ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ওড়িশী রবীন্দ্র নজরুল আবহে নৃত্যসন্ধ্যায় মুগ্ধ দর্শক

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১০ এপ্রিল ২০১৭

ওড়িশী রবীন্দ্র নজরুল আবহে নৃত্যসন্ধ্যায় মুগ্ধ দর্শক

গৌতম পান্ডে ॥ দুটি সন্ধ্যাই নৃত্যের ঝঙ্কারে মুখরিত। কখনও দলীয় আবার কখনও একক। কখনও বা নৃত্যের ছন্দে প্রদর্শিত হলো নাটক। কবিতা ও গানের লোকজধর্মী নৃত্যও উপেক্ষিত ছিল না। নাচ যে শরীরের ভাষা, সুন্দর এক নান্দনিকতায় তার প্রকাশ ঘটাল চট্টগ্রামের নৃত্য সংগঠন ‘ওড়িশী এন্ড টেগোর ড্যান্স মুভমেন্ট সেন্টার’। শুধু ওড়িশী নৃত্য দিয়ে একটি সন্ধ্যা পার করিয়ে দেয়া যায়, এটাই প্রমাণ করল সংগঠনটি। ষোড়শ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী নৃত্যোৎসবের আয়োজন করে এ সংগঠন। শনিবার ছিল এ উৎসবের প্রথম নৃত্যসন্ধ্যা। এদিন ছিল ওড়িশী নৃত্য। রবীন্দ্রনাথের গানকেও ওড়িশী আঙ্গিকে দারুণভাবে উপস্থাপন করে এদিন শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, কলকাতার গুঞ্জনের পরিচালক গুরু পৌষালী মুখার্জী ও ইন্ধিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (আইজিসিসি) পরিচালক জয়শ্রী কু-ু। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বরেণ্য ছয় নৃত্যশিল্পীকে জানানো হয় সম্মাননা। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেনÑ আমানুল হক, মীনু হক, সাজু আহমেদ, শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়, মুনমুন আহমেদ ও তামান্না রহমান। অনুষ্ঠানের শুরুতে ওড়িশী নৃত্যের প্রাথমিক ধারণা প্রদর্শন করে সংগঠনটির শিক্ষার্থীরা। আলোচনার পর শুরু হয় ওড়িশীর প্রথম পর্ব মঙ্গলাচরণ। দলীয় এ পরিবেশনায় শিল্পীরা ত্রিভঙ্গি মুদ্রায় দাঁড়িয়ে ভূমিপ্রণাম শেষে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে। পরে ধরিত্রী, শিক্ষাগুরু ও দর্শকের উদ্দেশ্যে প্রণতি জানানো হয়। মেঘ ও কেদার রাগাশ্রিত একোতালি তালে পরিবেশিত এ নৃত্যাংশ নির্মাণ করেছেন গুরু পৌষালী মুখার্জী। সঙ্গীত প-িত ভুবনেশ্বর মিশ্র। একক পরিবেশনা শিব বন্দনা নিয়ে মঞ্চে আসেন ওড়িশী এন্ড টোগোর ড্যান্স মুভমেন্ট সেন্টারের পরিচালক নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তী। বাংলাদেশে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় দিক্ষীত ওড়িশী এই নৃত্যশিল্পী পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের শিষ্য। বাংলাদেশে ওড়িশী নৃত্য প্রচার ও প্রসারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের পৌষালী মুখার্জী একাডেমি তাকে শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী সম্মানে ভূষিত করেন। মিশ্র খাম্বাজ রাগে নিবন্ধ সঙ্গীতের একোতালি তালে তার পরিবেশনা ছিল অনবদ্য। মিলনায়তনে দর্শকের উপস্থিতি কম থাকলেও রসবোধ সম্পন্ন দর্শক-শ্রোতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সবাই নিঃশব্দে-নির্লিপ্তে তার নাচ দেখছিলেন। এরপর দলীয় পরিবেশনায় ছিল ওড়িশীর আর এক নৃত্যাংশ। পরে শিল্পীরা দলীয়ভাবে পরিবেশন করে রবীন্দ্রনৃত্য। রবীন্দ্রনাথের প্রেম পর্যায়ের ‘আজি দক্ষিণ পবনে দোলা লাগিল বনে বনে’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য ছিল খুবই নান্দনিক। এর পর পরিবেশিত হয় আরভি পল্লবী, যুগুদ- পল্লবী, সাভেরী পল্লবী, রবীন্দ্রনাথের ভাঙ্গা গান, অভিনয় ও মোক্ষ। আড়ানা রাগে একতালে নিবন্ধ ‘মন্দিরে মম আসিলে কে’ গানটির মূল ‘সুন্দর লাগেরি হে’ গানের নৃত্যরূপ। এর পর ‘কাঁহি গলে মুরালি ফুঁঙ্কা’ শিরোনামে ছিল অভিনয় নৃত্য। সবশেষে মোক্ষ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন। রবিবার উৎসবের শেষ দিন সন্ধ্যায় ছিল কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান নিয়ে কোলাজধর্মী নৃত্য পরিবেশনা ‘বাঁশরী ও তূর্য হাতে কবি’। এর গ্রন্থনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় প্রমা অবন্তী। এ আয়োজনে অতিথি ছিলেন নজরুল গবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। মনোমুগ্ধকর এ পরিবেশনায় অংশ নেন তন্বী দাশ, নিবিড় দাশগুপ্তা, জয়িতা দত্ত, তুষি শর্মা, দিয়া দাশ গুপ্তা, ময়ূখ সরকার, রিয়া বড়ুয়া, কান্তা দাশ, অর্জিতা সেন চৌধুরী, রাইমা মল্লিক, মৈত্রী চক্রবর্তী, মৃত্তিকা ধর প্রমুখ।
×