ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়েস্ট ইন্ডিজেই শেষ ইউনুস খানের

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৯ এপ্রিল ২০১৭

ওয়েস্ট ইন্ডিজেই শেষ ইউনুস খানের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সমাপ্তির পথে পাকিস্তান ক্রিকেটের আরও এক অধ্যায়ের। বৃহস্পতিবার অবসরের আগাম ঘোষণা দিয়েছেন সাদা পোশাকের অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক। একদিনের ব্যবধানে এবার তাকে অনুসরণ করলেন ইউনুস খান। দেশটির টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান ও সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক জানিয়ে দিলেন, আসন্ন উইন্ডিজ সফরই হবে তার ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ। শনিবার করাচিতে সংবাদ সম্মেলন করে বিদায়ের সিদ্ধান্তের কথা জানান ৩৯ বছর বয়সী স্টাইলিশ এ ব্যাটসম্যান। আগাম অবসরের ঘোষণা দিয়ে কিংবদন্তিতুল্য ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি অবসর নেব... মাথা উঁচু রেখেই বিদায় নেব। আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর হবে আমার শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ। প্রত্যেক ক্রীড়াবিদকেই একদিন এই কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতে হয়। আমি মনে করি, ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর এটাই সঠিক সময়। কোনরকম আক্ষেপ-অনুতাপ নেই, পাকিস্তানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে সত্যি আমি গর্বিত।’ পাকিস্তান ইতিহাসের সর্বোচ্চ টেস্ট রান এবং সেঞ্চুরি দুটোরই মালিক তিনি। আর ২৩ রান করলে দেশটির প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন। গড় ৫৩.০৬। অস্ট্রেলিয়া সফরে সিডনিতে নিজের শেষ টেস্টেও খেলেছেন অপরাজিত ১৭৫ রানের ম্যারাথন ইনিংস। বয়স চল্লিশের দোরগোড়ায় হলেও ফিল্ডিং-ফিটনেসে এখনও তরুণদের চেয়ে কম যান না। হুট করে ইউনুসের অবসরের এই সিদ্ধান্তকে তাই অনেকেই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না। তবে ভেবেচিন্তেই ঘোষণাটা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘সিদ্ধান্তটা হঠাৎ করে নেইনি। গত বেশ কিছুদিন এ নিয়ে ভেবেছি। পরিবার, কাছের বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করেছি। সত্যি বলতে যেদিন জাভেদ ভাইকে (জাভেদ মিয়াদাঁদ) ছাড়িয়ে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট রানের মালিক হয়েছিলাম, সেদিন থেকেই বিষয়টা মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে ১০ হাজারের কাছে চলে এলাম।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘অনেকেই বলতেন, ১১-১২ হাজার কিংবা, শচীনের ১৫ হাজারকে ধাওয়া করা উচিত। এসব তাদের আবেগ ও ভালবাসায় ভরা বক্তব্য। বাস্তবতা হচ্ছে, আমি সম্মান ও জনপ্রিয়তা নিয়ে সরে যেতে চেয়েছি। এটা সবার ভাগ্যে হয় না। সবসময় দেশের জন্য খেলেছি। মানুষ বলেই হয়ত আমারও কিছু ভুল থাকতে পারে। ভক্তদের বলব, তারা যেন মনে কষ্ট না নেন। আমার সুন্দর ভবিষ্যত জীবনের জন্য প্রার্থনা করবেন।’ ২০০০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা ইউনুসের ১১৫ টেস্টে মোট রান ৯৯৭৭। ৩২ হাফ সেঞ্চুরির বিপরীতে সেঞ্চুরি ৩৪টি। উভয় ক্ষেত্রেই যা পাকিস্তানের হয়ে রেকর্ড। ৮৮৩২ রান নিয়ে মিয়াদাঁদ দ্বিতীয় ও ৮৮২৯ রানের মালিক ইনজামাম উল হক দ্বিতীয় স্থানে। ২৫ সেঞ্চুরি নিয়ে এ তালিকাতেও ইউনুসের পর ইনজামাম। কেবল রান আর সেঞ্চুরিই নয়, ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে ব্যাটিংয়ের আরও অনেক রেকর্ডেই নিজের নামটা খোঁদাই করে নিয়েছেন ইউনুস। রয়েছে বিরল অনেক কীর্তিও। জানুয়ারিতেই সিডনি টেস্টে মহাকাব্যিক ইনিংসের (১৭৫*) মধ্য দিয়ে টেস্ট খেলুড়ে দশটিসহ মোট ১১ দেশে (এবং আরব আমিরাত) সেঞ্চুরির অনন্য নাজির স্থাপন করেছেন, বিশ্বে এমন কীর্তি আর কারও নেই। ক্যারিয়ারের ৩৪তম সেঞ্চুরিটা এসেছে ৩৯ বছর বয়সে, অস্ট্রেলিয়ার মটিতে ক্লাইভ লয়েডের পর যা বেশি বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ড। তিন সংস্করণেই অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা ইউনুসের অধীনে ২০০৯ সালে ইংল্যান্ড টি২০ বিশ্বকাপ জয় করে পাকিস্তান। মিসবাহর নেতৃত্বে গত বছর প্রথমবারের মতো টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছিল দেশটি। একসঙ্গে ব্যাটিংয়ের দুই মেরুদ-কে হারানোটা যে হবে বড় ধাক্কা, সেটি স্বীকার করেছেন প্রধান কোচ মিকি আর্থার। চলমান ওয়ানডে শেষে উইন্ডিজে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে পাকিস্তান। ২১ এপ্রিল জ্যামাইকায় শুরু প্রথম টেস্ট। এই সিরিজ শেষেই সাবেক হয়ে যাবেন মিসবাহ উল হক ও ইউনুস খান।
×