ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বোমা হামলা, ফুটবলে সন্ত্রাসের কালো থাবা

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

বোমা হামলা, ফুটবলে সন্ত্রাসের কালো থাবা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাসের কালো থাবায় আরেকবার থমকে গেল নির্মল বিনোদনের মাধ্যম খেলার মাঠও। মঙ্গলবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে ফরাসী ক্লাব মোনাকোর বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে মাঠে যাওয়ার পথেই স্বাগতিক জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বাসের পাশে বিস্ফোরিত হয় শক্তিশালী বোমা। সরাসরি বাসে না হলেও কাছাকাছি জায়গায় বোমার বিস্ফোরণে ডর্টমুন্ডের বাসের জানালা ভেঙ্গে যায়। আর এতে আহত হয়েছেন ডর্টমুন্ডের স্প্যানিশ ফুটবলার মার্ক বাট্টা। ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার পর হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘অজ্ঞাত কেউ’। হোটেলের পাশে ফেলে রাখা এক বেনামি চিঠিতে দায় স্বীকার করা হয়। ওই চিঠি উদ্ধারের পর এই তথ্য জানিয়েছে জার্মান পুলিশ। ম্যাচ শুরুর আধাঘণ্টা আগে হামলার ঘটনায় ওইদিন খেলা স্থগিত করা হয়। ম্যাচটি বুধবার রাতে হওয়ার কথা। নিন্দনীয় ঘটনার পর হামলাকারীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে জার্মান পুলিশ। আহত ফুটবলার বাট্টার পাশে দাঁড়িয়েছে সবাই। আর জঙ্গীবাদের স্থান যে কোথাও নেই সে প্রমাণ রেখেছে ডর্টমুন্ড ও মোনাকো দু’দলের সমর্থকরাই। মঙ্গলবার খেলা দেখতে অনেক ফরাসী সমর্থক জার্মানি জড়ো হন। কিন্তু একদিন ম্যাচ পিছিয়ে যাওয়ায় তারা বেশ বিপাকে পড়েন। এমন অবস্থায় মোনাকো সমর্থকদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ডর্টমুন্ড সমর্থকরা। তারা অতিথি সমর্থকদের নিজেদের বাসায় আতিথ্য দেন। ফুটবল বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে করে জয় হয়েছে ফুটবলের, আর হার হয়েছে জঙ্গীবাদের। ডর্টমুন্ডের প্রধান নির্বাহী হ্যান্স জোয়াকিম ওয়াজকে হামলা প্রসঙ্গে বলেন, বিস্ফোরণের পর গোটা টিমই হকচকিয়ে গেছে। পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর ছিল, সেটা কল্পনা করাও কঠিন। পুরো বিষয়টিকে পরিকল্পিত হামলা বলছেন জার্মান সিটি পুলিশ প্রধান গ্রেগর লাঞ্জ। তিনি বলেন, আমাদের মতে এটি ডর্টমুন্ড ক্লাবের খেলোয়াড়দের লক্ষ্যবস্তু করে একটি পরিকল্পিত হামলা। জার্মান সরকার এই হামলার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র তদন্ত করে দেখছে। হামলার পর তাৎক্ষণিক তদন্তে দেখা গেছে বিস্ফোরকটি রাস্তার ধারে একটি ঝোপের আড়ালে লুকানো ছিল। জার্মান একটি পত্রিকা জানিয়েছে, বোমাটি তৈরিতে পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ঘরে তৈরি বোমা বলে মনে করছে জার্মান পুলিশ। ঘটনাস্থলে হামলার দায় স্বীকার করে একটি চিরকুটও পাওয়া গেছে। পুলিশ সেই চিরকুটের সত্যতাও তদন্ত করে দেখছে। গত বছর প্যারিসে জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যকার একটি প্রীতি ম্যাচে স্টেডিয়ামে বোমাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে ম্যাচটি বাতিল করা হয়। এবারের হামলার পর ফুটবল দুনিয়ায় নতুন করে আবারও ছড়িয়ে পড়েছে শঙ্কা আর আতঙ্ক। আহত বাট্টা স্পেন জাতীয় দলের ডিফেন্ডার। ২৬ বছর বয়সী এই ফুটবলার খেলে থাকেন জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। জার্মান পুলিশের ভাষ্যমতে, তিনটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। বোমা বিস্ফোরণে খেলোয়াড়দের বহনকারী বাসের জানালার কাচ ভেঙ্গে যায়। স্প্যানিশ ফুটবলার বাট্টা সে সময় হাতে আঘাত পান। পরে তার কব্জির ভাঙ্গা হাড়ে অপারেশন করা হয়। সন্ত্রাসী হামলার পর বাট্টাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। বড় ধরনের কোন ক্ষতি হয়নি। তার সর্বশেষ অবস্থা স্থিতিশীল বলে ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন বলেও সমর্থকদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। ডর্টমুন্ডের পক্ষ থেকে এক টুইট বার্তায় জানানো হয়েছে, দলের অন্য খেলোয়াড়রা নিরাপদে আছেন। স্টেডিয়াম এলাকাও নিরাপদ বলে ওই বার্তায় জানানো হয়। ৮০ হাজার ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামে ফুটবল ম্যাচটি দেখতে উপস্থিত হওয়া দর্শকদের শুরুতে মাঠ ছাড়তে দেয়া হয়নি। পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য তাদের গ্যালারিতেই অবস্থান নিতে বলা হয়। পরে অবস্থা স্বাভাবিক হলে তারা ফিরে যান। নর্থ-রাহিনে ওয়েস্টফেলিয়া পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। মোনাকোর বিপক্ষে সিগনাল ইদুনা পার্কে ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল। আহত বাট্টার জন্য সমর্থন ও দ্রুত সুস্থতা কামনা করে টুইট করেছেন স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী এবং তার সাবেক ক্লাব বার্সিলোনা কর্তৃপক্ষ। তার পাশে আছে জার্মান সরকারও। হোটেল থেকে মাঠের দূরত্ব প্রায় ১২ মিনিটের। সেখানে যাওয়ার পথেই হামলার ঘটনা ঘটে। জার্মান পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, পরিকল্পনা করেই এই হামলা চালানো হয়েছে। হামলার সময় বিদেশী নম্বর প্লেটের একটি গাড়ির উপস্থিতি আঁচ করে পুলিশ। সেই গাড়িটিকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। নির্দিষ্ট কাউকে আটকও করা হয়নি। অজ্ঞাত চিঠিতে কী লেখা আছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলেনি জার্মান পুলিশ। ‘ইসলামী জঙ্গীরা এই হামলা চালাতে পারে’, কয়েকটি বিদেশী সংবাদমাধ্যমে এমন ইঙ্গিত দেয়া হলেও জার্মান পুলিশ এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নিরাপত্তাকর্মী বলছেন, এটি সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গী হামলা কিনা, তা বলতে পারছি না। কেননা তেমন কোন আভাস আমরা পাইনি।
×