ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১১ এপ্রিল ২০১৭

ঢাকার দিনরাত

ঢাকার চৈত্রমাস মহাসর্বনাশ বয়ে আনেনি। বলছি তপ্ত আবহাওয়ার কথা। এবার চৈত্র ছত্রিশ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নয়। বরং মাঝেমধ্যে লম্বা সময় নিয়ে বৃষ্টি হওয়ায় কখনও কখনও শীতও অনুভূত হয়েছে। বুধবারের বৃষ্টি নগরবাসীকে বিশেষ আপ্লুত করেছে। গরম অসহনীয় হয়ে ওঠার আগে এই বৃষ্টি ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। তবে সত্যপ্রকাশের দায়বোধ থেকে একথা বলতেই হবে বৃষ্টির ফলে বহু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সেসব এলাকাবাসী। বুধবার সন্ধ্যার আগে মেঘ কেটে গেলে সূর্য তার সোনালী আভা ছড়িয়ে দেয় মহানগরীতে। আকাশছোঁয়া দালান আর উড়াল সড়ক রাজধানীর কোন কোন এলাকার রূপই বদলে দিয়েছে। জনকণ্ঠ ভবন থেকে রোদের চুম্বনসিক্ত নিউ ইস্কাটনের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হই। বিশ্বের উন্নত শহরের চেহারা পেয়েছে এলাকাটি, এ বাস্তবতা আমাদের প্রতিদিনের চোখ বুঝে উঠতে অপারগ থাকে। কিন্তু ক্যামেরার চোখ দিয়ে নিবিড় তাকালে আমরা সেটি অনুধাবনে সমর্থ হই। ছবিটি ফেসবুকে তাৎক্ষণিকভাবে পোস্ট (ছবি দেখুন) করার পর চটজলদি যেসব মন্তব্য পেতে থাকি তাতে বুঝে উঠতে পারি মহানগরীর ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে আবদ্ধ ও রুদ্ধ মানুষের মন কতই না স্বাধীন বিচরণশীল ও সৌন্দর্যপিপাসু। ষাটোর্ধ এক ঢাকাবাসীর মন্তব্য উল্লেখ করার মতো। তিনি বললেন, ‘মেঘ আর বর্ষা শেষে সূর্যস্নাত কী পবিত্র সুন্দর এই ঢাকা! ছবিটির কল্যাণে এই অপরূপ শোভা দেখলাম ঢাকার!’ গত সপ্তাহে রাজধানীতে আলেম মোশায়েখদের মহাসম্মেলন হয়ে গেল, যেটিতে যোগ দিয়েছিলেন আরবের দু’জন চিন্তাবিদ, পবিত্র মক্কা শরীফ ও মসজিদে নববীর দুই খতিব। তাদের বক্তব্য লাখো আলেমকে অনুপ্রাণিত করবে সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলার সঙ্গে ধর্মকে জড়িয়ে ফেলার ভ্রান্ত প্রচারণার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের কাজে। আসন্ন নববর্ষ বিশ্ব স্বীকৃতি ও ধারাবাহিকতার উৎসব মাঝখানে আর দুই দিন, তারপরেই নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ। আকাশে বাতাসে ভেসে আসছে উৎসবের আগাম ছটা। তবে তাতে কিছুটা বিরক্তিও ভর করেছে। গত বছরও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল। অনেকের সঙ্গে কথা বলেই এমনটা মনে হলো। মানুষ চায় বাধাবিঘœহীন নিরঙ্কুশ উৎসব। পুলিশের চাপিয়ে দেয়া সীমাবদ্ধতায় মন সায় দেয় না। যদি উৎসবকে সীমিত ও সংকুচিত করে ফেলতে হয় অল্প ক’জন বখাটের কারণে, কিংবা আরও স্পষ্ট করে বললে উৎসববিরোধী বাঙালী সংস্কৃতিবিরোধী জামায়াত-শিবির-হেফাজতী চক্রের হুমকিকে যদি আমলে নেয়া লাগে, তাহলে আফসোসের সীমা পরিসীমা থাকে না। এ যেন অনেকটা সেরকম : সড়কে সড়কে ট্রাক-বাস বেসামাল হয়ে পরিণত হতে পারে যন্ত্রদানবে। তাই হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকলাম। বলা যায়, বিষয়টা এমন : ঘরের দরোজা-জানালাও বন্ধ রাখলাম, পাছে ওই পথ দিয়ে রোগব্যাধি ঢুকে পড়ে। আসলে এবারের উৎসব হওয়া উচিত আরও প্রাণবন্ত ও প্রসারিত। এবারই মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল। তার ওপর রমনার বটমূলে ছায়ানটের নববর্ষ বরণের অর্ধশতক পূর্ণ হচ্ছে। একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন সাহস, সৃষ্টিশীলতা ও অঙ্গীকার পালনের ধারাবাহিকতার ভেতর দিয়ে কিভাবে জাতির জীবনে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে পারে তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত ছায়ানট। প্রথমদিকে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীত ও সাহিত্যচর্চায় ব্রতী থাকলেও কালে কালে সংগঠনটি হয়ে ওঠে বাঙালিত্বের চেতনা ও স্বপ্ন লালনকারী এক উজ্জীবনী অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ বরণে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের মুহূর্তে রমনার বটমূলে ছায়ানটের আকর্ষণীয় আয়োজন এখন ঐতিহ্যে পরিণত। এ বছর তার অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য এক আশাজাগানিয়া গৌরবের মাহেন্দ্রক্ষণ। পঞ্চাশ-পূর্তির আয়োজনটিও হবে বিশেষ বর্ণচ্ছটায় রঙিন। এলক্ষ্যে পরিকল্পিত হয়েছে মাসব্যাপী নানা আয়োজন। ছায়ানটের ধারাবাহিক পথ পরিক্রমাটি ফিরে দেখা, সংস্কৃতির সংকট ও সম্ভাবনা শীর্ষক আলোকপাতসহ বিবিধ আয়োজনের ভেতর দিয়ে সমকালীন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিম-লটিকে বুঝে নেয়ার প্রয়াস থাকবে। আর পয়লা বৈশাখের বিশেষ আয়োজনে এবারের মূল থিম বা বিষয় : আনন্দ, বাঙালীর আত্মপরিচয়ের সন্ধান ও অসাম্প্রদায়িকতা। সব মিলিয়ে দেশের মানুষের মনে একটি ইতিবাচক সাংস্কৃতিক অভিঘাত জাগানোরই পরিকল্পনা। বহমান সংস্কৃতির স্রোতধারায় সংগঠন হলো প্রণবন্ত গতিময় সাম্পানের মতো, যার পালে নব নব হাওয়ার পরশ লাগানোর জন্য চাই তার নবায়ন ও নবজাগরণ। ছায়ানট সে সম্পর্কে সচেতন বলেই কালে কালে এটি হয়ে উঠেছে জাতির সাংস্কৃতিক বাতিঘর। নতুন বছরের প্রথম প্রভাতে ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমান সভাপতি ড. সনজীদা খাতুনের জাতির অভিভাবকসুলভ দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য আমাদের জন্য এক পরম প্রাপ্তি। রাত বারোটা এক মিনিটে নয়, বাংলা নববর্ষ শুরু হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে (আহা ওই সময়ে অনুভব করা যায় ‘বৈশাখের ভোরের হাওয়া আসে মৃদুমন্দ’)। রাজধানীবাসীর আয়েশি অংশটিও প্রভাতনিদ্রার সুখটুকু ঝেড়ে ফেলে বৃহৎ আনন্দের সন্ধানে নববর্ষ উৎসবে যোগ দেয়। সকলেই যে সকাল-সকাল বেরিয়ে পড়েন রমনার উদ্দেশে এমন নয়। টেলিভিশনের কল্যাণে এখন কেবল ছায়ানট কেন, ধানম-ির রবীন্দ্রসরোবরসহ কয়েকটি স্থানে আয়োজিত বেশকিছু সাংস্কৃতিক সংগঠনের বর্ষবরণ উৎসব প্রত্যক্ষ করা যায় সরাসরি। এ উদ্যোগের ফলে দূর পরবাসে অবস্থানকারী বাংলাদেশের অগণিত মানুষের সঙ্গে মাতৃভূমির ভৌগোলিক দূরত্ব মুহূর্তে ঘুচে যায়। তবে হ্যাঁ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে বাড়ির কাছাকাছি জায়গায় কোন না কোন আয়োজন চলছেই বর্ষবরণের। (আমি থাকি উত্তরায়। এখানে একাধিক বড়সড় উৎসব চলে।) নগরবাসীর নিরানন্দময় নিস্তরঙ্গ জীবনপ্রবাহে বৈশাখ সত্যিকারার্থেই নিয়ে আসে আনন্দের উপলক্ষ। ভোজ আর উপভোগের পহেলা বৈশাখে বাঙালী আপনা থেকেই আত্মপরিচয় খুঁজে পায় এবং আর দশজন স্বজাতির সঙ্গে আত্মীয়তা অনুভব করে। ধর্মীয় পরিচয় সেখানে সামান্যতম প্রতিবন্ধক নয়। বছরের প্রথম দিনে এটি এক অনন্য অর্জন। আমাদের জাতীয় জীবনে পহেলা বৈশাখ এমন একটি মুহূর্ত যখন বাঙালী হিসেবে আমাদের মনে এক অনিঃশেষ গৌরব এসে বাঁশি বাজায়; জেগে ওঠে ভ্রাতৃত্ববোধ, মুমূর্ষুরে উড়ায়ে প্রাণে বেজে ওঠে নব আনন্দ গান। ভুলে যাচ্ছি না যে দেশের পাহাড়ি জনপদে অবাঙালী আদিবাসীরা বৈসাবী উৎসবে মাতে পহেলা বৈশাখের ঠিক আগে-আগে। ঢাকার বাইরে দেশজুড়েই শহরে শহরে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব চলে। যদিও জীবনাচারে বাংলা যাদের চিরসখা সেইসব পল্লীবাসীর পহেলা বৈশাখ উদযাপনে রয়েছে কিছুটা ভিন্নতা। হালখাতা আর গ্রামীণ মেলার ভেতর দিয়ে বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামেও নতুন বছরের সূচনালগ্নের প্রাণোচ্ছল হাওয়া এসে আছড়ে পড়ে। নগর কিছুটা প্রভাবিতও করে চলেছে এখন পল্লীকে। পহেলা বৈশাখে ঢাকার রাস্তায় ঢল নামবে মানুষের, এ তো জানা কথাই। খোলা প্রাঙ্গণে ও সড়কে মানুষের এই মহাসমাবেশ কেবল একুশে ফেব্রুয়ারির জনসমাগমের সঙ্গেই তুলনীয়। তবে একুশের অভ্যন্তরে শোকবিধুরতা থাকে, আনুষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা থাকে যা সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত পহেলা বৈশাখে। এই দিন কেবলই যেন আনন্দে ডানা মেলবার। সমগ্র রাজধানীই যেন হয়ে ওঠে সংস্কৃতিমেলাÑ যার অংশ বৈশাখী মেলা, আবৃত্তি আর গানের আসর। একসময় জাতীয় কবিতা পরিষদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠের আয়োজন করত। এখন আর দেখি না। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বৈশাখ বিষয়ক স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরে একবার অংশ নিতে গিয়ে মনে হয়েছিল কবিরাও উন্মুখ হয়ে থাকেন নববর্ষে তার পাঠককে নতুন কবিতার স্বাদ দিতে। ভেবে পাই না প্রতি বৈশাখে কেন নয় একটি নির্দিষ্ট স্থানে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠের আয়োজন? রমনার বটমূলের উৎসবের মতো সেটিও হতে পারে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গৌরবদীপ্ত অংশ। তবে বৈশাখ কেবল আনন্দের নয়, প্রতিবাদেরও। সংবাদপত্রে বৈশাখী ক্রোড়পত্র ধারণ করে বৈশাখের চালচিত্র। উৎসবের শাখা-প্রশাখার আলোকপাত আর বৈশাখ-বন্দনা থাকে তার বড় জায়গা নিয়ে। ফিবছর পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরে অগ্রযাত্রা এবং আত্মশুদ্ধির শপথ নেয়া হয়। আমাদের চিন্তাবিদরা বিশ্বসভায় বাঙালীর অবস্থান শনাক্ত করেও লেখেন। তবে তা যৎসামান্যই। প্রতিবাদের জায়গাটি অপ্রতুল নয়। এর প্রকাশ্য রূপ দেখতে পাই চারুকলা থেকে বেরুনো শোভাযাত্রায়। লোক ঐতিহ্যের মোটিফের সমান্তরালে এতে থাকে প্রতীকী মোটিফ। স্বৈরাচার, জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদবিরোধিতা তাতে প্রত্যক্ষ করা যায়। দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গির বার্তা থাকে তাতে, থাকে আন্দোলনের সঙ্কেত। আনন্দ প্রকাশের সহযোগে কখনও কখনও শাসকমহলের অন্যায্য কাজের সমালোচনার এই ভঙ্গিটি ব্যতিক্রমী। বিশ্বের অন্যান্য দেশে নানা জাতির বর্ষবরণের উৎসব থেকে বাঙালীর এই অসামান্য উৎসব এভাবেই পৃথক ব্যঞ্জনা লাভ করে। বাঙালীর এই প্রতিবাদী সত্তাটি বাস্তবিকই অসাধারণ। বৈশাখের শক্তিটিকে ঠিকই চিনেছে অপশক্তি, তাই পহেলা বৈশাখেই তারা আত্মঘাতী হামলার উদ্বোধন ঘটিয়েছিল। বৈশাখ তাই আমাদের নতুন করে সতর্ক হতে শিখিয়েছে। একাত্তরের পরাস্ত শক্তির প্রতিশোধস্পৃহা সম্পর্কে নিশ্চিত করেছে। দু’বছর আগে রমনা উদ্যানের গ্লানিটুকু উড়িয়ে দিতে চাই বেশি বেশি করে নারীর অংশগ্রহণ। এবং অবশ্যই তাদের পাশে থাকবে সচেতন নাগরিকরা। যাতে ছোটখাটো ঝামেলা বাধাতেও কারও দুঃসাহস না হয়। বলা দরকার, মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধাচারণকারীরা নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে। বর্ষবরণের মতো সর্বজনীন অসাম্প্রদায়িক উৎসবের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এমনকি ডিজিটাল মাধ্যমও তারা ব্যবহার করছে। আমার মেইলে একাধিক আইডি থেকে ‘অমঙ্গল যাত্রা হিন্দুদের ধর্ম ও সংস্কৃতির অংশ’ শিরোনামে উস্কানিমূলক ই-মেইল এসেছে। সেখান থেকে উদ্ধৃতি আর নাই বা দিলাম। বর্ষবরণে বর্ণিল পোশাক ভারতীয় বাংলা এবং হিন্দী সিরিয়ালের নায়িকাদের পরিহিত পোশাক থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ঈদের পোশাক বানিয়ে বাজার মাত করতে দেখছি আমরা অধুনা কয় বছর। এটা অস্বীকার করব না, সমাজবাস্তবতাই এমন যে, কী গ্রাম কী শহরÑ সর্বত্র গৃহিণী দর্শকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় বাংলা ও হিন্দী সিরিয়াল। এসব সিরিয়ালে পারিবারিক জটিলতা, অন্ধ ধর্মবিশ্বাস বা ধর্মীয় কুসংস্কার এবং পরকীয়াই প্রধান উপজীব্য। গৃহিণীরা এসব গোগ্রাসে গেলেন। ব্যবসায়ীরা বোঝেন এই মনঃস্তত্ত্ব। তাই সেভাবেই পোশাকের বাজার তৈরি করেন, বাজারে সরবরাহ করেন। নায়িকার পোশাকের অনুকরণে তৈরি এমন দু’তিনটে থ্রিপিস অতীতে হিট হয়েছে ঈদের বাজারে। তাই বলে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির নক্সাসহ বিভিন্ন অনুষঙ্গে তৈরি পোশাকের চাহিদা মুখ থুবড়ে পড়েনি। ঈদে প্রতিবেশী দেশের পোশাক দাপট দেখালেও বাংলা নববর্ষে শুধুই দেশীয় পোশাকের জয়জয়কার। তাতে থাকে বাঙালিয়ানা। সরকার উৎসব বোনাস প্রচলন করেছে বৈশাখ উপলক্ষে। ফলে উৎসবের কেনাকাটাও এবার জমজমাট। অন্তত এক কুড়ি প্রতিষ্ঠান রীতিমতো ব্র্যান্ড হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এরা নিজেদের শিল্পী তথা নক্সাকার এবং কারিগরদের মাধ্যমে পোশাক তৈরি ও যোগান দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারেন না। তাই ভরসা করেন ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিপর্যায়ের শিল্পী ও কারিগরদের ওপর। ফলে বর্ষবরণের পোশাক শিল্পে নিয়োজিত হন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডিজাইনার-দর্জি-কর্মীবৃন্দ। এরা তো আছেনই। কিন্তু দোকান নেই, নামধামের প্রতিযোগিতায় যাননি এমন বহু নারী ও পুরুষ আছেন যারা তাদের অন্তর্গত শিল্পীসত্তার প্রেরণা ও তাগিদ থেকে বৈশাখ মৌসুমে পোশাক ডিজাইন করে থাকেন। নামমাত্র মুনাফায় এসব তারা বন্ধুমহলে বিক্রি করেন। কেউ যেচে তাদের তৈরি পোশাক শোরুমে রাখতে চাইলে সম্মত হন বটে। যদিও এরা শাড়ি বা থ্রিপিস তৈরি করেন যেমন মনের মাধুরি মিশিয়ে একেবারে নিজস্ব ঢঙে দেশীয় সংস্কৃতির ছোঁয়ায়Ñ তেমনি এরা চান ক্রেতারা মুগ্ধ হয়ে মন থেকেই এসব পোশাক কিনুক। এ রকম একাধিক ডিজাইনারের কাজ দেখে মনে হয়েছে আমাদের আশপাশেই কতই না এমন সৃজনশীল মানুষ রয়েছেন যারা প্রধান অসাম্প্রদায়িক উৎসবকে রাঙিয়ে তুলতে এবং দেশের ঐতিহ্যের পতাকা উর্ধে তুলে ধরতে নিভৃত চর্চা করে চলেছেন। এমন নিভৃতচারী ডিজাইনারের পোশাক প্রদর্শনীর জন্য যদি কোন সংস্থা এগিয়ে আসত তবে অতিবিজ্ঞাপিত এবং প্রতিযোগিতায় বিজয়ী অভিনব পোশাকের ধারার সমান্তরালে বাঙালীর সৃষ্টিশীলতার আরও নমুনা আমাদের চোখের সামনে প্রতিভাত হতে পারত। সেসব পোশাকও স্বতন্ত্র ঔজ্জ্বল্যে বিকশিত হওয়ার পথ পেত। তবে অস্বীকার করব না ফেসবুক ভাল একটা মাধ্যম হয়েছে ওইসব শিল্পীদের তৈরি পোশাক প্রদর্শন ও বিপণনের। ক্রেতা ঘরে বসে পেয়ে যাচ্ছেন পছন্দের উৎসব পোশাক। ১০ এপ্রিল ২০১৭ [email protected]
×