ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বার্সিলোনাকে বিধ্বস্ত করে সেমির পথে জুভেন্টাস

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

বার্সিলোনাকে বিধ্বস্ত করে সেমির পথে জুভেন্টাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জাতীয় দলের মতো ইতালিয়ান ক্লাবগুলোর রক্ষণাত্মক খেলা নিয়ে সমালোচনা আছে। তবে মঙ্গলবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফুটবলে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে স্প্যানিশ পরাশক্তি বার্সিলোনার বিরুদ্ধে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাস যে দুর্দান্ত আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে তাতে বিমোহিত হয়েছে ফুটবলবিশ্ব। নিজেদের মাঠ তুরিনের জুভেন্টাস স্টেডিয়ামে বার্সাকে রীতিমতো নাচিয়ে ও কাঁদিয়ে ছেড়েছে ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রির দল। গোটা ম্যাচে ছন্দময় ফুটবল খেলে অতিথি কাতালানদের ৩-০ গোলে হারিয়েছে স্বাগতিক জুভেন্টাস। স্বাগতিকদের জয়ে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেন আর্জেন্টিনার তরুণ ফরোয়ার্ড পাওলো দিবালা। দু’টি দর্শনীয় গোল করে ম্যাচের নায়ক তিনিই। অপর গোলটি করেন জিওর্জিও চিয়েল্লিনি। দারুণ এই জয়ে সেমিফাইনালে খেলা অনেকটাই নিশ্চিত করেছে জুভেন্টাস। ১৯ এপ্রিল ন্যুক্যাম্পে শেষ আটের ফিরতি লেগের ম্যাচে বড় কোন অঘটন না ঘটলে বার্সিলোনার বিদায় ঘণ্টাই বাজতে চলেছে। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে রীতিমতো অবিশ্বাস্যভাবে জয় পেয়েছিল বার্সিলোনা। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) বিরুদ্ধে প্রথম লেগে ৪-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও উঠেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। সেবার ফিরতি লেগে ন্যুক্যাম্পে কাতালানরা জিতেছিল ৬-১ গোলে। এবার জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগেও বড় ব্যবধানে হেরেছে বার্সা। সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠে আরেকটি দুর্দান্ত ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পই লিখতে হবে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের। কিন্তু পরশু রাতে জুভেন্টাসের মাঠে প্রায় পুরো ম্যাচেই নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করে খেলতে পারেননি বার্সার তারকা ফুটবলাররা। অন্যদিকে শুরু থেকেই সফরকারীদের চাপের মুখে রাখেন স্বাগতিক খেলোয়াড়রা। ২০১৫ সালের ফাইনালে স্প্যানিশ জায়ান্টের মুখোমুখি হয়েছিল জুভেন্টাস। যে ম্যাচে তুরিনের ক্লাবটি ৩-১ গোলে হেরে কেঁদেছিল। কিন্তু এবার মেসি, নেইমার ও সুয়ারেজের সমন্বয়ে গঠিত বার্সা আক্রমণকে কোন দিক থেকেই সফল মনে হয়নি। বদলাটা আপাতত তাই ভালই হয়েছে জুভদের। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই সামি খেদিরার একটি ভাল প্রচেষ্টা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ২৩ বছর বয়সী দিবালা স্বাগতিকদের জন্য চমক উপহার দেন। ম্যাচের সপ্তম মিনিটে ডানদিক থেকে জুয়ান কুয়ারডাডোর পাসে ১২ গজ দূর থেকে দিবালা বাম পায়ে কার্লিং শটে বার্সার জালে বল পাঠান। বার্সা গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে তার স্টেগান হাত বাড়িয়েও ধরতে পারেননি। ২১ মিনিটে মেসির দারুণ একটি পাস থেকে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার শট জুভ গোলরক্ষক ও অধিনায়ক বুফন অসাধারণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন। পরের মিনিটেই কাউন্টার এ্যাটাক থেকে দিবালা ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আরেকটি দর্শনীয় গোল করে। বামপ্রান্ত থেকে মারিও মানদুকিচের পাসে ডি বক্সের মাথা থেকে চলতি বলে চোখ ধাঁধানো গোল করেন দিবালা। প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। দুই গোলে পিছিয়ে থাকার পরও বিরতির পর তেমন গোছালো ফুটবল খেলতে পারেনি বার্সা। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে কর্নার থেকে চিয়েল্লিনি জুভেন্টাসের পক্ষে তৃতীয় গোল করলে সব আশা শেষ হয়ে যায় বার্সার। ২০০৯ সালের অক্টোবরের পরে এটাই চিয়েল্লিনির চ্যাম্পিয়ন্স লীগে প্রথম গোল। বাকি সময়ে অন্তত একটি গুরুত্বপূর্ণ এ্যাওয়ে ম্যাচের জন্য মরিয়া থাকে বার্সা। কিন্তু কার্যকরী আক্রমণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্স প্রদর্শন করায় দিবালা এখন হিরো। তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। ম্যাচ শেষে বুফন বলেন, গত দুই বছরে নাটকীয়ভাবে দিবালা বেড়ে উঠেছে। যখন আমি ক্লাবের পরিচালক বা ফুটবলে আমার যারা বন্ধু আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলি, প্রায়ই তাদের বলি, বিশ্বের সেরা পাঁচ ফুটবলারের একজন হওয়ার জন্য দিবালা যথেষ্ট ভাল এবং সে সেরা তিনের বাইরে থাকবে না। জুভ কোচ এ্যালেগ্রিও দিবালার উচ্ছ্বাসিত প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি জানিয়েছেন, এটি তার কোচিং ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচ। অন্যদিকে বার্সা বস লুইস এনরিকে যেন হাল ছেড়ে দিয়েছেন। ম্যাচ শেষে এনরিকে বলেন, এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এমনটা হলো। ঘুরে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করাটাও কঠিন। কিন্তু আমরা ফিরে আসার চেষ্টা করব এবং দ্বিতীয় লেগে ভাল পারফরর্ম করব। কথা বলেছেন ম্যাচের তারকা দিবালা। তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই বলে আসছেন মেসির সঙ্গে তুলনা তার পছন্দ না। আরেকবার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে দিবালা বলেন, বার্সিলোনার মেসি মেসিই। আমি পাওলো দিবালা, আমি এতেই সন্তুষ্ট। দুর্দান্ত জয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, এখানেই আমরা সবকিছু অর্জন করে ফেলিনি। এটাই শেষ নয়। ন্যুক্যাম্পের ফিরতি পর্ব হবে কঠিন পরীক্ষার। তবে আমি এই মুহূর্তটা উপভোগ করার চেষ্টা করছি। আপাতত অন্য কিছু মাথায় আনছি না। পরের ম্যাচে কি হবে, সেটা এখনই ভেবে কাজ নেই। এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি, যা অর্জন করেছি, তা যথেষ্ট।
×