ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্যানারিমুক্ত হাজারীবাগ

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১০ এপ্রিল ২০১৭

ট্যানারিমুক্ত হাজারীবাগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গ্যাস বিদ্যুত ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে অবশেষে হাজারীবাগের সকল ট্যানারি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হলো। রবিবার দুপুরের আগে পরিবেশ অধিদফতরের অভিযান শেষ করা হয়। এর মাধ্যমে রাজধানীর হাজারীবাগ ট্যানারি ইতিহাসের ৬৭ বছরের অবসান হয়েছে। এই ট্যানারিগুলোর নতুন গন্তব্য হচ্ছে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে। তবে ২০৫টি ট্যানারির মধ্যে চামড়া শিল্পনগরীতে জমি পেয়েছে ১৫৫টি। বাকি ৫০টির ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের ৩০ কোটি টাকা জরিমানা মওকুফ করে দিয়েছেন আপীল বিভাগ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারখানা না সরানোয় তাদের এই জরিমানা ধার্য করা হয়েছিল। তবে হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য প্রত্যেক মালিককে ৫০ হাজার টাকা করে ধার্য করেছেন আদালত। একই সঙ্গে হাজারীবাগের পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটনা যেন সাভারে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন আপীল বিভাগ। ট্যানারিগুলোকে ১৫ দিনের মধ্যে ওই টাকা শ্রম মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। হাজারীবাগ থেকে যেসব কারখানা সাভারে যাবে, তাদের শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও কল্যাণে ওই অর্থ ব্যয় করবেন শ্রম সচিব। ট্যানারি মালিকদের একটি আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ রবিবার এই আদেশ দেয়। আদেশে আপীল বিভাগ আরও বলেছে, যেসব ট্যানারি কারখানা সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুত সংযোগের আবেদন করেছে, তাদের ১৫ দিনের মধ্যে সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সাভারের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদফতর ও বিসিককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য সিইটিপি ও অন্যান্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে স্থানান্তর প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ হবে না। এই নির্দেশনা অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে গিয়ে ধলেশ্বরী যেন আরেকটি বুড়িগঙ্গা না হয়। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর পর সেখানে নিজস্ব সম্পত্তি বা স্থাপনা মালিকরা যদি অন্য কোন কাজে ব্যবহার করতে চান, তাহলে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে সেখানে গ্যাস, বিদ্যুত, পানির সংযোগ দিতে বলেছে আদালত। প্রস্তুত সাভার ॥ বিসিক সূত্রে জানা গেছে, রবিবার পর্যন্ত সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ৫৩টি ট্যানারি ট্যানিং ড্রাম স্থাপন করেছে। এর মধ্যে ৪৮টি ট্যানারি পুরোমাত্রায় উৎপাদনে গেছে। ১৩৯টি কারখানা স্থায়ী বিদ্যুত সংযোগের জন্য আবেদন করেছে পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে। সবগুলো ট্যানারির ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হলেও টাকা জমা দিয়েছে ৮৬টি প্রতিষ্ঠান। কারখানা চালুর জন্য ৪৮টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থায়ী বিদ্যুত সংযোগ নিয়েছে। নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য ৯২টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস বরাবর আবেদন করেছে। আর পানির জন্য আবেদন করেছে ৪৫টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবু বকর সিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, সাভারের শিল্পনগরী পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করবে। বিসিক থেকেও আদালতের নির্দেশনা মেনে কাজ করা হচ্ছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ ॥ হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের ৩০ কোটি টাকা জরিমানা মওকুফ করে দিয়েছেন আপীল বিভাগ। পরিবেশের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৪২ ট্যানারির বকেয়া ৩০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা মওকুফ করে কারখানাগুলোকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে জমা দিতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত। পরিবেশের ক্ষতিপূরণ বাবদ বকেয়া অর্থ পরিশোধের আদেশ স্থগিত এবং প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার রায় পুনর্বিবেচনার জন্য এই আবেদন করেছিলেন ট্যানারি মালিকরা। আদালতের নির্দেশের পরও সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে না গিয়ে যেসব চামড়া কারখানা রাজধানীর হাজারীবাগে থেকে গেছে, তাদের গ্যাস-বিদ্যুত-পানির সংযোগ ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্ন করেছে পরিবেশ অধিদফতর। রবিবার আদেশে আপীল বিভাগ বলেছে, যেসব ট্যানারি কারখানা সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুত সংযোগের আবেদন করেছে, তাদের ১৫ দিনের মধ্যে সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সাভারের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদফতর ও বিসিককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য সিইটিপি ও অন্যান্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে স্থানান্তর প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ হবে না। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর পর সেখানে নিজস্ব সম্পত্তি বা স্থাপনা মালিকরা যদি অন্য কোন কাজে ব্যবহার করতে চান, তাহলে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে সেখানে গ্যাস, বিদ্যুত, পানির সংযোগ দিতে বলেছে আদালত। আপীল বিভাগে ট্যানারি মালিকদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রসঙ্গত, গত ২ মার্চ হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি না সরানোয় ১৫৪ কারখানাকে জরিমানার ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দুই সপ্তাহের মধ্যে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর আগে শিল্পসচিব আদালতে এসে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিয়ে জানান, আগস্ট থেকে এই কারখানাগুলোর জরিমানার টাকা বকেয়া রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ একটি সম্পূরক আবেদন করে কারখানার গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আবেদন জানালে আদালত তাদের বকেয়া টাকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। হাজারীবাগ ট্যানারি ইতিহাস ৬৭ বছরের। ১৯৫০ সালের ৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ থেকে হাজারীবাগে স্থানান্তর করা হয়। আর ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল হাজারীবাগ থেকে ট্যানারির গ্যাস বিদ্যুত পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। শনিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে পরিবেশ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট তিতাস গ্যাস, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষকে (ঢাকা ওয়াসা) সঙ্গে নিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ শুরু করে। হাইকোর্টের রায় বহাল ॥ হাজারীবাগে ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার করে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার তৈরির কারখানাগুলো বন্ধে আগের রায়ই বহাল রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত। পাঁচ বছর আগে দেয়া হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে পোল্ট্রি ও মাছের খাবার প্রস্তুতকারদের সমিতির করা আপীলের আবেদন গত বছর ডিসেম্বরে খারিজ করে দিয়েছিল আপীল বিভাগ। সমিতির করা আপীল পুনরুজ্জীবিত (আপীল ফর রিস্টোরেশন) করার আবেদনও রবিবার খারিজ করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের বেঞ্চ। বিষয়টি হাইকোর্টে এসেছিল হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা একটি রিট আবেদনে। আপীল বিভাগে তাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আদেশের পর তিনি বলেন, ‘আপীল পুনরুজ্জীবিত করার আবেদনটিও খারিজ হওয়ায় কারখানাগুলো বন্ধ করতে আর কোন আইনী বাধা নেই।’ মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে ২০১১ সালের ২১ জুলাই হাজারীবাগে ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার করে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার তৈরির কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পাশাপাশি ট্যানারির বর্জ্য দিয়ে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার উৎপাদনকাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা এবং পোল্ট্রি ফুড উৎপাদনে ট্যানারি বর্জ্যরে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা করার নির্দেশ দেয়া হয়। বাংলাদেশ ফিশ মিট ও এ্যানিমেল গ্লু প্রস্তুতকারক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপীল করেন। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ওই আবেদন খারিজ করে দেয় আপীল বিভাগ। গোলাম সারওয়ার এরপর আপীল পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করলেও তা ধোপে টিকল না। হাজারীবাগের সব কারখানা বন্ধ হলো ॥ রাজধানীর হাজারীবাগের চামড়া কারখানাগুলোতে অভিযান চালিয়ে গ্যাস-বিদ্যুত-পানি সরবরাহের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে পরিবেশ অধিদফতর। গ্যাস-বিদ্যুত-পানির সংযোগ কাটতে হাজারীবাগে অভিযান সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে না যাওয়া এসব কারখানায় রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা শেষ হয় বলে পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সমরকৃষ্ণ দাস জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এর আগে শনিবার সকাল থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত ২২৪টি কারখানার বিদ্যুত, ১৯৩টির পানি ও সবগুলো কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এদিকে পরিবেশ দূষণের কারণে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরীতে সরাতে বার বার সময় পাওয়ার পরও অধিকাংশ ট্যানারি তা করেনি। গত ৬ মার্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক আবেদনে হাজারীবাগের সব ট্যানারির গ্যাস, বিদ্যুত ও পানির সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। হাজারীবাগ ট্যানারির ৬৭ বছর ইতিহাসের অবসান ॥ ১৯৫০ সালে যাত্রা শুরু আর এর অবসান হলো ২০১৭ সালে অর্থাৎ ৬৭ বছর পর। এই দীর্ঘ সময় পর রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প সরে যাচ্ছে সাভারে। পরিবেশ দূষণের অনেক অভিযোগ, বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে বিষ ঢালার অভিযোগসহ আরও অনেক অভিযোগ ছিল ট্যানারি শিল্পের ঘাড়ে। ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর নারায়ণগঞ্জে ট্যানারি শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ‘ঢাকা ট্যানারি’ নামের ওই কারখানা গড়ে তুলেছিলেন আর বি সাহা নামে এক ব্যবসায়ী। দানবীর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আর বি সাহার হাত ধরে গড়ে ওঠা ‘ঢাকা ট্যানারি’র অস্তিত্ব এখনও আছে। তবে এর মালিকানা বদল হয়েছে কয়েক দফা। নারায়ণগঞ্জে ঢাকা ট্যানারির কার্যক্রম চলে প্রায় তিন বছর। এরপর নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্যানারি কারখানা স্থানান্তর করে ১৯৫০ সালে রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগের বর্তমান ট্যানারি অঞ্চলে আনা হয়। তখন থেকে এতদিন ট্যানারি শিল্পের সব কার্যক্রম ছিল হাজারীবাগ ঘিরেই। দীর্ঘ ৩০ বছর হাজারীবাগের কাউসার ট্যানারিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘মন-মেজাজ ভালা নাই। দেখছেন তো, কাজ-কাম নাই, রাস্তায় বইসা আছি। এখানকার ট্যানারি বন্ধ হইয়া যাইতাছে। আমরা কী করমু, কী খামু।’ তিনি বলেন, ‘সাভারে ট্যানারি নিয়া যাবে। ওইখানে কই যামু, কই থাকুম। কাজ না থাকলে ভাত দিব কে। অন্য কাজ খুঁজতে হইব।’ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ জানান, ট্যানারির বিষয়ে আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা (ট্যানারি মালিকরা) হাজারীবাগে থাকা সব ট্যানারি বন্ধ করে দেব। আমরা সরকারের কাছে সাভারের শিল্পনগরীতে গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগসহ বেশকিছু দাবি জানিয়েছি। কারখানা স্থানান্তরের কাজ চলছে। আমাদের দাবি পূরণ হলে আশা করছি দ্রুত এখান থেকে একেবারে সরে যেতে পারব। ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক জানান, তিনি সরাসরি শ্রমিক হিসেবে ট্যানারিতে যুক্ত হন ১৯৬৪ সালে। তিনি বলেন, ৫৩ বছর ট্যানারির সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন হাজারীবাগে থাকায় এ জায়গার প্রতি এক ধরনের আবেগ, মায়া জন্ম নিয়েছে। এদিকে হাজারীবাগের ট্যানারির কারণে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ ওঠে ১৯৮৬ সালে। ওই বছর সরকার ১৭৬টি ট্যানারিসহ ৯০৩টি কারখানাকে দূষণরোধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়। পরবর্তী সময় ২০০৩ সালে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার প্রকল্প নেয় সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরা গ্রামে প্রায় ২০০ একর জমিতে গড়ে তোলা হয় চামড়া শিল্পনগরী। সেখানে ১৫৪টি ট্যানারি সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করে আসছিলেন ট্যানারি মালিকরা। মুক্তি পেল হাজারীবাগবাসী ॥ পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেল হাজারীবাগবাসী। একই সঙ্গে বুড়িগঙ্গাও পরিবেশে দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেল। এখন এলাকাবাসী চান, পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা। হাজারীবাগ ট্যানারি পুরোপুরি সরানোর পর সেখানকার প্রায় ৬০ একর জায়গায় পরিবেশবান্ধব বাণিজ্যিক ভবন, সরকারী আবাসন প্রকল্প অথবা পার্ক বা উদ্যান করার চিন্তা মাথায় নিয়ে এগোচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়। একাধিক বিকল্প উপস্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দেবেন, তার আলোকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার এ জায়গায় কী করবে, তা চূড়ান্ত হলে গণপূর্ত অধিদফতর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি কর্পোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত আছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি, তবে এখানে কোন না কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার তেজগাঁও শিল্প এলাকাকে বাণিজ্যিক এলাকায় রূপান্তর করছে। হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা নিয়েও সে রকম পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কিছুই এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সাভারে জমি বরাদ্দ পায়নি ৫০টি ট্যানারি ॥ ছোটবড় মিলিয়ে হাজারীবাগের অন্তত ৫০টি ট্যানারি সাভারে প্লট পায়নি। সরকার ব্যবসায়ীদের সাভারে প্লট দিয়ে সেখানে চলে যেতে বললেও এই ব্যবসায়ীরা কোথাও যেতে পারছেন না। ফলে তারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মচারীদের বেতনসহ সবকিছু নিয়ে বিপাকে আছেন। ট্যানারি এ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাজারীবাগে ট্যানারি রয়েছে কিন্তু সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে ট্যানারি পায়নি এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা সরকারকে দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে আরও ২০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হবে। সেখানে এদের প্লট দেয়া হবে। বাংলাদেশ ট্যানারি এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, যে ৫০ জন সাভারে প্লট পাননি, অথচ এখানেও তাদের গ্যাস, বিদ্যুত কেটে দেয়া হলো তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলতে এসে তারা অনেকেই কেঁদেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এদের দ্বিতীয় দফায় প্লট দেয়া হবে।
×