ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিরল সীমান্ত দিয়ে ভারত বাংলাদেশ পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ এপ্রিল ২০১৭

বিরল সীমান্ত দিয়ে ভারত বাংলাদেশ পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভারত, নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমারে রেলপথে বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনের চুক্তি অনুযায়ী দিনাজপুরের বিরল সীমান্ত দিয়ে ডুয়েল গেজ রেলপথে আনুষ্ঠানিকভাবে পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। শনিবার দুপুর ১টার দিকে দিল্লীতে বসে রাধিকাপুর স্টেশনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ওই রুট যৌথভাবে উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে দিনাজপুরের বিরল সীমান্ত দিয়ে ৪২টি তেলের ওয়াগনে ইন্ডিয়ান হাই স্পীড ডিজেল (জ্বালানি) নিয়ে পণ্যবাহী একটি ট্রেন বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিমানগর তেল রিফাইনারি ডিপো থেকে এই ট্রেনটি যাত্রা করে। ট্রেনটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের দিনাজপুরের পার্বতীপুর তেল ডিপো পর্যন্ত যায়। বিরল রেল স্টেশনের মাস্টার মাসুদ পারভেজ জানান, এই পণ্যবাহী ট্রেনে মোট ২ হাজার ২শ’ মেট্রিক টন জ্বালানি ছিল। পরে ট্রেনটি বিরল রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে যাত্রা বিরতি দেয়। সেখানে মালামালগুলো পরীক্ষা করে ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা। এর আগে সকাল ৮টার দিকে জ্বালানি বোঝাই ওয়াগনগুলোকে নিয়ে আসতে বাংলাদেশ থেকে একটি ইঞ্জিন ভারতে প্রবেশ করে। পরে সব ধরনের কার্যক্রম শেষে দুপুরে ট্রেনটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এখন থেকে এই রেলপথে জ্বালানি, পাথরসহ সব ধরনের পণ্য পরিবহনের ফলে সংশ্লিষ্ট দেশের মধ্যে দ্রুত এবং পণ্য পরিবহন খরচ কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। শনিবার দুপুরে ভারতের রাধিকাপুর থেকে হাই স্পীড ডিজেল বোঝাই একটি মালবাহী ট্রেন ৪২টি ওয়াগন নিয়ে বাংলাদেশের বিরল রেল স্টেশনে এসে পৌঁছলে ট্রেনটিকে স্বাগত জানায় লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, বিভাগীয় মেকানিক্যাল প্রকৌশলী মমতাজুল ইসলাম, দিনাজপুর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার তাহেরুল ইসলাম খান, বিরল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম রওশন কবীর, উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ লতিফ, সম্পাদক এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, সবুজার সিদ্দক সাগর, শফিকুল আজাদ মনি, এ্যাড. রবিউল ইসলামসহ স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ। ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত ভারত এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মিটার গেজ রেলপথে নেপাল, ভারত এবং মিয়ানমায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে মধ্যে সিমিতসংখ্যক পণ্যবাহী ট্রেন চলতো বিরল রেলপথ দিয়ে। ২০০৬ সালে ভারত রাধিকাপুর পর্যন্ত ব্রড গেজ রেলপথ স্থাপন করায় রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছিল ওই রুটে। এর আগে গত ৮ মার্চ ভারত থেকে ৪২টি ওয়াগনে ২ হাজার ৪৭২ মেট্রিক টন পাথর নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ট্রেন বাংলাদেশে প্রবেশ করে। দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বিরল স্থলবন্দরটি চালু হওয়ার সংবাদে খুশির জোয়ার বইছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এ বন্দরটি দিয়ে রেল ও সড়ক পথে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, নেপাল ও ভুটানের মতো দেশের সঙ্গে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু হলে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবেন। স্থানীয় যুবক গৌরাঙ্গ রায় বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিরল স্থলবন্দর চালু হওয়ায় বেকার যুবকদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। দীর্ঘদিন বেকার থাকা যুবকরা এখানে বিভিন্ন কাজ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় খুশি। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পথ খুলে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ। পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের রাধিকাপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন (স্টেশন) ইতোমধ্যে ডুয়েল গেজ রেলপথ সম্প্রসারণ কাজ শেষ করা হয়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশ সমূহের সঙ্গে আমদানি ও রফতানির কাজ ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশে অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারণ-সহ সরকার ২০০২ সালে বিরলসহ ১৩টি শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দরে রূপান্তর করে।
×