ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের জন্য টার্নিং পয়েন্ট

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১০ এপ্রিল ২০১৭

ট্রাম্পের জন্য টার্নিং পয়েন্ট

সিরিয়া প্রশ্নে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিকি হ্যালি নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতায় রেখে সিরিয়া যুদ্ধ বজায় রাখা ছাড়া কোন রাজনৈতিক সমাধান হবে না। সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করা, সিরিয়াকে ইরানের ওপর প্রভাব মুক্ত করা ও আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা এ মুহূর্তে মার্কিন প্রশাসনের মূল লক্ষ্য। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে আসাদকে তার ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া। আমরা সিরিয়ায় আসাদকে রেখে শান্তিপূর্ণ সমাধান দেখছি না। খবর এএফপি, বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বর্তমান সময়ের বৈশিষ্ট্য হলো যুদ্ধ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়া। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও হয়ত সে পথেই হাঁটতেন। কিন্তু শুক্রবার ভোরে হঠাৎ সিরিয়ায় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে তিনি হয়ত সে পথ থেকে ফিরে এলেন। অনেকে চিন্তা করতে পারেনি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ডেমোক্র্যাট ও মূলধারার উদার গণমাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। তারপরও ওয়াশিংটনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে দেখা যায় ট্রাম্প দেখাচ্ছে যে তিনি তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত দেয়ার মুহূর্তগুলোর অধিকাংশই সান পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে। এদিকে সিরিয়ায় মিসাইল হামলা চালানোর পর রাশিয়া ও ইরান বলেছে, তারা সিরিয়ার পাশে থাকবে। ইরান ও রাশিয়ার সেনাপ্রধানগণ শনিবার বলেছেন, তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে এবং সিরিয়া সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবেন। রাশিয়ার সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জেরাসিমভ এবং ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল বাগেরি শনিবার ফোনালাপ করেন। তারা বলেন, সিরিয়ার সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর ঘটনা একটি স্বাধীন দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানোর সমান। রাশিয়া ও ইরান দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের মিত্র হিসেবে কাজ করে আসছে। মঙ্গলবার একটি সন্দেহভাজন রাসায়নিক হামলায় অন্তন ১০০ জন নিহত হয় যার মধ্যে ছিল ৩১টি শিশু। রাসায়নিক গ্যাস হামলার ঠিক একদিন পরই শুক্রবার ভোরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ থেকে সিরিয়ার বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে ৫৯টি টোমাহক ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে এটা ছিল ওয়াশিংটনের প্রথম সরাসরি সামরিক অভিযান। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমের একই শহরে শনিবার অন্য একটি বিমান হামলায় একজন নারী নিহত হয়েছে। তবে এটা সিরিয়া বা রাশিয়ান বিমান হামলা ছিল কিনা তা স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। ইদলিব প্রদেশ এখন বিদ্রোহীদের দখলে এবং জঙ্গীরা সেখান থেকে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ার সরকার ও তার মিত্র রাশিয়া বিদ্রোহীদের এসব লক্ষ্যবস্তু নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। সিরিয়ায় মার্কিন বিমান হামলার পর রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মার্কিন সহযোগী রেক্স টিলারসনের সঙ্গে প্রথম ফোনালাপে এ হামলাকে ‘সন্ত্রাসবাদের খেলা’ বলে ওয়াশিংটনকে অভিযুক্ত করেন। এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি শনিবার সিরিয়ার বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ইরানী ও রুশ সেনাপ্রধান এক বিবৃতিতে বলেছেন, সিরিয়া ও তার মিত্রদের বিজয়কে বাধাগ্রস্ত করা এবং সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলোর শক্তি জোগানোর লক্ষ্যে এ হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আলজাজিরা অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, যতদিন সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদের পুরোপুরি পরাজয় না হচ্ছে, ততদিন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থনে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পশ্চিমাদের তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও সিরিয়াকে সমর্থন করে যাচ্ছে রাশিয়া ও ইরান। সাম্প্রতিক রাসায়নিক হামলার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিজোট দায়ী করছে সিরিয়া সরকারকে। গত মঙ্গলবার ইদলিব প্রদেশের খান শেইখুন শহরে রাসায়নিক হামলায় প্রায় ১০০ জনের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে গণমাধ্যমের তথ্যের ভিন্নতা থাকলেও রাসায়নিক হামলা যে হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। এখন এ নিয়ে সিরিয়া সরকার ও বিরোধীরা পরস্পরকে দায়ী করছে।
×