ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকিং খাতে বড় অঙ্কের ঋণের পরিমাণ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১২ এপ্রিল ২০১৭

ব্যাংকিং খাতে বড় অঙ্কের  ঋণের পরিমাণ বাড়ছে

ব্যাংকগুলো ছোট এবং মাঝারি ঋণগ্রহীতার দিকে কম নজর দিচ্ছে অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ দেয়া হয়েছে। এর একটি অংশ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু ব্যাংকগুলো কিছু ছোট এবং মাঝারি ঋণগ্রহীতার দিকে কম নজর দিচ্ছে। এক্ষেত্রে শহরে ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে ঋণপ্রবাহের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ‘ঋণ কার্যক্রম ২০১৬ সালের পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক এবং অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বড় ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু ছোট এবং মাঝারি ধরনের প্রতিষ্ঠানে ঋণের পরিমাণ কমছে। এক্ষেত্রে শহরে ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে ঋণপ্রবাহের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) বা খেলাপী ঋণ ব্যাংকিং খাতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালের জুনে এনপিএল রেশিও দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মোঃ ইয়াছিন আলী, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমীন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, বিআইবিএমের গবেষণায় ২০১৬ সালের ঋণ ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত তারল্য এবং খেলাপী ঋণের সমস্যা উঠে এসেছে। এ দুটি বিষয় এখন ব্যাংকিং খাতে উদ্বিগ্নতা বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতের ঝুঁকি কমাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে গত এক বছরেই বেশকিছু প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ দেয়া হয়েছে। এর একটি অংশ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু ব্যাংকগুলো কিছু ছোট এবং মাঝারি ঋণগ্রহীতার দিকে কম নজর দিচ্ছে। অধিক তারল্য শোরবাজারে বিনিয়োগ হবে আত্মঘাতী। তিনি বলেন, ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষতার সঙ্গে করতে হলে তথ্যভা-ার গড়ে তুলতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোকেই অর্থ ব্যয় করতে হবে। পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবির মতো করে সহজামানত ডাটা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সকল রেজিস্ট্রি অফিস ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। সুতরাং এ কাজটি করা খুব সহজ হবে। তিনি বলেন, আইনী ব্যবস্থায় খেলাপীর অর্থ আদায় সময়সাপেক্ষ। এজন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার সাহায্য নিয়ে খেলাপী অর্থ আদায় করা সম্ভব হতে পারে। সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মোঃ ইয়াছিন আলী বলেন, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী ব্যাংকে খেলাপী ঋণের হার ১ শতাংশের কম। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এ হার ৪০ শতাংশের ওপরে। একই পরিবেশে কাজ করে এত কম-বেশি হবে কেন? এখানে কোন সমস্যা আছে? তিনি বলেন, সরকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে সঠিক সময়ে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যর্থ হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের গ্যাস এবং বিদ্যুত সংযোগ দিতে পারছে না। ফলে শিল্প-কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ব্যাংকিং খাতের অনেকে এখন গ্রেফতার। বেনামী চিঠি এবং গণমাধ্যমের খবরের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার না করে কোন অভিযোগ পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ করা হয়েছে। মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমীন বলেন, দুদকের গ্রেফতারের কারণে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এটি এ খাতের জন্য শুভ নয়।
×