ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ১২ এপ্রিল ২০১৭

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর সবদিক বিবেচনায় অত্যন্ত সফল হয়েছে। এর ফলে বন্ধুপ্রতিম দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভেতরকার সুসম্পর্ক আরও দৃঢ়তা পেল। ভারতের রাষ্ট্রপতি স্বয়ং বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে একটা ধারাবাহিকতা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে সম্পর্কের উন্নতির প্রতিফলন আছে। সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসাও করেন। একথা অনস্বীকার্য যে শেখ হাসিনার ভারত সফরের ফলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি নতুন ইতিবাচক মাত্রা অর্জন করেছে। তবে তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সুস্পষ্ট সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসলে দেশের মানুষ আরও সন্তুষ্ট হতে পারত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে ভারতের নিজস্ব প্রটোকল ভেঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিমানবন্দরে আসা, অতিথিকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আতিথেয়তার বিশেষ সম্মান দেওয়া, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী ভারতীয় সেনাদের সম্মান জানানোসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় যথেষ্ট বন্ধুতা ও আবেগ পরিলক্ষিত হয়েছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, গণমাধ্যম প্রভৃতি বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে সেগুলো নিঃসন্দেহে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করবে। বাংলাদেশ ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দুটি দেশ একই সঙ্গে সার্ক, বিমসটেক, আইওয়া এবং কমনওয়েলথের সাধারণ সদস্য। বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহার হয়ে থাকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী জোটের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের এক কোটি উদ্বাস্তুকে আশ্রয়দান ও স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ২৫ বছরমেয়াদী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি, ১৯৭৪ সালের ১৬ মে মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উদারীকরণের সূত্রপাতের সঙ্গে তা বৃহত্তর প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্যের উদ্ভব ঘটায়। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই সন্ত্রাসবাদবিরোধী কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখছে। তারা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নব দিগন্তের সূচনা হয়। বন্ধুদেশ হিসেবে ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে সক্ষম হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লীর হায়দরাবাদ হাউসে দেশ দুটির মধ্যে ৩০ বছরমেয়াদী গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান সম্পর্ককে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করা চলে। ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় প্রতিশ্রুত ১১টি উন্নয়ন সহযোগী উদ্যোগের অধিকাংশই এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে মত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই তো সেদিন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ঐতিহাসিক হিসেবে অভিহিত করে আমাদের রাষ্ট্রপতি বলেছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও ভারত (বিবিআইএন) উদ্যোগসহ দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক বহুমাত্রিক হচ্ছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা দুই দেশের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং উভয় দেশই এই সুসম্পর্ক থেকে লাভবান হবে।
×