ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৈশাখী কেনাকাটার আজিজ মার্কেট

তাঁতের কাপড়ে সৃজনশীল বাংলাদেশ, অন্যরকম আবেদন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১২ এপ্রিল ২০১৭

তাঁতের কাপড়ে সৃজনশীল বাংলাদেশ, অন্যরকম আবেদন

মোরসালিন মিজান ॥ অন্য সময় দেশীয় কাপড় বিদেশী বলে বিক্রি করা হয়। এখন উল্টোটি। বিদেশী কাপড় দোকানিরা দেশী বলে চালিয়ে দিচ্ছেন! চমৎকার এ বদলে যাওয়া বৈশাখ উপলক্ষে। তবে আজিজ মার্কেটের কিছুই বদলায়নি। বদলাতে হয় না। কারণ এ মার্কেটটি দেশীয় পোশাকের জন্য বিখ্যাত। এখানে সব সময় বাঙালী রুচিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। দেশীয় নক্সা লোকোমোটিফ নিয়ে কাজ করেন উদ্যোক্তারা। আর বাংলা নববর্ষ সামনে চলে এলে তো কথাই নেই! এখন সেই সময়। ক’দিন পর ১৪২৪ বঙ্গাব্দ। নতুন বছর বরণ করে নিতে লাল-সাদা রঙে সেজেছে সবকটি ফ্যাশন হাউস। মঙ্গলবার মার্কেট ঘুরে দেখা যায় উৎসবের আমেজ। নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে দেশীয় পোশাকের শোরুম। ছোট-বড় দোকান। সবখানেই শাড়ি, থ্রিপিস, ফতুয়া, টপস সাজিয়ে রাখা হযেছে। আছে পাঞ্জাবি। তাঁতে বোনা সুতিকাপড়ে লাল ও সাদা রঙের প্রাধান্য। হাতের কাজ দেখে মুগ্ধ হতে হয়। সুই-সুতোয় দারুণ সব নক্সা করা হয়েছে। স্ক্রিনপ্রিন্ট, হ্যান্ডপ্রিন্টেও বাংলা এবং বাঙালী। নিজস্ব রুচিকে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। বিসর্গ নামের একটি ফ্যাশন হাউসে শাড়ির ভাল সংগ্রহ। এখানে শাড়ি দেখে মনে হলো এবারের বৈশাখ আরও বর্ণিল, আরও কালারফুল হবে। দেশীয় কাপড়ে বাটিকের কাজ। এমব্র্রয়ডারি। হাতের কাজগুলো ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা হয়। কেমন যেন মায়া মেশানো! পাশেই ঢাক ঢোল নামের আরেকটি শোরুম। এখানে টাঙ্গাইলের তাঁতে বোনা শাড়ির সম্ভার। সুতি, সিল্ক ও হাফসিল্ক কাপড়ের ওপর স্ক্রিনপ্রিন্ট ও হ্যান্ডপ্রিন্টের কাজ করা হয়েছে। সাজিয়ে রাখা শাড়িগুলো থেকে একটি মেলে ধরতেই চোখ আটকে গেল। জমিনে এক ধরনের নক্সা, আঁচলে তার থেকে আলাদা কাজ। শাড়িতে আঁকা ফুল-লতা-পাতা নয় শুধু, যেন বৈশাখ ফুটে উঠেছে! খুব উজ্জ্বল রঙে উৎসবের বার্তা দিচ্ছিল শাড়িটি। ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার রাজুর বলাটিও বেশ লাগল। বললেন, শাড়িগুলো খুব বিক্রি হচ্ছে। তারচেয়ে বড় কথা, শাড়িগুলোর দিকে তাকালে দোকানে বৈশাখ এসেছে বলে মনে হয়। এটাও উপভোগ করছেন বলে জানান তিনি। মেয়েদের থ্রিপিস বা ফতুয়ার খুব ভাল সংগ্রহ দেখা গেল মেঠোপথ নামের একটি শোরুমে। সুতি কাপড়ের ওপর হাতের কাজ করা হয়েছে। সুই-সুতোর সাহায্যে করা বিভিন্ন নক্সায় দেশীয় মোটিফ। লোক ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার একটি সুন্দর সমন্বয় করেছে ফ্যাশন হাউসটি। আজিজ মার্কেটে গেলে এখানে তরুণীদের ঢুঁ মারা খুব উচিত হবে বলেই মনে হয়েছে। কাপড়-ই বাংলা এখন বেশ পরিচিত। সব ধরনের দেশীয় পোশাক এখানে পাওয়া যায়। মেয়েদের থ্রিপিস এবং ফতুয়া খুব যতœ নিয়ে করে ফ্যাশন হাউসটি। তৃতীয় তলার শোরুমে গিয়ে দেখা গেল অনেক ডিজাইন। কাটিংয়ে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে। রঙের ব্যবহারেও আনন্দঘন বৈশাখ। ফ্যাশন হাউসটির কর্ণধার মুরসালিন বিথুন বললেন, আমরা সারাবছরই দেশীয় কাপড় এবং ডিজাইন নিয়ে কাজ করি। বাঙালীর উৎসবগুলো নিয়ে ভাবি। তারপর পোশাক প্রস্তুত করি। বৈশাখ তো অনেক বড় উৎসব। সেটি বিবেচনায় রেখেই থিম ঠিক করা হয়েছে। বিক্রিও খুব ভাল বলে জানান তিনি। এবার পাঞ্জাবির গল্পটা। বৈশাখের প্রথম দিন ছেলেরা পাঞ্জাবি পরে বের হবেন। মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে সেই পাঞ্জাবির সংগ্রহ। প্রিন্টের পাঞ্জাবিই বেশি মনে হলো। কোন কোন পাঞ্জাবির রং লাল। কোনটি সাদা। এই লাল ও সাদা রঙের ওপর প্রিন্টের কাজ করা হয়েছে। শুধু পাঞ্জাবির কাজ করে বালুচর। এ ফ্যাশন হাউসটির শোরুমে গিয়ে দেখা গেল, পাতলা এবং আরামদায়ক কাপড়ে অল্প কাজ করা হয়েছে। বালুচরের কর্ণধার রনি। তরুণ উদ্যোক্তা বললেন, উৎসবের চরিত্র এবং গ্রীষ্মের গরম আবহাওয়ার কথা বিবেচনায় রেখে পাঞ্জাবি করা হয়েছে। বৈশাখ উপলক্ষে অনেকগুলো ডিজাইন আনা হয়েছিল। এখন বিক্রি শেষপর্যায়ে বলে জানান তিনি। মেঘ নামের একটি শোরুমেও নানা রকমের পাঞ্জাবি। বিভিন্ন রঙের ব্যবহার লক্ষ্য করা গেল। তবে দেশীয় মোটিফ বেশ আকর্ষণ করে। মেঘ নামের ফ্যাশন হাউসটিতেও বৈশাখের পাঞ্জাবি। এখানে লাল রঙের ব্যবহার বেশি করা হয়েছে। অনেকে বাচ্চাদের পোশাক নিয়ে ভোগেন। পছন্দের পোশাক খুঁজে পান না বাবা-মায়েরা। আজিজ মার্কেট ঘুরে শিশু-কিশোরদের পোশাকও পাওয়া গেল। শুধু পাওয়া গেল বললে ভুল হবে, দারুণ সব পোশাক! উদাহরণ হতে পারে পৌরাণিক’র সংগ্রহ। এ ফ্যাশন হাউসে সব বয়সী বাচ্চাদের পোশাক। দেশীয় তাঁতের কাপড় ও বেক্সি বয়েলে আরামদায়ক থ্রিপিস, ফতুয়া। একেবারে দুই-দেড় বছরের শিশুটি? তার জন্যও আছে থ্রিপিস! টিশার্টের জন্য বিশেষ পরিচিতি আজিজ মার্কেটের। বৈশাখ উপলক্ষে এসেছে নতুন নতুন ডিজাইন। ডিজাইন বলতে, টিশার্টের সামনে স্ক্রিনপ্রিন্ট করা হয়েছে। আবির্ভাব নামের একটি শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, পাঞ্জাবির পাশাপাশি টিশার্ট সাজিয়ে রাখা হয়েছে। টিশার্টের গায়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যের বিভিন্ন মোটিফ। সামান্য কাজ। তবু বৈশাখের আমেজটা টের পাওয়া যায়। উৎসবের এই রং, দেশীয় পোশাক কেনার আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশে। আমাদের পোশাকে হোক বৈশাখ।
×