ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্থিতিশীলতায় অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১১ এপ্রিল ২০১৭

স্থিতিশীলতায় অর্থনীতি

যদি শুধু অর্থের মানদ-ই হয় দেশের সমৃদ্ধির এক ও একমাত্র পরিমাপক, তাহলে সেই সমৃদ্ধি যে আক্ষরিক অর্থেই অমূল্য সম্পদ হয়ে ওঠে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেন সেটাই বার বার প্রমাণিত হচ্ছে। হবারই কথা। কারণ দেশটি এখন নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আর দু’বছরের মাথায় আসীন হবে মধ্যম আয়ের দেশে। বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে এখন উন্নয়নের রোল মডেলে। উন্নয়নের পথ ধরেই অগ্রগতি হচ্ছে অর্থনীতির। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এই অর্থনীতি। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন তথা এসডিজি অর্জন করবে দেশটি। জাতিসংঘ ঘোষিত এই এসডিজি সফলভাবে বাস্তবায়নের কৃতিত্বটুকু নিতে বাংলাদেশ কার্পণ্য করেনি। হু হু করে বিদেশী মুদ্রা ঢুকছে বাংলাদেশে। তাতে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে দেশটি। বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয় বাড়ছে। আর ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে সমাজের একাংশের। ফলে, আরও বেশি করে দামী বিদেশী ভোগ্যপণ্য ঢুকছে বাংলার বাজারে। কারণ, সেগুলো কেনার মতো ক্ষমতা বেড়ে গেছে দেশবাসীর, পুঁজির বিকাশের স্বাভাবিক নিয়মে। গোটা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থাও হয়ে পড়েছে পুঁজিকেন্দ্রিক। পুঁজির যাবতীয় ‘রূপটান’ লেগে চলেছে বাংলাদেশের শরীরে। পুঁজি যেমন দেয় বিস্তর যাচাই-বাছাই এবং বিচার করে, তেমনই অনেক কিছু নিয়ে নেয় নির্বিচারে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পুঁজিবাজার উন্নয়ন জরুরী যেমন, তেমনি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বাড়াতে বন্ড মার্কেটকে সচল করা সঙ্গত। এক সময়ের কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৭৮ ভাগ। এখন তা ১৫ দশমিক ৫ ভাগ। শিল্পে এখন ২৮ দশমিক ১ ভাগ এবং সার্ভিস সেক্টরে ৫৬ দশমিক ৩ ভাগ। স্বাধীনতার পর দেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর ছিল খাদ্যাভাব। আর আজ দেশের প্রায় ষোলো কোটি মানুষের খাদ্যের কোন অভাব নেই। দেশের চাহিদা পূরণ করে বাংলাদেশ এখন চাল বিদেশে রফতানি করছে। দেশের রফতানি ৩৪৮ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে যা হবে ৬০ বিলিয়ন ডলার। ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে জাতীয় বাজেট ছিল মাত্র ৫২৮ কোটি টাকা। আর চলতি বছর ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার গত বছর ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। মাথাপিছু আয় এক হাজার ৪৬৬ ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল মনে করছে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। রিজার্ভ গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এটি অর্থনীতিতে স্যালাইন হিসেবে কাজ করছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কম, রেমিটেন্স প্রবাহ ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ার কারণে অর্থনীতিতে সুফল আসবে। এর সুবিধা হিসেবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়বে। মূল্যস্ফীতি থাকবে নিয়ন্ত্রণে। চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি ও জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঠিক থাকছে। তবে বিগত অর্থবছরের তুলনায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ানো একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এছাড়া টেকসই সামাজিক অর্থনীতির জন্য সরকারী বিনিয়োগ বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতা তৈরি এবং উৎপাদনমুখী খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা দরকার। তাছাড়া কর আহরণ পদ্ধতি আরও আধুনিকায়ন করা জরুরী। স্থিতিশীল অর্থনীতির প্রবাহ বহাল রাখার জন্য রাজস্ব আয় বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য নতুন নতুন খাতের সন্ধান করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে রাজস্ব আদায় যেমন বাড়বে, তেমনি জিডিপির প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আয় আরও বাড়বে। মূলত দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা, জনজীবনের মানোন্নয়ন, অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিকে গতিশীল রাখার জন্য পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে। আর্থিক খাতে সরকারকে শক্তভাবে মনিটরিং করার বিকল্প নেই। আর্থিক সফলতা বাংলাদেশের জন্য জরুরী। আর সে জন্যই সচেতনভাবে এগোতে হবে।
×