ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক কেটে দিতে এরদোগানের হুমকি

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১২ এপ্রিল ২০১৭

ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক কেটে দিতে এরদোগানের হুমকি

এনামুল হক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান হুমকি দিয়েছেন যে তার দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। তিনি আরও বলেছেন তুরস্ক ইইউর সদস্যপদ লাভের চেষ্টা হয়ত একেবারেই পরিত্যাগ করতে পারে। তিনি জার্মানদের নাৎসী ও ওলন্দাজদের ফ্যাসিস্ট বলেও উল্লেখ করেছেন। আগামী ১৬ এপ্রিল তুরস্কে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তুরস্ক পার্লামেন্ট পদ্ধতির সরকার থেকে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারে যাবে কিনা তার ওপরই এই গণভোট। ইউরোপে বসবাসরত তুর্কীরাও এই গণভোটে অংশ নেয়ার লক্ষ্য। ইউরোপের দেশগুলোতে নিযুক্ত তুর্কী কর্মকর্তারা এসব দেশের তুর্কী নাগরিকদের গণভোটে অংশ নেয়ার পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু সদস্য দেশ তাদের সেই প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। এদের মধ্যে জার্মানি, হল্যান্ড, ছাড়াও আছেন অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড। তারা গণভোটের পক্ষে তুর্কীদের সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। তাতেই ক্ষেপে গেছেন এবদোগান। আর ক্ষেপে গিয়েই ইইউতে যোগদানের চেষ্টা বাদ দেয়ার সম্ভাবনা কথা বলছেন এবং অন্যদের করছেন সমালোচনা। উল্লেখ করা যেতে পারে যে গত বছরের জুলাইয়ে তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর এরদোগান জরুরী অবস্থার সম্প্রসারিত মেয়াদের মধ্যে দেশ শাসন করছেন। সেই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে বিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমন নির্যাতন নেমে আসে। ৪০ হাজারেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়। বিশ্বে সাংবাদিকদের বৃহত্তম কয়েদখানা হয়ে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরদোগানের সমালোচনার। জবাবে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ইইউ এমন আশাবাদ বজায় রেখে চলেছে যে তুরস্ক একদিন এই ক্লাবের সদস্যপদ লাভ করবে। ইইউতে যোগ দিতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে ৩৫টি ক্ষেত্রে শর্তাদী পূরণ করতে হয়। এই ক্ষেত্রগুলোকে বলা হয় চ্যাপ্টার বা অধ্যায়। একটি অধ্যায় খোলার জন্য ইইউর সকল নেতার সর্বসম্মত ভোট প্রয়োজন। বন্ধ করার জন্য তাই। আনুষ্ঠানিক প্রার্থীপদ পাওয়ার প্রায় ১৮ বছরের প্রক্রিয়ায় তুরস্ক ও ইইউ ১৪টি অধ্যায় খুলেছে। মাত্র ১টি বন্ধ করেছে। তুরস্ক যদি ইইউর সদস্য হতো তাহলে ইইউর সীমান্ত সিরিয়া, ইরাক ও ইরান পর্যন্ত প্রসারিত হতো। ইউরোপীয় ভোটাররা কেন সেটা চাইবে না সেটা বুঝতে পারা কঠিন কিছু নয়। তাছাড়া তুরস্ক সদস্যপদ পেলে ৮ কোটি মুসলমান ইইউ দেশগুলোর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবাধে চলাফেরার সুযোগ পাবে। ইউরোপের রাজনীতির কাছে নিশ্চয়ই সেটা কাক্সিক্ষত নয়। কিন্তু তৎসত্ত্বেও দু’পক্ষের মধ্যে আলাপ আলোচনা অব্যাহত আছে। ইইউ কর্মকর্তারা বলেছেন তারা তুরস্কে সংস্কার উৎসাহিত করতে চান। কিন্তু জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া বা গ্রীস কেউ দেশটিকে অদূরভবিষ্যতে ইইউতে যোগ দিতে দেবে না। এরদোগান এটা বুঝতে পারেন বলেই তুরস্ককে আরও স্বৈরাচারী ধরনের সংস্কারের দিকে নিয়ে গেছেন। এমনকি ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করারও হুমকি দিতে পিছপা হচ্ছেন না। এতে ইউরোপের উদ্বিগ্নরোধ করার কারণ আছে। কেননা স্ট্যাটাসকো বজায় রাখার জন্য ইউরোপ তুরস্কে। প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসীরা যাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসতে না পারে তার জন্য ইইউ এই অভিবাসীদের তুরস্কের ভূখ-ে থাকতে দেয়ার জন্য আঙ্কারাকে বর্তমানে বিপুল অঙ্কের অর্থ যোগাচ্ছে। কিন্তু তুরস্ক একদিন ইইউতে যোগ দেবে এমন হেয়ালিটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে গোটা মহাদেশজুড়ে সেখানে পপুলিস্ট ইসলামবিরোধীদের জোয়ার চলছে। এই খেলায় শামিল হতে ইউরোপের আগ্রহ তুরস্ককে আরও একঘরে করে ফেলার হুমকি সৃষ্টি করছে। সূত্র : টাইম
×