ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সূর্যতাপে পুড়ছে রাজশাহী

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

সূর্যতাপে পুড়ছে রাজশাহী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে টানা তাপপ্রবাহে তেঁতে উঠেছে রাজশাহী অঞ্চল। তীব্র সূর্য দহনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরম বাতাস শরীরে লাগছে আগুনের হালকার মতো। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। চৈত্রের শেষে এসে অনেকটায় কাবু হয়ে পড়েছেন মানুষ। একদিকে তাপদাহ অপরদিকে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। ফলে সেচের অভাবে মাঠের বোরো ধান নিয়েও বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। গত এক সপ্তাহ ধরে এ অঞ্চলে বেড়েছে লোডশেডিংয়ের মাত্রাও। ক্ষেতে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে পারছেন না। এতে ক্রমেই ফেটে চৌচির হচ্ছে বোরোর ক্ষেত। এছাড়া তীব্র খরার আম ও লিচুও ঝরে যাওয়ার শঙ্কা করছেন কৃষকরা। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায় সহসা বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। আর দিনের শুরু থেকেই টানা সূর্য দহনে বাড়ছে ক্রমেই তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ বুধবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহ ধরে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রীর মধ্যে ওঠানামা করছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক হেলেনা খাতুন জানান, সাধারণত এটা গরমের মৌসুম। সে কারণে তাপমাত্রা এ ধরনের থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তাপমাত্রা আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলে তিনি জানান। এদিকে তীব্র গরমের কারণে দুপুরের দিকে বেশিরভাগ পথঘাট প্রায় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বাইরে বের হলেই তপ্ত হাওয়ার ছোবল। যেন বাতাসে আগুনের হল্কা। এই পরিস্থিতিতে শুধু মানুষেরই নয়, পশুপাখির প্রাণও ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে। নগরীর দড়িখরবোনা এলাকার রিক্সা চালক জমশেদ আলী জানান, টানা এক ঘণ্টা রিক্সা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। গরমের জন্য প্রাণ হাঁপিয়ে উঠছে। সে কারণে সামান্য রিক্সা চালাতে গিয়েই হাঁপিয়ে উঠতে হচ্ছে। এদিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলছে লোডশেডিং। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুত যাওয়া-আসার খেলা চলে ১৫ থেকে ২০ বার। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ দিতে না পারায় মাঠের জমি ফেটে যাচ্ছে। আবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। রাজশাহী পল্লী বিদ্যুত সমিতি জানায়, প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফপিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়ায় গড়ে ৫৫ থেকে ৫৭ মেগাওয়াট। বরাদ্দ পাওয়া যায় গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ মেগাওয়াট। আর বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পিকআওয়ারে বিদ্যুতের গড় চাহিদা ৫৫ থেকে ৫৯ মেগাওয়াট। বরাদ্দ ৩৫ থেকে ৩৭ মেগাওয়াট। ফলে দুই সময়েই চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি থাকছে ১০ থেকে ১৫ মেগাওয়াট পর্যন্ত। জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার পলাশী গ্রামের কৃষক কেএম সাজেদুজুর রহমান খান জানান, বোরো মৌসুমের শুরু থেকে বিদ্যুত বিভ্রাটে পড়েছে কৃষক। তিনি অর্ধেক জমিও রোপণ করতে পারেননি। যে জমিগুলোতে ধান রোপণ করেছেন সেগুলোতে পানির সমস্যায় পড়েছে। ধানে সঠিক সময় পানি না দিতে পারলে উৎপাদনে ব্যর্থ হতে হবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। গ্রামের মতো শহরেও শুরু হয়েছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা।
×