ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে ভেটকি পোনা হ্যাচারি

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

কক্সবাজারে ভেটকি পোনা হ্যাচারি

এইচ এম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারসহ দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল কোরাল বা ভেটকি চাষের জন্য খুব উপযুক্ত। ঘেরে ভেটকির চাষ করে এ অঞ্চলের মানুষ তাদের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে পারে। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকার কিছু ঘেরে চিংড়ি ও কাঁকড়ার পাশাপাশি ভেটকির চাষ হলেও সম্ভাবনাময় এ খাতের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে পোনা সঙ্কট। তবে এনিয়ে চাষীদের দুর্ভাবনার অবসান ঘটাতে দেশে প্রথমবারের মতো কক্সবাজারে স্থাপিত হতে যাচ্ছে ভেটকি পোনা হ্যাচারি। এ হ্যাচারি স্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সম্প্রতি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়কে (সিভাসু) ৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। মালয়েশিয়ার বিজ্ঞানীদের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় কক্সবাজার শহরতলির দরিয়ানগরস্থ সিভাসু ক্যাম্পাসে এ হ্যাচারি নির্মাণ করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সফররত ভেটকি প্রজনন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী বৃহস্পতিবার এ হ্যাচারির জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন শেষে ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ দলে ছিলেনÑ ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়া তেরেঙ্গানো (ইউএমটি) এর ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল একোয়া কালচার বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. আবুল মুনাফি বিন আমবক বোলং ও স্কুল অব ফিশারিজ এ্যান্ড একোয়া কালচার সাইন্সেস অনুষদের ডেপুটি ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হানাফী বিন ইদ্রিস। তারা কক্সবাজারে পৌঁছে শহরতলির খুরুশকুল ও চৌফলদ-ির বিভিন্ন মৎস্য খামার পরিদর্শন করেন। ও সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পুরস্কার প্রাপ্ত অংচিনের কাঁকড়া খামারও পরিদর্শন করেন। পরে তারা শহরতলির দরিয়ানগরের চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) কক্সবাজার ক্যাম্পাসে ভেটকি পোনা হ্যাচারি স্থাপনের উপযুক্ততা পরীক্ষার পর সিভাসুর মাৎস্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে সিভাসুর পক্ষে উপস্থিত ছিলেনÑ মৎস্য অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নুরুল আবছার খান, একই অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান যথাক্রমে ড. শেখ আহমদ আল নাহিদ ও ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার বিশেষজ্ঞগণ বলেনÑ কক্সবাজারসহ সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোর লবণাক্ত পানির ঘেরে ভেটকি মাছের চাষ করে মৎস্য চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এ বিষয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা যৌথভাবে গবেষণা ও তথ্য বিনিময় করছে। গত বছর সম্পাদিত এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তির আওতায় সিভাসুর মৎস্য বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা গত প্রায় ৬ মাস আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে প্রায় দেড় মাস মালয়েশিয়ায় পড়ালেখা ও গবেষণার সুযোগ পেয়েছে। একইভাবে কোর্সের অংশ হিসেবে তেরেঙ্গানো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দলও আগামী জুলাই মাসে ৪০ দিনের জন্য বাংলাদেশে আসবে। শিক্ষা ও গবেষণার জন্য তারা ১০ দিন কক্সবাজারেও অবস্থান করবে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতমবুদ্ধ দাশ বলেন, কক্সবাজারে ভেটকি পোনা হ্যাচারি নির্মাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়ার পর দ্রুত নির্মাণকাজ শুরুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে তেরেঙ্গানো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটকি প্রজনন বিশেষজ্ঞরা কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছেন। তিনি জানান, দেশের সমুদ্রসীমা বিজয়ের ফসল ঘরে তুলতে বর্তমান সরকার ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পর্কিত অর্থনীতি জোরদারের লক্ষ্যে কাজ করছে। কৃত্রিম উপায়ে দেশে ভেটকি পোনা উৎপাদনের উদ্যোগ তারই একটি অংশ। জানা যায়, দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে ভেটকি ও নরম খোলসের কাঁকড়া চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও একমাত্র পোনা সঙ্কটের কারণে এসব চাষের বিস্তার ঘটানো যাচ্ছে না। বর্তমানে দেশে কৃত্রিম উপায়ে বাগদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন হলেও ভেটকি ও কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনের কোন হ্যাচারি নেই। ভেটকি মাছের প্রজনন বিষয়ে দেশে বিশেষজ্ঞেরও অভাব রয়েছে। অথচ এ চাষে অনেক এগিয়ে গেছে বন্ধুপ্রতীম দেশ মালয়েশিয়া। আর মালয়েশিয়ার এ সাফল্যের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলেও মৎস্য বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞানীরা।
×