ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এনডিসি নিতে বাধ্য হচ্ছে রোহিঙ্গারা

রাখাইনে চলছে বুলডোজার অভিযান

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১১ এপ্রিল ২০১৭

রাখাইনে চলছে বুলডোজার অভিযান

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে হত্যা ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার পর এখন চলছে বুলডোজার অভিযান। বুলডোজার স্কেভেটর দিয়ে রোহিঙ্গা বসতি এলাকাগুলোর চিহ্ন মুছে ফেলতে নতুন এ পদক্ষেপ নিয়েছে সে দেশের সরকার। পুড়ে যাওয়া গাছপালাও কেটে ফেলা হচ্ছে। সীমান্তের ওপার থেকে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বিক্ষিপ্তভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। এদের চলাচলের জন্য ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। যারা এ কার্ড নেবে না তাদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা হয়েছে। এনভিসি নামের কার্ড বাঙালী অভিবাসী কার্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গত ২০ মার্চ থেকে এ বিষয়টি জোরালো করা হয়েছে। এ কার্ডের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বাঙালী বলে স্বীকার করে নিতে বাধ্য করার নতুন কৌশল নেয়া হয়েছে। এদিকে, মিয়ানমারের নীতি নির্ধারক মহলের পক্ষ থেকে রাখাইন প্রদেশের গহিন এলাকা সংলগ্ন উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হাতির চারণভূমি করার একটি প্রকল্পও সরকারের উচ্চপর্যায়ে পেশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি যে সব রোহিঙ্গা বসতি এলাকা নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে এগুলোর বিভিন্ন অংশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অভিবাসীদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় যারা বসতি গড়ে তুলতে ইচ্ছুক তাদের জায়গা জমি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সীমান্ত সংলগ্ন রামু, উখিয়া, বিশেষ করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন এলাকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নারী পুরুষদের সে দেশে অবাধ যাতায়াতের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার এলাকায় রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজনও প্রায় নির্বিঘেœ যাতায়াতের সুযোগ পাচ্ছে। মিয়ানমারে কর্মরত বেসরকারী একটি সাহায্য সংস্থা একজন সদস্য সোমবার জনকণ্ঠকে জানান, এনএলডি নেত্রী অং সান সুচি ক্ষমতা গ্রহণের পর রোহিঙ্গা শব্দটি কোন ক্ষেত্রে যাতে ব্যবহার করা না নয়, সে জন্য ডিক্রি জারি করেন। এ ধরনের ডিক্রি জারির পর সে দেশের বিদেশী ডিপ্লোমেটিক মিশনগুলোতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কয়েকটি দূতাবাসের পক্ষে প্রতিবাদও জানানো হয়। কিন্তু এনএলডি সরকার এ নিয়ে থোড়াই কেয়ার করছে না। এদিকে, আরাকান রাজ্যের শেষ সীমানায় অবস্থিত সিটওয়ে (সাবেক আকিয়াব) বন্দর সংলগ্ন কালাচান নামের অঞ্চল দিয়ে কয়েকটি দেশের সঙ্গে গ্যাস পাইপলাইন প্রতিষ্ঠার পর ওই অঞ্চল সংলগ্ন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বসতির ভূমি অধিগ্রহণ করে নেয়া হচ্ছে। এর ফলে বহুজাতিক কয়েকটি তেল কোম্পানিকে অধিগ্রহণের অর্থ প্রদান না করার সুবিধা দেয়া হয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে সোমবার সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী আরাকান প্রদেশে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে যে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয়েছে তা মুছে ফেরতে বুলডোজার অভিযান জোরালো হয়েছে। সে দেশের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং পুলিশের যৌথ অভিযানে গেল বছরের অক্টোবর মাসে নির্বিচারে যে হত্যাযজ্ঞ ও একের পর এক রোহিঙ্গা বসতি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয়েছে সেগুলোর ওপর বুলডোজার চালিয়ে সমান করে ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে রাখাইন প্রদেশের মংডু, রাচিদং, বুচিদং, কালাচানসহ বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান চলছে। এনভিসি নিতে বাধ্য করা হচ্ছে ॥ গত ২০ মার্চ থেকে এনভিসিবিহীন রোহিঙ্গাদের মংডু-কাওয়ারবিল, মংডু-হাইচ্ছুরাতা সড়ক দু’টোতে যাতায়াত করতে দেয়া হচ্ছে না। ওই সড়ক দু’টোতে সেনাবাহিনী টহল জোরদার করে তল্লাশি চালাচ্ছে রোহিঙ্গাদের। ইউই প্রতিনিধিদলের সফর ॥ আরাকানের রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন পরিদর্শন করতে ২৭ মার্চ মিয়ানমার সফরে যান।
×