ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে লন্ডন এখন শান্ত

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১২ এপ্রিল ২০১৭

ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে লন্ডন এখন শান্ত

গত ২২ মার্চ পার্লামেন্টে খালিদ মাসুদের পরিচালিত হামলার পর লন্ডনের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। জীবনযাত্রা শান্তভাবেই যথারীতি চলছে। বার্মিংহাম নগরীতে ব্রিটিশ সম্প্রদায়ের এক সমাবেশ হয়। আয়োজকদের উদ্দেশ্য ছিল সমাবেশের মাধ্যমে এ বাস্তবতা তুলে ধরা যে, চরমপন্থীরা তাদের ধর্মমতের প্রতিনিধিত্ব করে না। এদিকে দেশের ডানপন্থী সংবাদপত্রগুলোতে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে যে মাসুদ অতি সম্প্রতি লন্ডন নগরীতে ছিল। এই লন্ডনে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মুসলমান এই তথ্যটি উল্লেখ করে পত্রিকাগুলোতে লন্ডনকে ‘জিহাদি ভাবধারার আঁতুরগৃহ বলে অভিহিত করা হয়। এর প্রেক্ষাপটে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে বার্মিংহামের মুসলমান জনগণ দেখিয়ে দেয় যে ব্যাপারটা তা নয়। ২২ মার্চ বিগবেনের ছায়ার নিচে মাত্র ৮২ সেকেন্ডের মধ্যে একজন মাত্র ঘাতকের নারকীয় তা-বে ৪ জন নিহত ও ৫০ জনের মতো আহত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটনরা মুসলমানদের ওই মিছিল ও সমাবেশকে চরম উদাসীন্য ও তাচ্ছিল্যের ভাব নিয়ে দেখে। ঘটনার পরদিন যথারীতি পার্লামেন্টের অধিবেশন বসে। অন্যান্য অফিস আদালতও খোলে। পাব ও হোটেলগুলোও চালু হয়। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরী লন্ডনকে দেখতে লাখ লাখ মানুষ বিমানে ও ট্রেনে গিয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ২৩ মার্চ পার্লামেন্টে বলেছেন, ‘ব্রিটনরা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যে হাজারো দৃষ্টান্তের পরিচয় দিয়েছেন তার ফলে সন্ত্রাসবাদীরা বিজয় অর্জন করতে পারেনি। এ জন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। এমন এক হামলার জন্য যুক্তরাজ্যের শক্তিশালী সন্ত্রাস দমন সংস্থাগুলো অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। ওয়েস্ট মিনস্টারে গুলির আওয়াজ শোনা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয়া হয়। ফার্স্ট এ্যাকশন টিমের এবং এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের সদস্যরা কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। যুক্তরাজ্যে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর পেছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয় তা ইউরোপের অন্য যে কোন দেশের চেয়ে বেশি। তাছাড়া সংস্থাগুলোর লোকজনের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস মোকাবেলার অভিজ্ঞতাও কম নয়। সেই কোন আমল থেকে তারা আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মোকাবেলা করছে। কিছু এমপি ২২ তারিখের হামলার প্রেক্ষাপটে গ্রেফতার করার জন্য নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল বা ক্ষমতা জারির দাবি জানান। অবশ্য তাদের প্রস্তাবিত আইনের চেয়েও অনেক কঠোর জরুরী আইন বলবৎ রয়েছে ফ্রান্সে যা ২০১৫ সালের প্যারিস হামলার পর জারি করা হয়। যাই হোক, পুলিশ পার্লামেন্টের নিরাপত্তা পর্যালোচনা করে দেখছে। সরকারও তার বিতর্কিত প্রিভেন্ট এন্টির‌্যাডিকেলাইজেশন স্কিমটি নতুন করে চালুর উদ্যোগ নিতে পারে। অবশ্য ব্রিটেনের মুসলিম সম্প্রদায়ের এ স্কিমটির প্রতি অতি বিরূপ মনোভাব আছে। কারণ, তারা মনে করে সন্ত্রাসবাদের মূল কারণ মোকাবেলা করার চাইতে বরং তাদের ওপর নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ করাই হলো এই স্কিমের মূল উদ্দেশ্য। হামলাকারী খালিদ মাসুদ এক বছর আগে বার্মিংহামে আসে। তার সঙ্গে কারা কারা জড়িত বা এ হামলায় যোগসাজশ আছে তা উদঘাটনের জন্য পুলিশ বার্মিংহামে কমপক্ষে ৯ দফা অভিযান চালায় এবং ৮ জনকে গ্রেফতার করে। তবে পুলিশ জানিয়েছে যে খ্রীস্টান মা এড্রিয়ান এলমসের গর্ভজাত মাসুদের আইএসের সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছিল বলে শোনা যায়নি। আল-কায়েদার সঙ্গেও না। অথচ আইএস এ ঘটনার পেছনে তাদের হাত থাকার কথা দাবি করেছে। সেটা হয়ত ঘটনার সুযোগ নিয়ে সুবিধাবাদী হিসেবেই করেছে। সমস্ত লক্ষণ থেকেই বুঝা যায় যে, মাসুদ এককভাবেই ওই নৃশংস সহিংসতা ঘটিয়েছে। বার্মিংহামের মুসলিম সমাবেশেও এই বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। কিন্তু তারপরও মুসলমানরা স্বস্তিতে নেই। নাভিদ আহমেদ নামে এক ত্রাণ সংস্থার কর্মকর্তা টাইম প্রতিনিধির কাছে বলেনÑ ‘সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আমরা অন্য সবার মতোই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। একজন মাত্র ব্যক্তির কর্মকা-ের জন্য গোটা সম্প্রদায়কে কিভাবে দায়ী করা যায়?’ চলমান ডেস্ক সূত্র : গার্ডিয়ান
×