ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁটাতারের গল্পের নায়িকা

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

কাঁটাতারের গল্পের নায়িকা

পূর্ববঙ্গের বিধবা নারী। পশ্চিমবঙ্গের সুপুরুষ। পরিচয়। অতঃপর প্রেম। এখানে প্রণয়মিলনে বিচ্ছেদের পূর্বাভাস সুস্পষ্ট। সাধারণত ভাললাগার ভালবাসার মানুষকে আপন করতে দুনিয়ার তাবত নর-নারীর হৃদয়ের আকুতি বড়ই শক্ত। এরা অল্প আঘাতে বিচলিত হবার নয়, এমনটা দেখা গিয়েছে কালে কালে। ব্যক্তিভেদে অজস্র বাধা এ ক্ষেত্রে অনিবার্য। বাধা পেরোবার কিছু কিছু গল্প হৃদয়স্পর্শী। রাজনৈতিক কারণে আমাদের উপমহাদেশ ভাগ হয় ১৯৪৭ সালে। যে কারণে এক দেশ থেকে জন্ম হয় তিন দেশের। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে এখন আলাদা আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন্তু এটা খুব পূর্বের কথা নয়। আমরা এক দেশের হয়ে অভিন্ন জাতীয়তাবাদে জীবন-যাপন করেছি। সিন্ধু থেকে গঙ্গা। গঙ্গা হয়ে ব্রহ্মপুত্র এই ছিল আমাদের ঠিকানা। মাঝে কোন কুচক্রে ভাগ হলো আমাদের নদীমাতা। কত প্রেম, কত মায়া মমতা প্রাণ হারাল কাঁটাতারের প্রাণহীন পদ তলে। চেনা মানুষগুলো অচেনা হলো। কিন্তু প্রেম, মানবিকতা সে তো বিশ্বজনীন সে তো কখন নিঃশেষ হয় না। মানুষ মানুষকে ভালবাসবে, মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তবে মাঝ খানে কাঁটতার কেন বাধা! কিন্তু বাধা যে আছে। এটাই অসভ্য বাস্তবতা। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন বাস্তবতার জন্ম দিলেও আবার অনেকে নীরবে ডুকরে কাঁদে পরাধীনতার শিকলে বাঁধা পড়ে। রাজনৈতিকভাবে এসবের সমাধান এক রকম নেই বললেই চলে, তবে শিল্প-সাংস্কৃতির প্রচেষ্টা কিন্তু অব্যাহত। তা কিন্তু লক্ষ্য করা যায়। হয়ত ভুক্তভোগী মনের গভীর তাড়না থেকে ২০১৬-১৭ সালে নির্মিত হয়েছে ‘শঙ্খচিল’ ও ‘বিসর্জন’ নামে দুটি চলচ্চিত্র। প্রথমটি দেশ ভাগের ফলে হৃদয় ভাগের যন্ত্রণা ও মানবিকতার অপমৃত্যু স্পষ্ট উঠে এসেছে দ্বিতীয়টি তে অল্প বয়সী বিধবা নারীর বিষণœ হৃদয়ে ভিনদেশী যুবকের প্রেম। অতঃপর! কাঁটাতারের নির্মম বাস্তবতা স্থান পেয়েছে ‘বির্সজন’ চলচ্চিত্রে। দুটি গল্প এতই বাস্তব ও মর্মস্পর্শী যে মানবতার অবেগে হৃদয় সিক্ত হয়েছে অজস্র মানুষের। এর মধ্যে ‘শঙ্খচিল’ ছিল ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার সিনেমা। মুক্তি পেয়েছিল গেল বছর ১ বৈশাখ। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন প্রখ্যাত নির্মাতা গৌতম ঘোষ। বাংলাদেশের মামুনুর রশিদ, প্রবীর মিত্র, রোজি সিদ্দিকী এদের সঙ্গে মূল আকর্ষণ ছিল কুসুম সিকদারের সাবলীল অভিনয়। প্রখ্যাত অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সঙ্গে তার অভিনয় দক্ষতা খুবই প্রশংসিত হয়েছিল পরিচালক গৌতম ঘোষ থেকে নায়ক প্রসেনজিতের অভিব্যক্তিতে। কুসুম সিকদার মূলত বাংলাদেশের টিভি অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরর্বতীতে ২০১০ সালে ‘গহীনে শব্দ’ নামে একটি সিনেমায় নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১২ সালে ‘লাল টিপ’ এর তিন বছর তাকে আর কোন সিনেমায় দেখা যায়নি। গেল বছর ২০১৬ সাল ছিল তার সব থেকে চমক দেখানোর বছর। শঙ্খচিল ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ সিনেমা নির্বাচিত হয়। কুসুমের অভিনয় ক্যারিয়ারে যোগ হয় সাফল্যের সোনালি পালক। দেশ ভাগের তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুক্তভোগী অসহায় মানুষদের অব্যক্ত কষ্ট ছিল শঙ্খচিলের আখ্যান। অন্যদিকে ‘বিসর্জন’ কৌশিক গাঙ্গুলির ২০১৭ সালের ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী বাংলা সিনেমা। বাংলাদেশের জয়া আহসান ভারতের আবীর চট্টোপাধ্যায় এই সিনেমার মূল চরিত্র। জয়া আহসান এপার ওপার দুই বাংলাতেই সমান জনপ্রিয়। কৌশিকের মতো মেধাবী নির্মাতার চলচ্চিত্রে তিনি আগেও অভিনয় করেছেন। এছাড়া সৃজিত মুখ্যার্জি, ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরীর মতো সিরিয়াস পরিচালদের নায়িকা হয়েছেন জয়া। অভিনয় গুণ এবং সাফল্য দুটোই সমানে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাঁর। ভারতে পর পর দুই বছর জাতীয় পুরস্কার জয়ী চলচ্চিত্রের প্রধান অভিনেত্রী বাংলাদেশের, এটা এক রকম বিস্ময় বলা চলে। তবে কি বাংলাদেশের শিল্পী মানে ভারতের শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিল! দিন কয়েক আগে ঢাকা শহরের কাওরান বাজারে অবস্থিত পূর্ণিমা সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। খবর হয়েছে। অনেকে আফসোস করছে, দিন দিন এভাবেই বুঝি দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাংলা সিনেমার! কেবল ঢাকা শহর নয় মাঝে মাঝেই দেশের কোথাও না কোথাও সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে। এসবের জন্য হাজারটা কারণ দেখানো হয়। দোষ চাপানো হয় একে অন্যের ওপর। এর মধ্যে অভিনয় শিল্পীদের অভিনয় দক্ষতা অন্যতম। কিন্তু আমাদের দেশের শিল্পী সত্তা নিয়ে নেতিবাচক কথা উঠলেও শিল্পীরা বরাবরই প্রমাণ করেছেন তাদের যোগ্যতা । তাই সঙ্কট যে অন্যান্য বিষয়ে তা বলা চলে। পর পর দুটো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী ভারতীয় বাংলা সিনেমার মূল চরিত্র আমাদের আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা অভিনয় শিল্পীদের দক্ষতা ও যোগ্যতা সেটাই প্রমাণ করে।
×