ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কর্পোরেট কর হার কমানোর দাবি দুই স্টক এক্সচেঞ্জের

ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে সিঙ্গেল উইন্ডো কার্যকর করবে এনবিআর

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১০ এপ্রিল ২০১৭

ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে সিঙ্গেল উইন্ডো কার্যকর করবে এনবিআর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। তিনি বলেন, এটি সাহসী পদক্ষেপ। ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়া এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অনেক এটি বাস্তবায়নে সাহস দেখায়নি। রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, নজিবুর রহমান বলেন, এনবিআরকে রাজস্ব আহরণের চিন্তা করতে হয়। আবার ব্যবসা সহজীকরণের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সমন্বয় রেখে বাজেট প্রণয়ন করা যাতে হবে। যা সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যও সহায়ক হবে। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো কার্যকর করা হবে। প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ঊর্ধতনরা একগুচ্ছ দাবি জানায়। যার মধ্যে কর্পোরেট কর কমানোর দাবি অন্যতম। এছাড়া ডি-মিউচুয়ালাইজেশনের শর্ত হিসেবে স্টক এক্সচেঞ্জ দুটির কাছে রক্ষিত শেয়ার বাজারে ছাড়ার পর যে ক্যাপিটাল গেইন হবে তা করমুক্ত রাখা, স্টক এক্সচেঞ্জের কর অবকাশ সুবিধা ৩ বছর বৃদ্ধি, লভ্যাংশের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রাক-বাজেট আলোচনায় আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার, ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মতিন পাটোয়ারী, ডিএসই’র ব্রোকারেজ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী। এনবিআরের পক্ষে উপস্থিত ছিলেনÑ আয়কর নীতির সদস্য পারভেজ ইকবাল, ভ্যাট নীতি ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন ও শুল্কনীতির সদস্য লুৎফর রহমানসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা। সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, শুধু কর হারের পরিবর্তন নয়, কৌশলগত এমন কিছু পরিবর্তন আনতে হবে যাতে কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে আগ্রহ দেখায়। বর্তমানে ৩০০ প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত আছে। কৌশলগত সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে এটি ১ হাজারে উন্নীত হবে। এ জন্য তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে কর্পোরেট কর হারের পার্থক্য ৫ শতাংশ রাখতে হবে। তাহলে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়বে। এতে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা আসার পাশাপাশি রাজস্ব আয়ও বাড়বে। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের কর অবকাশ সুবিধা ৫ বছর বৃদ্ধি, লভ্যাংশের করমুক্তসীমা ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা উচিত। এসব শেয়ারবাজারের প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। যা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনবে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরের বাজেটে শেয়ার বাজারের জন্য কোন নির্দেশনা পাচ্ছি না। বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত। যেমন আগামী এক বছরে বাজার মূলধন কত হবে, কতগুলো কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির আওতায় আনা হবে তার সুস্পষ্ট গাইড লাইন বাজেটে থাকা দরকার। একই প্রস্তাব দিয়ে ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মতিন পাটোয়ারী বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জকে কর অবকাশ সুবিধা না দিলে এনবিআর বছরে ১৪ থেকে ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। কিন্তু কৌশলগত প্রণোদনা দিলে বাজারে বিনিয়োগ বাড়বে। তা থেকে আরও বেশি রাজস্ব আয় হবে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি নাসির উদ্দিন বলেন, আইনের বাধ্যবাধকতা থাকায় বীমা কোম্পানিগুলোর এজেন্টের বেতন দিতে পারে না। কিন্তু যে কশিমন দিচ্ছে তার ওপর ৫ শতাংশ উৎসে আয়কর কেটে রেখে কমিশন দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এ কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ আছে। যা অযৌক্তিক। তাই কমিশনের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা উচিত। এছাড়া লাইফ ও নন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট করহারে কোন পার্থক্য নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই ক্যাটাগরির কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভিন্ন ভিন্ন। তাই এদের কর্পোরেট করহারে অবশ্যই একটা পার্থক্য রাখা উচিত। তা না হলে একটি পক্ষ বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে। মার্চেন্ট ব্যাংক এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, শেয়ারবাজারে মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউস ও এসেট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিগুলোর কাজের ধরন একই। কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংক সাড়ে ৩৭ শতাংশ, ব্রোকারেজ হাউস ৩৫ শতাংশ ও এসেট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিগুলো ১৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট ট্যাক্স দিচ্ছে। এ বৈষম্য দূর করা উচিত। এসএমই ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন রফতানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শূন্য শুল্ক, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি আমদানির শুল্ক প্রত্যাহার এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণের শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দেন।
×