ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আর মাত্র ৩ দিন-সর্বত্র বৈশাখী আমেজ, কেনাকাটার ধুম

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১১ এপ্রিল ২০১৭

আর মাত্র ৩ দিন-সর্বত্র বৈশাখী আমেজ, কেনাকাটার ধুম

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ আর মাত্র তিন দিন বাকি! ১৪ এপ্রিল বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ভেদাভেদ ভুলে বাঙালী এবার বরণ করতে যাচ্ছে ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে। চারপাশে এখন শুধুই বৈশাখী আমেজ। নববর্ষ বরণ করতে এখন শুধু পান্তাভাত আর ইলিশ মাছ খাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না বাঙালী, এ সময় পুরো দেশ রঙিন সাজে সেজে ওঠার প্রস্তুতি নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় নতুন পোশাক কেনাকাটায় নগরবাসী এখন ব্যস্ত। ছোট-বড় সকলেরই পছন্দ এসে মিলে যায় বৈশাখ বরণে। সকলেরই পছন্দ লাল-সাদা রঙের পোশাক। তবে এবার লাল-সাদার পাশাপাশি মেজেন্ডা, মেরুন, কমলা, অফ হোয়াইট ও উজ্জ্বল রং ব্যবহার করে পোশাকগুলোকে দেয়া হয়েছে উৎসবের আমেজ। ক্রেতারাও ভিন্ন রঙের পোশাকে বৈশাখ বরণ করতে স্বাচ্ছ্যন্দেই আকৃষ্ট হচ্ছেন লাল-সাদাসহ বাহারি রঙের পোশাক কিনতে। সোমবার রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ছিলো উপচে পড়া ভিড়। তীব্র রোদ মাথায় নিয়ে ক্রেতারা নববর্ষ উপলক্ষে কেনাকাটায় ব্যস্ত। দেখা গেল, সব বয়সী নারী ও পুরুষ সঙ্গে ছোটরাও নিজেদের পছন্দমতো পোশাক কিনতে নিউমার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনী চক মার্কেটে ভিড় জমিয়েছেন। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নিউমার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনী চকের ফুটপাথগুলোতেও বেচাকেনায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের হিমশিম খেতে দেখা গেল। নববর্ষের দিনটি শুধু নারী কিংবা পুরুষের জন্য নয় ছোট থেকে বড় সকলেরই এই দিনটি ঘিরে থাকে নানান আশাআকাক্সক্ষা। আর তাইতো গ্রীষ্মের এই খরতাপও দমিয়ে রাখতে পারেনি এসব উৎসবমুখর মানুষকে। আর এই সুযোগে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বাহারি ডিজাইনের বৈশাখী পণ্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরাও। রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনী চক মার্কেট ঘুরে বৈশাখের জমজমাট কেনাকাটার চিত্র দেখা যায়। মার্কেটগুলোর প্রতিটি দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি দেখা গেল। বিক্রেতারা ক্রেতাদের পছন্দ ও চাহিদামতো পণ্য দেখাতে হিমশিম খাচ্ছেন। মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, শাড়ি, থ্রিপিস, অলঙ্কারে বৈশাখের রং লাল-সাদার প্রাধান্য বেশি দোকানগুলোতে। সেই সঙ্গে রয়েছে লোকজ ঐহিত্যের ছাপ। তবে অন্য রঙের পণ্যও দেখা গেল। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবার পহেলা বৈশাখে লাল-সাদার কদর বেশি থাকে। তবে ফ্যাশনের পরিবর্তন ও ভিন্ন দেখার চিন্তাভাবনা থেকে তরুণীরা বর্তমানে বিভিন্ন রঙের পোশাককেও গুরুত্ব দিচ্ছেন। যারা নিউমার্কেট এলাকায় কেনাকাটা করেন তাদের কাছে শাড়ির জন্য জনপ্রিয় মার্কেট হচ্ছে ধানম-ি হকার্স মার্কেট। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা লাল-সাদার কম্বিনেশনে বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি নিয়ে এসেছেন। এখানে কাতান, তাঁত, টাঙ্গাইল ও বুটিকস, সিল্ক, জামদানি, কোটাসহ নানা ধরনের বৈশাখের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। শাড়িগুলো মিলবে পাঁচশো টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। মোহাম্মদপুর থেকে বৈশাখের কেনাকাটা করতে ধানম-ি হকার্সে এসেছেন আফিফা আজাদ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতি পহেলা বৈশাখেই আমি শাড়ি পরে থাকি। তাও ঐতিহ্যবাহী লাল-সাদা শাড়ি ও কাঁচের চুড়ি। বাঙালীর এতিহ্য নববর্ষকে বরণ করা। এ দিনটি ঘিরে প্রতিটি বাঙালীরই বোধ হয় বিভিন্ন পরিকল্পনা থাকে। নববর্ষের বিশেষ পোশাক নিয়ে হাজির রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলও। বিক্রির ধুম লেগেছে। বিভিন্ন পোশাক বিক্রেতা জনকণ্ঠকে জানান, বৈশাখ উদযাপনে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই যার যার সাধ্যমতো কেনাকাটা করেন। ঈদের মতো বৈশাখ সামনে রেখে বেচাকেনা জমে ওঠে। এ জন্য আমরাও আলাদা প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। সোমবার নগরীর বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ক্রেতারা ব্যস্ত বৈশাখী কেনাকাটায়। বৈশাখ বরণে বসুন্ধরা সিটিতেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। সম্প্রতি বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের লেভেল ১ থেকে ৪ পর্যন্ত বিশাল পরিসরে লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ং-এর ১৭তম আউটলেটের উদ্বোধন করা হয়েছে। পান্থপথে বসুন্ধরার এই শপিংমলে আড়ংয়ের নতুন আউটলেটে গিয়ে দেখা যায়, বৈশাখের কেনাকাটার জন্য বিপুলসংখ্যক ক্রেতা-দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। জানা গেল, এবারের নববর্ষ উপলক্ষে আড়ং-এ গরমে পরার জন্য আরামদায়ক সুতি কাপড়ের সালোয়ার কামিজ ও পাঞ্জাবি আনা হয়েছে। পোশাকে লাল-সাদার পাশাপাশি উজ্জ্বল রং যেমন হলুদ, কমলা, মেরুন ও নীল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া সিøম ফিটের সুতির পাঞ্জাবিতে এপ্লিকের কাজ, এ্যামব্রয়ডারি, মাল্টি কালার প্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। আর শাড়িতে এ্যামব্রয়ডারি, টাই ডাই এপ্লিকের কাজ রয়েছে। শাড়িগুলোর আঁচলে ঝুল ও বিভিন্ন আল্পনা প্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। আছে রঙিন জামদানি ও হাফ সিল্কের চেক শাড়িও। মেয়েদের কামিজে এ্যামব্রয়ডারি ও টাই ডাই, ফুলেল প্রিন্টের কাজ করা হয়েছে। বৈশাখের সাজের সঙ্গে শাড়ি ও সালোয়ার কামিজের সঙ্গে মিলিয়ে পরার জন্য আড়ং-এ আরও আনা হয়েছে বিভিন্ন নক্সার ব্যাগ, গহনা ও ঘর সাজানোর সামগ্রী। বসুন্ধরা সিটির আড়ংয়ে আসা ক্রেতা তমাল ও মিম দম্পতি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এবারের পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বরাবরের মতোই আড়ং রুচিশীল ও গুণগতমানের পোশাক এনেছে। আমরা সব সময়ই আড়ং থেকেই কেনাকাটা করি। আর মাত্র কয়েকদিন পর পহেলা বৈশাখ। এ উপলক্ষেই কেনাকাটা করতে আসা। এবার বসুন্ধরা শপিং মলে আড়ংয়ের নতুন আউটলেট হওয়ায় এখানেই কেনাকাটা করতে চলে এলাম’। ফ্যাশন ফাউস কে-ক্রাফটও বৈশাখী আয়োজনে এনেছে নতুন পোশাকের সম্ভার। বসুন্ধরা শপিংমলের দেশী দশের কে-ক্রাফটের শোরুমে গিয়ে সোমবার দেখা গেল, ছেলেদের সুতি, এন্ডি ও লিলেনের পাঞ্জাবিতে ব্যবহার করা হয়েছে সাদা, লাল, মেরুন ও নীল রং। এতে আছে এ্যামব্রয়ডারি ও প্রিন্টের কাজ। মেয়েদের সালোয়ার কামিজে সুতি ও লিলেনের কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। এর ওপর আছে হ্যান্ড এ্যামব্রয়ডারি ও প্রিন্টের কাজ, আর সুতি ও হাফ সিল্কের রঙিন শাড়িতে টাই ডাই, এ্যামব্রয়ডারি ও টেসেল ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বুটিক হাউসগুলোর মধ্যে রং, অঞ্জন’স, বাংলার মেলা, বিবিয়ানা ও দেশাল-এ বৈশাখের রঙিন পোশাক আনা হয়েছে। লক্ষ্য করা গেছে, লাল-সাদা মিশেলের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ ও শিশুদের পোশাকের প্রতিই ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল বেশি।
×