযোজনায় নির্দেশনা দিয়েছেন তরুণ নির্দেশক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান সুদীপ চক্রবর্তী। স্বগতোক্তিধর্মী এই নাটকটিতে শামছি আরা সায়েকা তার অভিনয়শৈলী ও নিপুণ নান্দনিকতা দিয়ে ঘণ্টাব্যাপী দর্শককে ধরে রেখেছে। গত ৬ এপ্রিল ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০০ মিনিটে জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাটকটির পুনঃমঞ্চায়ন হয়। এককাভিনয়ের এত লম্বা স্থায়িত্বের প্রযোজনা নির্দেশকের দুঃসাহসিক অভিপ্রায় বলা যেতে পারে। কারিগরি দিকগুলো যেমন মঞ্চপরিকল্পনা, দ্রব্যসামগ্রীর ব্যবহার, সঙ্গীত ও আলোক পরিকল্পনার বিষয়গুলো হয়তো আরেকটু ভাবা যেতে পারে। পুরো নাটকের মুখোশের ব্যবহার ছিল যথাপোযুক্ত যা নাটকটিকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছে। নাটকের কাহিনী মূলত, বিন্যাসিত হয়েছে ধর্মীয় অনাচার, নিজ নিজ মতবাদ প্রতিষ্ঠার উন্মত্ততা, পৈশাচিক হত্যাকা-, নারী লাঞ্ছনা, মানবতার অবক্ষয় যা বর্তমান পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। ভিন্ন মতাদর্শের কারণে এক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বন্দীদশা থেকে পালাতে চেষ্টা করলে তারা মারা পড়ে। শুধু একজন বেঁচে যায় আর সেই নারী হচ্ছে সালমা। যে নিজের ভেতর নতুন কিছুর অস্তিত্ব টের পায়। সেই অস্তিত্ব নিজেরই প্রতিরূপ অথবা ভিন্নরূপে নিজে এই দ্বৈতসত্তা নিয়ে সংশয়ের উদ্রেক হলেও সেই অস্তিত্ব সঙ্গী হয় সালমার আর এভাবেই দ্বৈত ও অদ্বৈতের সংশ্লেষে অগ্রসরমাণ হয় আখ্যান ‘গহনযাত্রা’। খোলা প্রান্তরে পড়ে থাকা লাশগুলোকে দ্বিতীয় শকুনের হাত থেকে রেহাই দিতে সমাহিত করার পর ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল সালমা। ছোট্ট শিশু যে কি না লালিত হয়েছে সালমার কাছে সেও রেহাই পায়নি এই নরপিশাচের হাত থেকে। হঠাৎ মনে পড়ে যায় তার ভালবাসা আরিয়ানের কথা। যার বেহালার সুরে বিদ্ধ হয়েছিল সালমা। দ্বিতীয় সত্তার নিষেধ অমান্য করে সে খোঁজ করতে লাগল আরিয়ানের। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সে প্রেমে উন্মত্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্টে ঝুলে থাকা ছিন্নমস্তকে আবিস্কার করল আরিয়ানকে। তার চিৎকারে প্রকম্পিত হয় এ ধরাধাম। তারপর যে আরেকটি মহাপ্রয়াণ, শারীরিক নির্যাতনের পর জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যা এ যেন হত্যাকা- নয় ভীতি ছড়ানোই তাদের উদ্দেশ্য।শেষ দৃশ্যের প্রতীকি সংযোযন ছিল সম্পূর্ণ নাটকের সচিত্র রূপ। সালমার এই আত্মাহুতি আর প্রেম হয়ে উঠুক মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন আর উদয় হোক শুভ বুদ্ধির। দূর হোক সকল বিভেদ এই আশাবাদে নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটে।
×