ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী কর্মীদের জন্য এবার জীবন বীমা চালু হতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১০ এপ্রিল ২০১৭

প্রবাসী কর্মীদের জন্য এবার জীবন বীমা চালু হতে যাচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ সরকার অবশেষে প্রবাসী কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য ইন্স্যুরেন্স চালু করতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ ’১১ সালে প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের অধিকার সংরক্ষণে জীবন বীমা (লাইফ ইন্স্যুরেন্স) করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়ে আসছে। কিন্তু নানা অজুহাতে প্রবাসী কর্মীসহ তাদের পরিবারের জন্য কোন বীমা হয়নি। সম্প্রতি জাতিসংঘের ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন দ্য প্রটেকশন অব দ্য রাইটস অব অল মাইগ্রেন্টস ওয়ার্কার্স এ্যান্ড মেম্বার্স অব দেয়ার ফ্যামিলি’তে (আইসিআর এমডব্লিউ) বাংলাদেশ সরকার অনুসমর্থন দিয়েছে। ফলে প্রবাসী কর্মীরা লাইফ ইন্স্যুরেন্স সুবিধার আওতায় আসার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রবাসীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে বলে এলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও প্রবাসী কল্যাণ তহবিলে কর্মীদেরই প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা জমা পড়ে আছে। এই টাকা থেকেই কর্মীদের নামে ইন্স্যুরেন্স বা বীমা করা সম্ভব। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড এই টাকা অলস ফেলে রেখেছে। কোন কর্মী বিদেশে মৃত্যুবরণ করলে লাশ দেশে আনার ক্ষেত্রে এখান থেকে কিছু টাকা সহযোগিতা করা হয়। এর বাইরে কর্মীদের টাকা অন্যকোন কাজে ব্যবহার হচ্ছে না। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য বীমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, প্রবাসী কর্মীদের জন্য ইন্স্যুরেন্স চালু করতে যাচ্ছে সরকার। কমিটি ‘অন মাইগ্রেন্টস ওয়াকার্সের’ সুপারিশের ভিত্তিতে প্রবাসী কর্মীদের জন্য এই ইন্স্যুরেন্স চালু করবে সরকার। মাইগ্রেশন গবর্নেন্স ইস্যুতে সরকার এ কাজ করতে আগ্রহী। এছাড়া প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আবাসন বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সরকারের দায়িত্ব ও সদিচ্ছার বিষয়টি উল্লেখ করেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। সূত্র মতে, প্রবাসী কর্মীদের পরিবারের দুঃখ দুর্দাশা দূর করতে বছরের পর বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মীরা বিদেশে কাজ করছে। পরিবারের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে তারা বড় ভূমিকা রাখছে। তাদের জন্য ইন্স্যুরেন্স বা বীমা সুবিধা পেলে নিজে ও পরিবারের সদস্যরা একদিকে আর্থিক নিরাপত্তা অন্যদিকে আত্মসম্মান বৃদ্ধি পাবে। প্রবাসে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের খোঁজ রাখে না কেউ। যদি কর্মীদের ইন্স্যুরেন্স বা বীমা থাকত তাহলে দরিদ্র এসব কর্মীর লাশ দেশে আনতেও সরকার আন্তরিকতা বেশি হতো। দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপিতে এ সূচকের অবদান ৬ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। অথচ ২০০৮-০৯ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত এর অবদান ৯ শতাংশের বেশি ছিল। শুধু জিডিপিতেই নয়, শীর্ষ রেমিটেন্স আহরণকারী দেশগুলোর তালিকায়ও অবনমন হয়েছে বাংলাদেশের। ২০১২ সালে শীর্ষ রেমিটেন্স আহরণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম অবস্থানে ছিল। কিন্তু বর্তমানে একধাপ অবনতি হয়ে অষ্টমে। এজন্য পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে জনশক্তি রফতানিতে ভাটা, অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন মুদ্রার দর পতন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমে যাওয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলা রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি হিসাবের ভারসাম্য বজায় রাখা, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু ধারাবাহিক রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেলে বৈদেশিক লেনেদনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর ধাক্কা লাগতে পারে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরও রেমিটেন্স আহরণে খুব বেশি উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে যে পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ কম। এতে উদ্বিগ্ন সরকারী মহলের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও। অর্থনীতিবিদরা বলেন, ইউরোপ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে আমাদের প্রচুর বাংলাদেশী কাজ করেন। সম্প্রতি সেসব দেশের মুদ্রার বেশ খানিকটা অবমূল্যায়ন হয়েছে। সে অবমূল্যায়নের ফলে সেসব দেশে অবস্থানকারী আমাদের প্রবাসীরা এখন আগের চেয়ে কম অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। রেমিটেন্স কমার এটাই প্রধান কারণ হতে পারে। বর্তমানে রেমিটেন্স প্রবাহ আরও কমেছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আহরণ করে, এমন শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আহরণ করে দেশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সপ্তম।
×