ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বৈসাবি উৎসবের উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১২ এপ্রিল ২০১৭

খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বৈসাবি  উৎসবের উদ্বোধন

পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি ॥ পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব বৈ-সা-বি ঘিরে পুরো জেলায় আনন্দের আবহ ছড়িয়ে পড়েছে। পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’কে বরণ করতে মঙ্গলবার খাগড়াছড়িতে বিশাল বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের উদ্যোগে সকালে পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণিল পোশাকে তরুণ-তরুণী ছাড়াও নানা বয়সের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর হাজারো নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ থেকে র‌্যালিটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে উদ্বোধন করা হয় দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসবের। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এবং ফিতা কেটে উৎসবের উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ২৯৮নং সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার আলী আহম্মেদ খান, বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মতিউর রহমার, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমাসহ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। হাজার হাজার পাহাড়ী-বাঙালীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে র‌্যালিটি হয়ে উঠে সর্বস্তরের মানুষের মিলনমেলায়। পাহাড়ীরা নিজস্ব পোশাক, বাদ্যযন্ত্র আর বিলুপ্তপ্রায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে নেচে, গেয়ে, বিচিত্র রঙে অংশ নেন। বিভিন্ন বয়সী মারমারা রঙিন ছাতায় পুরো র‌্যালিকে রাঙিয়ে দেয়। ত্রিপুরা কিশোর-কিশোরীদের ‘গরয়া নৃত্য’ ছিল বিশেষ আকর্ষণীয়। দৃষ্টি কাড়ে চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে অংশ নেয়া নারী-পুরুষের স্বতঃস্ফূর্ততাও। বাঙালী সংস্কৃতির নানা উপস্থাপনায় মুগ্ধ হন সাধারণ পথচারীরাও। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, এনজিওকর্মী, সরকারী কর্মচারী, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে আয়োজন করা পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ওয়াটার ফেস্টটিবল বা পানি উৎসব ও গড়িয়া নৃত্যসহ বিভিন্ন মনোজ্ঞ ডিসপ্লে। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে ‘ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা ভাষায় বিঝু’ নামে এ উৎসব পালন হয়ে থাকে। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়। এদিকে আজ বুধবার নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে মূলত খাগড়াছড়িতে শুরু হবে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি। ঐদিন সকালে চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসানো হবে। ১৩ এপ্রিল চাকমা সম্প্রদায়ের মূল বিঝু আর পহেলা বৈশাখ বা গজ্জাপয্যা। ঐদিন ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন। সেই সঙ্গে সব বয়সী মানুষ নদী খাল অথবা ঝর্ণায় গঙ্গা দেবীর পূজা আরাধনা করবেন। ১৪ এপ্রিল পালিত হবে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই ও পানি উৎসব বাংলা নববর্ষের র‌্যালি। উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উৎসব পালন করে আসছে। যা সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
×