ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার দিনের ভারত সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ফিরেছেন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১১ এপ্রিল ২০১৭

চার দিনের ভারত সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ফিরেছেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ চার দিনের সরকারী সফর শেষে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। ব্যাপক প্রস্তুতি থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁকে দেয়া গণসংবর্ধনা কর্মসূচী স্থগিত করে আওয়ামী লীগ। তবে দলটির সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রীবর্গ বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান। এর আগে ভারতের স্থানীয় সময় বিকেল পৌনে ৫টায় নয়াদিল্লীর পালামে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানান বিজেপি সরকারের বাঙালী শিল্প প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। চার দিনের সফরে গত শুক্রবার দিল্লী পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। দু’দেশের শীর্ষ বৈঠকে বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তি না হলেও বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান সরকারের সময়েই তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিস্তার বদলে অন্য চারটি নদীর পানিবণ্টনের কথা গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তবে দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ প্রস্তাবে মমতার প্রস্তাবের কোন উল্লেখ নেই। বাংলাদেশও ওই প্রস্তাবকে আমলে নেয়নি বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ সফরের শুরুতেই চমক দেখান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রটোকল ভেঙ্গে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে পালাম বিমানঘাঁটিতে উপস্থিত হন মোদি। নয়াদিল্লীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত রাস্তার দু’দিকও সাজানো হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা সফরের এ চার দিন ছিলেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। শুরুতেই শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সেদিন রাতেই প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। শনিবার দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠকের পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ৩৪টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেদিন শেখ হাসিনার সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন নরেন্দ্র মোদি। বিকেলে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সাত ভারতীয় সেনাকে সম্মাননা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ শাসিত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা মহাত্মা গান্ধীর রাজঘাটের সমাধিতে ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের আত্মজীবনীমূলক বই ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করেন। রবিবার আজমিরে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতীর দরগাহ জিয়ারত করতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। রাতে রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে ফেরার আগে সোমবার সকালে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং ব্যবসায়ী কর্মসূচীতে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারী পর্যায়ে প্রথম ভারত সফর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এর আগে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে এক সরকারী সফরে ভারতে গিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে ফিরতি সফরে বাংলাদেশে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
×