ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১১ এপ্রিল ২০১৭

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সম্পর্ক আর দূরত্বের বিচারে সবচেয়ে কাছের ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভারত। অথচ দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৫শ’ কোটি ডলার। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে আরোপিত বাধাগুলো দূর করা। এছাড়া দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশটির প্রয়োজন বাংলাদেশকে সহায়তা করা। এতে পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, রফতানিও বাড়বে। এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশের বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয়রা। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ৪ হাজার ৭৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিল ৬৮৯ দশমিক ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার বিপরীতে ৫৪৫০.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। অর্থাৎ ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৪৭৬১.০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারতে মাত্র ৬৯ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করতে পেরেছে বাংলাদেশ। আর কিনতে হয়েছে সাড়ে পাঁচ শ’ কোটি ডলারের। অর্থাৎ এক টাকা রফতানির বিপরীতে আমদানি ৮ টাকা। আর এতেই ঘাটতি পৌনে পাঁচ শ’ কোটি ডলার। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ১০ শতাংশ হয়ে থাকে ভারতের সঙ্গে। একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারও প্রতিবেশী দেশটি। তবে দুই দেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির কারণে ভারত বাংলাদেশ থেকে যতটা সুবিধা নিচ্ছে, বাংলাদেশ সেটা পারছে না। তবে ভারতে বর্তমানে ৯৪ শতাংশ পণ্য রফতানি শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে বাংলাদেশ। জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত ও পরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেসরকারী পর্যায়ে আরও বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হয়েছে। এসব চুক্তির ফলে অদূর ভবিষ্যতে বাণিজ্য ঘাটতি অনেকাংশেই কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে ৭২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে চুক্তি করেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির হারে উভয়পক্ষই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে ভারতের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিশেষ করে মেরিকো, সিয়াট, টাটা মটরস, গোদরেজ, সান ফার্মা ও এশিয়ান পেইন্টসের মতো ভারতীয় কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করেছে বা প্রক্রিয়ায় রয়েছে। গত দেড় দশকে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি দশগুণ বেড়েছে, অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারতের রফতানি বেড়েছে ছয়গুণ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে ৬১৪ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, বাংলাদেশের পণ্য ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্তির বাধাগুলো (নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার) দূর করতে হবে। এতে বাংলাদেশের পণ্য ভারতে রফতানি করা অনেক সহজ হবে। ফলে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে আরও বেশি পণ্য রফতানি করতে পারবে। ভারতের যেসব ব্র্যান্ডের পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় সেসব পণ্য ভারতেও বিক্রি করার সুযোগ দিলে বাংলাদেশ লাভবান হবে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ভারতের যেসব পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় যেমন, ডাবুর, ইমামি এসব পণ্য ভারতেও রফতানি করার সুযোগ দিতে হবে। কেননা ভারতে এসব ব্র্যান্ড পরিচিত বলে সহজেই ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো যাবে। এজন্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের বাধাগুলো দূর করা জরুরী বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো এবং সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকারে যে বাধাগুলো সম্প্রতি আরোপ করা হয়েছে, যেমন ‘এন্টি ডাম্পিং শুল্ক’ এসব দূর করতে রফতানিকে সহজ করতে হবে। আন্তঃরাষ্ট্রিক যোগাযোগ ও বিনিয়োগকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে উল্লেখ করে সিপিডির সাবেক এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাধাগুলো দূর হলেই যে রাতারাতি দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমে যাবে, এমন নয়। এজন্য প্রয়োজন উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়ানো। বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলার সবচেয়ে বড় উপায় পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়ানো। এ সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে যোগাযোগ ও বিনিয়োগ।’ ‘বাংলাদেশ-ভারতের যে রেল যোগাযোগ রয়েছে, তা আরও সম্প্রসারণ বা নতুন নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানির যে কথা শোনা যাচ্ছে তা যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে আমাদের শক্তি (এনার্জি) ঘাটতি কমবে। আর শক্তি ঘাটতি কমলে তা সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সহায়ক হবে’- বলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
×