ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালীর সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ। বর্ষবরণ এ দিন সবাই মেতে ওঠে প্রাণের উচ্ছ্বাসে। নানা আয়োজনে বরণ করা হয় নতুন বছরের প্রথম দিন। নতুন দিনের নতুন সূর্যকিরণ স্পর্শ করার আনন্দ তরুণ প্রাণেই বেশি। সেই উচ্ছ্বাসে, পুরনো স্মৃতির সঙ্গে বৈশাখের আনন্দ ভাগ করে নিতে জ

ক্যাম্পাসে বৈশাখী উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৯ এপ্রিল ২০১৭

ক্যাম্পাসে বৈশাখী উৎসব

লাল পাড়ের সাদা শাড়ি লাল-সাদা শাড়ি পরা তরুণী আর পাঞ্জাবি-ফতুয়া পরা তরুণদের ঢল নামে রাস্তায় বাস্তায়। নানা রঙে নানা ঢঙে সেজে সবাই দিনভর মেতে উঠবে বর্ষবরণের নানা উৎসবে। ক্ষুদ্র গ-ি ছাড়িয়ে বৃহত্তর প্রীতি, সৌহার্দ্য, শুভ কামনা ও মাঙ্গলিক চেতনার এক অনাবিল আনন্দের উৎসব বৈশাখ। সারাদেশের বর্ণিল সাজের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে পহেলা বৈশাখের উৎসব আরও বর্ণিল আরও প্রাণবন্ত, তারুণ্যদীপ্ত। বৈশাখে তারুণ্যের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে মুখরিত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাস। পহেলা বৈশাখের আগমন উপলক্ষে আগেই বর্ণিল সাজে পুরো ক্যাম্পাস। চারুকলার শিক্ষার্থীদের নিপুণ হাতের আলপনায় ভরে ওঠে ক্যাম্পাস। বৈশাখী পোস্টার, নানা রং ও নানা ধরনের মুখোশ আর ব্যানারে ছেঁয়ে যায় পুরো ক্যাম্পাস। পান্তা-ইলিশ ভোরের আলো উঁকি দেবার পর থেকেই ক্যাম্পাসে তরুণ-তরুণীরা ভিড় জমায়। আর সূর্য যখন একটু একটু করে তার দাপট দেখাতে শুরু করে, তখন ক্যাম্পাসের সুসজ্জিত দোকানগুলোতেও শুরু হয় পান্তা-ইলিশের উৎসব। শুধু কি পান্তা-ইলিশ? এর সঙ্গে থাকে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবারের সমারোহ। পান্তা-ইলিশ খাওয়ার পর্ব শেষ হতে না হতেই চারুকলা বিভাগ থেকে বের হয় পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষণীয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় প্যারেড মার্চ, জীবন্ত কাকতাড়ুয়া, পেখম মেলা ময়ূর, উচ্চ শব্দের গানের সঙ্গে মনোমুগ্ধকর নাচ, লাঠি খেলা ছাড়াও রংবেরঙের বেলুন, ফেস্টুন, নানা রঙ ও ঢঙের মুখোশ, বর্ণিল আর নজরকাড়া সাজে সাজানো হয় শোভাযাত্রাকে। নজরকাড়া ওই শোভাযাত্রায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় বর্ণিল বৈশাখী সাজে। শুধু চারুকলা বিভাগ নয়, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংগঠন পহেলা বৈশাখে আলাদাভাবে র‌্যালি-শোভাযাত্রা বের করে। বৈশাখী মেলা বৈশাখের প্রথম দিনে ক্যাম্পাসগুলোতে বসে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। সপ্তাহব্যাপী চলা এসব মেলায় পাশেই চারুকলা চত্বরের মূল স্টেজে চলে মঞ্চ নাটক, জারি-সারি, মুর্শিদী, ভাটিয়ালিসহ ভক্তিরসের গান, দেশপ্রেম, লোকগীতি, কবিতা পাঠ ছাড়াও বিভিন্ন লোকজ সঙ্গীত। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় কনসার্ট। শুধু চারুকলা চত্বরের মেলাই নয়, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বসে নানা প্রকার, নানা আকার, নানা ঢঙের পিঠা প্রদর্শনী। এছাড়া মাটির গহনা, বিভিন্ন অলঙ্কার, শাড়ি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, মুখোশসহ শিক্ষার্থীদের হাতের তৈরি ও নকশা করা বিভিন্ন জিনিসপত্র এদিন প্রদর্শন ও বিক্রি করা হয়। এর আগে সকাল থেকেই শুরু হয় ছেলেমেয়েদের গালে আলপনা আঁকার পালা। চারুকলার শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের গালে আলপনা এঁকে দেন। অনেকে আবার অর্থের বিনিময়েও পহেলা বৈশাখে আলপনা আঁকেন। বর্ণিল সাজে সজ্জিত ক্যাম্পাসে এসে সবাই পুরনো দিনের ভুল-ভ্রান্তি, সুখ-দুঃখ, হতাশা ও ক্লান্তি মহাকালের বুকে বিলীন করে দিয়ে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকেন। পহেলা বৈশাখের দিন ক্যাম্পাসে একটু ঘোরাঘুরি, বন্ধুদের সঙ্গে মজা করে আড্ডা দেয়া কিংবা বৈশাখী পোশাক পরে ক্যাম্পাসে শুধুই ঘুরে বেড়ানো নয়। নাগরদোলার ঘূর্ণিপাক, তালপাতার বাঁশি ও বিচিত্র খেলনা কেনা, টমটম গাড়িতে ওঠা এবং বিভিন্ন ধরনের মিঠাই প্রাপ্তির কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মেলার প্রতি শুধু শিক্ষার্থী নয়, ক্যাম্পাসে আশপাশের সাধারণ মানুষের আকর্ষণও থাকে অন্য রকম। এই মেলায় প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় হরেক রকম জিনিস যেমন সওদা করা যায় তেমনি হাজারো মানুষের সঙ্গে দেয়া-নেয়ার এক অমলিন সম্পর্ক স্থাপিত হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার পহেলা বৈশাখে তাদের দাবি হলো, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর সরকার যেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে। একই সঙ্গে তারা সারাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা মৌলবাদী ও জঙ্গীদের বিনাশও দাবি করেন। প্রতিবছর খুবই জাঁকজমকপূর্ণভাবে পহেলা বৈশাখ উৎসব পালিত হয়। সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে শিক্ষার্থীরা এদিন প্রাণের ছোঁয়ায় মেতে ওঠে। প্রতিবছরের মতো এবারও লাখো মানুষ অপেক্ষা করে আছে ক্যাম্পাসের পহেলা বৈশাখের উৎসব উপভোগ করার জন্য। বর্ষবরণের উৎসবে মুখরিত হবে বাংলার চারদিক। নতুনের আবাহনে কবিগুরুর সেই চিরায়ত সুর বাঙালীর প্রাণে প্রাণে অনুরণন তুলবে... এসো হে বৈশাখ এসো এসো...। আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে শুচি করে তুলতে আসবে বৈশাখ। দূরানতেœর পলাতক বলাকার ঝাঁকে হারিয়ে যাবে ১৪২৩। শুভ নববর্ষ ১৪২৪। মোঃ হাবিবুর রহমান
×