ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্মূল কমিটির দাবি যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফত করে শহীদ সন্তান ও দেশের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১১ এপ্রিল ২০১৭

নির্মূল কমিটির দাবি যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফত করে শহীদ সন্তান ও দেশের কল্যাণে  ব্যয় করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারীদের শাস্তির জন্য দ্রুত সময়ে আইন প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফত করে তা শহীদ সন্তান ও দেশের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। যারা ইতিহাস বিকৃত করছে তাদের বিরুদ্ধে কেন রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হবে না? গয়েশ্বরের আচরণ তা যদি গণতান্ত্রিক হয় তাহলে অগণতান্ত্রিক আচরণ কোনটি? সোমবার বিকেলে রাজধানীর ধানম-ির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘একাত্তরের গণহত্যা অস্বীকারকারীদের শাস্তির জন্য আইন চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ৪৬ তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ তার নিজ তহবিল থেকে শহীদ সৈয়দ আলী মুন্সির ছেলে আবুল কালাম আজাদের হাতে ১ লাখ টাকা তুলে দেন। প্রসঙ্গত, নাটোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রান্তজনে ‘স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও খোঁজ নেয়নি কেউ! একাত্তরের শহীদ সৈয়দ আলী মুন্সীর ছেলে ৬৫ বছর বয়সেও কুলির কাজ করেন!’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা নজরে আসে লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের। এই প্রতিবেদনের কথা তিনি এক আলোচনা সভায় উল্লেখ করলে তা দৃষ্টি কাড়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের। পরে আজকের অনুষ্ঠানে তিনি এই শহীদ সন্তানের হাতে টাকা তুলে দেন। অনুষ্ঠানে তরুণ সাংবাদিকদের মধ্যে ‘মুক্তিযুদ্ধের শহীদস্মৃতি পুরস্কার’ প্রদানের ঘোষণা দেয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। গণহত্যার ভয়াবহতা ও ব্যাপকতা তুলে ধরার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের আত্মদান সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করার উদ্দেশে এই পুরস্কার প্রবর্তন করেছে সংগঠনটি। এতে ৩ ক্যাটাগরিতে (প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও আঞ্চলিক) প্রতিবছর ৩ সাংবাদিককে পুরস্কৃত করা হবে। ৩ মে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মদিনে প্রতিবছর এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাস গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। অথচ আজ শহীদদের ছেলে বা কন্যা পিতার স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা করছে। আমার খুবই খারাপ লাগে, আমরা জাতিগতভাবে কিছু করতে পারছি না। তিনি বলেন, ইতিহাস বিকৃতি রোধে হলোকাস্ট ডিনাইল এ্যাক্টকে আমি সমর্থন করি। সংসদে আমি বিষয়টি উত্থাপন করব। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছে জিয়াউর রহমান। সংবিধানের চার মূলনীতি তিনি পরিবর্তন করেছেন। সংবিধানকে তিনি তছনছ করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ইতিহাসকে বিকৃত করছে। ২০০২ সালে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে সময় আমার হাতে হাতকড়া ও আর মুজাহিদের গাড়িতে দেশের পতাকা। এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে! খালেদা জিয়াকে ধিক্কার জানানো ছাড়া আমার আর কিছুই বলার নেই। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ১৫ বছর ধরে আমরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের দিবসটি পালন করে আসছি। ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। এটিকে অস্বীকার করলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকে না। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রসহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যারা অস্বীকার করবে তাদের শাস্তি দাবি করে আসছি। ’৭৫’র পর থেকে ক্রমাগত মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধানের ৪ নীতির সুরক্ষা আমাদের সংবিধানে নেই। ৩০ লাখ শহীদের কঙ্কালের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই বাংলাদেশ, আর শহীদের সন্তানেরা কুলির কাজ করবে তা মানা যাবে না। যারা যুদ্ধের সময় টাকার পাহাড় গড়েছে তাদের সম্পদ বাজেয়াফত করতে হবে। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, গণহত্যা হয়েছিল বলেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গণহত্যা না হলে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। কয়েক বছর ধরেই গণহত্যা অস্বীকার আইনের জন্য বলে আসছি। আইন নিয়ে কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর তা থমকে যায়। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করা এখনও খালেদার আমলের মতে দুরূহ। কেননা পাকিস্তানীদের পক্ষে এখনও হয়ত অনেকের সফট কর্নার আছে। গয়েশ্বরের যে আচরণ তা যদি গণতান্ত্রিক হয় তাহলে অগণতান্ত্রিক আচরণ কোনটি? একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি শামসুল হূদা বলেন, উনার নাম (খালেদা জিয়া) উচ্চারণ করতেও ঘৃণা হয়। উনার জন্ম তারিখ, শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। যুদ্ধের সময় তিনি ক্যান্টনমেন্টে থাকতেন, জেনারেল জানজুয়ার আশ্রিতা ছিলেন। উনি তো যুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। তাই বারবার ইতিহাস বিকৃত করেন। তিনি বলেন, রাজকারদের সম্পদ বাজেয়াফত করতে আইন তৈরি করতে হবে। মীর কাশেমের যে সম্পদের পাহাড় সৌদি আরবে আছে, আমাদের সরকারেরও আছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রথম যে দলিলটি দেখাতে হবে তা হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্পষ্টভাবে গণহত্যার কথা উল্লেখ আছে। এতে দু’দুবার স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছিল তা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ আমাদের বিকৃত ইতিহাস শেখানো হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণার কথা দু’বার উল্লেখ আছে। তিনি বলেন, যারা গণহত্যা বা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছে তারা রষ্ট্রদ্রোহিতা করছে, সংবিধান অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হবে না কেনÑ এই প্রশ্ন রেখে গেলাম। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রাক্তন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন শহীদ সন্তান ডাঃ নুজহাত চৌধুরী ও নাটোরের শহীদ সৈয়দ আলী মুন্সির পুত্র আবুল কালাম আজাদ।
×