ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ট্যানারিমুক্ত হাজারীবাগ

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

ট্যানারিমুক্ত হাজারীবাগ

আদালতের নির্দেশে শান্তিপূর্ণ অভিযানে ২২৪ ট্যানারির বিদ্যুত, ১৯৩টির পানি ও ৫৪টির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটল ৬০ বছরব্যাপী হাজারীবাগ ট্যানারি অধ্যায়ের। তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি এবং ঢাকা ওয়াসা যৌথভাবে পরিবেশ অধিদফতরের সহায়তায় শনিবার দিনব্যাপী এই সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযানে অংশগ্রহণ করে। এর ফলে রাজধানী ঢাকা এবং এর প্রাণ প্রবাহ বুড়িগঙ্গা এখনই ভয়াবহ দূষণ মুক্ত হলো, এমন কথা বলা যাচ্ছে না। কেননা, হাজারীবাগের পরিত্যক্ত চামড়া শিল্পকারখানাগুলো অতঃপর কীভাবে ব্যবহৃত হয়, সেটাও নিয়মিত দেখভালের বিষয়। হাজারীবাগের সঙ্গে সন্নিহিত এলাকাসহ বুড়িগঙ্গার দূষণটি সরাসরি জড়িত। সুতরাং এত কারখানার বিপুল পরিমাণ পরিত্যক্ত তরল ও কঠিন বর্জ্য জরুরীভাবে দূষণমুক্ত করা বাঞ্ছনীয়। পাশাপাশি এলাকাটি পরিকল্পিত উপায়ে আবাসন ও পরিবেশবান্ধবভাবে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের ব্যাপারে ট্যানারি শিল্প মালিকরা যা করেছিলেন, তা কোনভাবেই যুক্তি গ্রাহ্য হতে পারে না। উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে শেষ সময়সীমা বেঁধে দেয়া ছিল গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। তবে দুঃখজনক হলো, একশ্রেণীর চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিক সরকার ও আদালতের নির্দেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়েই যাচ্ছিলেন। সত্যি বলতে কি রাজধানী তথা বুড়িগঙ্গার অসহনীয় ও তীব্র ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে বেশ কয়েক বছর আগেই হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রক্রিয়াজাত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। এর কোনটিতেই কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা ইটিপি নেই। ফলে এসব ট্যানারির যাবতীয় কঠিন ও তরল বর্জ্য গিয়ে পড়ে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে। এসব বর্জ্যে প্রধানত থাকে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত লবণ, সালফিউরিক এ্যাসিড, ক্রোমিয়াম ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক, যা মানবদেহ, পশুপাখি সর্বোপরি প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর ফলে হাজারীবাগ ও এর চারপাশের ভয়াবহ পরিবেশ দূষণসহ জনস্বাস্থ্য হুমকিতে রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। তদুপরি প্রধানত হাজারীবাগের একক দূষণে, যার পরিমাণ প্রায় ৭০ শতাংশ, রাজধানীর প্রাণ বুড়িগঙ্গা তার নাব্য হারিয়েছে অনেক আগেই। এই নদীতে এখন মৎস্য প্রজাতি তো দূরের কথা, এমনকি মশককুলও বংশ বৃদ্ধি করতে পারে না। ফলে জনসাধারণ, পরিবেশ সংগঠনসমূহ, সরকারসহ দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছে হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের। ট্যানারি শিল্প মালিকদের দাবির মুখে সরকার শেষ পর্যন্ত প্রায় সবই মেনে নিয়েছে। সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে জমি বরাদ্দসহ কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা ইটিপি স্থাপন করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণেরও সমস্যা নেই। কিছু ট্যানারি সেখানে কাজ শুরুও করেছে। অথচ সাভারের চামড়া শিল্পনগরী পুরোপুরি চালু হলে অনেকটাই সহজসাধ্য হয়ে উঠবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার আরও সম্প্রসারণ করা। তবে কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গেছে সাভারে। এই যেমন, সেখানে বর্জ্য শোধনাগারে লবণ পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। ফলে দূষিত লবণ পানি গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরীতে। তবে অচিরেই সে সমস্যা সমাধান করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে বিসিক। একই সঙ্গে চামড়া শিল্পের ৪০ হাজার শ্রমিকের পুনর্বাসনও অত্যাবশ্যক। যেসব ট্যানারির মালিক সাভারে শিল্পপ্লট পাননি, গ্যাস-বিদ্যুত-পানি সংযোগসহ তাদের বিষয়টিও বিবেচনা করা বাঞ্ছনীয়।
×