ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আসামিরা আমার বাবাসহ তিনজনকে নদীর পাড়ে নিয়ে হত্যা করে ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১২ এপ্রিল ২০১৭

আসামিরা আমার বাবাসহ তিনজনকে নদীর পাড়ে নিয়ে হত্যা করে ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আলবদর রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে দ্বিতীয় সাক্ষী মোঃ গোলাম ফারুক বলেন, আসামি ও অন্য সহযোগীরা আমার বাবা শহীদুল্লাহ মাস্টারসহ তিনজনকে ধরে নিয়ে বানা নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করেছে। তৃতীয় সাক্ষী আবুল হোসেন মাস্টার বলেছেন, রাজাকাররা ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। তার মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানতে পেরেছি। এর মধ্যে একজন ছিল শহিদুল্লাহ মাস্টার। দুইজনের পরিচয় জানতে পারিনি। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীগণ সাক্ষীদের জেরা করেন। পরবর্তী দিন আজ বুধবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে হবিগঞ্জের রাজাকার আবুল খায়ের ওরফে গোলাপ মিয়াকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সকালে ঐ রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর রিজিয়া সুলতানা চমন। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান ও মুজাহিদুল ইসলাম। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার দুই রাজাকার রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও ওয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেছেন, আমার নাম মোঃ গোলাম ফারুক। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৪৮ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- কালাইপাড়, থানা- ফুলবাড়িয়া, জেলা- ময়মনসিংহ। একাত্তরে আমার বয়স ছিল আনুমানিক ২/৩ বছর। আমি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। আমি গাড়ির ব্যবসা করি। ১৯৭১ সালে আমার বাবা শহিদুল্লাহ মাস্টার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। আমি বড় হয়ে আমার মা এবং চাচাদের কাছ থেকে শুনেছি যে, একাত্তর সালের ২২ আগস্ট রবিবার সকাল বেলা আমার বাবা বেতন তোলার জন্য ফুলবাড়িয়া সদরে যাওয়ার পথে ফুলবাড়িয়া বেবি টেক্সি স্ট্যান্ডে পৌঁছলে আসামি মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ফকির, রাজাকার আমজাদ আলী মৃত ও রাজাকার ওয়াজ উদ্দিন (বর্তমানে মৃত) আমার বাবাকে আটক করে ফুলবাড়িয়া থানা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এবং ক্যাম্পে নিয়ে তিন দিন আটক রেখে আমার বাবাকে নির্যাতন করে। আমি আরও শুনতে পাই যে, ২৫ আগস্ট বুধবার সকাল বেলায় আসামি মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ফকির, রাজাকার আমজাদ আলী (বর্তমানে মৃত) রাজাকার ওয়াজ উদ্দিনসহ (বর্তমানে মৃত) তাদের আরও কয়েকজন সহযোগী আমার বাবাকে ও ঐ ক্যাম্পে আটককৃত ফুলবাড়িয়া সদরের চক লাউড়িপাড়ার জমশেদ আলী ও ফুলবাড়িয়া সদরের আব্দুল মজিদকে উক্ত ক্যাম্প থেকে ফুলবাড়িয়া সদর থানাধীন রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের বানা নদীর পাড়ে নিয়ে তাদের এক লাইনে দাঁড় করে ঐ গ্রামের লোকজনদের ডেকে তাদের সামনে আটককৃত তিনজনকে গুলি করে হত্যা করে। মাওলানা সুবহানের বিরুদ্ধে চার্জশীট গ্রহণ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুস সুবহানের বিরুদ্ধে সদর থানায় দায়েরকৃত লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে ওই মামলা থেকে তার অব্যাহতি ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছে আদালত। মঙ্গলবার পাবনা আমলি আদালত-১-এর বিচারক অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মাওলানা সুবহানকে মঙ্গলবার বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে আগামী ২১ জুন পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৩ সালের ৩০ আগস্টে জামায়াতের নায়েবে আমির ও পাবনা সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য মাওলানা আবদুস সুবহানের নির্দেশে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী মামলার বাদী আবদুল কুদ্দুসের চরদাসপাড়া গ্রামের বাড়িসহ, খাপড়াডাঙ্গি, দাসপাড়া ও গোয়ালবাড়ি গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারপিট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ২ এপ্রিল পাবনা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মাগুরায় চার রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মাগুরার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালাতে জেলার শালিখার সীমাখালীতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রজব আলী নামে একজনকে হত্যার ঘটনায় আমজেদ মোল্লা, কেরামত মোল্লা, ওহাব, ফসিয়ার মোল্লা নামে চারজনের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা হয়েছে। নিহতের ছেলে জেলার শালিখার সীমাখালী গ্রামের খোকন বিশ্বাস বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি মুক্তিযুদ্ধাকালীন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত হওয়ায় উক্ত অপরাধের বিচারের নিমিত্তে অভিযোগের সত্যতা বিষয়ে তদন্তক্রমে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের উদ্দেশ্যে সমন্বয়ক, তদন্ত সংস্থা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের আদেশ দিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট সমর জোয়ারদার আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আসমিরা হলোÑ যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার প্রেমচারা গ্রামের মৃত ছোবহান মোল্লার ছেলে আমজেদ মোল্লা, কেরামত মোল্লা, মৃত বুধোই মোল্লার ছেলে ওহাব এবং খুদড়া গ্রামের মৃত মুনসুর আলী মোল্লার ছেলে ফসিয়ার মোল্লা। হবিগঞ্জে রাজাকার গোলাপ গ্রেফতার নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের গোলাপকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত সংস্থা, দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি নুর হোসেনের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকালে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেনÑ বিচারপতি মোঃ সাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ সোহরোওয়ার্দী। এদিকে ট্রাইব্যুনালের আদেশের কপি একই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে ফ্যাক্সযোগে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে পৌঁছলে রাজাকার শিরোমণি গোলাপকে আনুষ্ঠানিক গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। তার আগের দিন সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে জেলার নবীগঞ্জস্থ নিজ বাড়ি থেকে এই রাজাকারকে নিয়ে আসে পুলিশ। পরবর্তীতে তাকে রাখা হয় হবিগঞ্জ পুলিশ কার্যালয়ের ডিবি শাখায়। ’৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর সহায়তায় একাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত ২০ নিরীহ স্বাধীনতাকামী মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে এই রাজাকার শিরোমণি আওয়ামী লীগ নেতা গোলাপের বিরুদ্ধে। এদিকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে এমন খবর নবীগঞ্জসহ হবিগঞ্জ শহরের সর্বত্র চাউর হলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতা প্রেমিক বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী মামলার বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে দেখা দেয় আনন্দের বন্যা। বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
×