ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাঙালিত্বের বোধ থেকে অভিন্ন আয়োজন, দুই বাংলায় মঙ্গল শোভাযাত্রা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৯ এপ্রিল ২০১৭

বাঙালিত্বের বোধ থেকে অভিন্ন আয়োজন, দুই বাংলায় মঙ্গল শোভাযাত্রা

মোরসালিন মিজান ॥ মূল আয়োজনের অনেক বাকি। এখনও চলছে প্রস্তুতি পর্ব। এরপরও মঙ্গল শোভাযাত্রার বর্ণাঢ্য রূপটি একটু একটু করে দৃশ্যমান হচ্ছে। তাতেই চোখ আটকে যায়। একইসঙ্গে বাঙালীর তৃণমূলের জীবন ও লোক সংস্কৃতির জয়গান করা হয়। মৌলবাদ ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করা হয় সম্প্রীতির বাণী। মঙ্গলের বারতা দেয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এভাবে বাংলা নববর্ষ বরণের প্রধানতম অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে আয়োজনটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের এই উদ্যোগ সম্প্রতি লাভ করেছে বিশ্ব স্বীকৃতি। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইনটেনজিবল কালচারাল হ্যারিটেজের মর্যাদা দিয়েছে ইউনেস্কো। এই অর্জনের পথ ধরে এবার আরও বড় আরও বিস্তৃত পরিসরে আয়োজন করা হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অনুকরণে সারাদেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করবে। বেশ কয়েকদিন আগে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে এমন ঘোষণা। প্রস্তুতি চলছে সারাদেশেই। এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মঙ্গলের বারতা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই আমরা। সারাদেশের মানুষকে আয়োজনটির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার সুযোগ করে দিতে চাই। একইসঙ্গে বিশ্ববাসীকে বলতে চাই, বাঙালী নিজেদের অসাম্প্রদায়িক উদার সংস্কৃতি নিয়েই এগিয়ে যাবে। উগ্র মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের কোন স্থান এ দেশে হবে না। সব মিলিয়ে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা নতুন মাত্রা পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। তবে এখানেই শেষ নয়। মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও। ঢাকার আয়োজনে মুগ্ধ হয়েই এমন উদ্যোগ। একটি নয়, একাধিক মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে ওপার বাংলা থেকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কলকাতায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করবে। আয়োজনের সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক পবিত্র সরকার, বিভাস চক্রবর্তী, শুভেন্দু মাইতি, কিন্নর রায়সহ বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন জানান, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন পশ্চিমবঙ্গের আয়োজকরা। এপার বাংলার উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে গড়া হচ্ছে পশু পাখির মডেল। মুখোশ ইত্যাদি তৈরির কাজ এগিয়ে চলেছে। বিভিন্ন নাচের স্কুল নাটকের দল এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করবে। যে পথ ধরে এগিয়ে যাবে শোভাযাত্রা সেই পথের পুরোটাজুড়ে আঁকা হবে আলপনা। পহেলা বৈশাখের আগের রাতে সবাই মিলে আলপনা আঁকার কাজ করবেন। মঙ্গল শোভাযাত্রা সফল করতে একইসঙ্গে চলছে প্রচার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খোলা হয়েছে। বিস্তারিত তুলে ধরে সেখানে লেখা হয়েছেÑ ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালী জনজীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে আছে। এ অধ্যায়টিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যাপক করে তোলার জন্যে আমরা বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছি। লোকায়ত আবহমান জীবনধারা ও শিল্পধারাকে বহন করে চলাই আমাদের উদ্দেশ্য। বাউল, জারি, সারি, পাঞ্চালি, যাত্রাগান আজ যেন মাটির গভীরে ঘুমিয়ে আছে। বিষ্ণুপুরের ঘোড়া, কালীঘাটের পট, আলপনাসহ লোকশিল্পের নানা মোটিভ সন্নিবেশিত হবে এ শোভাযাত্রায়। শোভাযাত্রা শেষে সংক্ষিপ্ত পরিসরে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। বিভেদের উর্ধে থেকে বাংলার জনজীবনকে অসাম্প্রায়িক বার্তা দিতেই এ আয়োজন বলে জানিয়েছেন বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক সিদ্ধার্থ দত্ত। নর্থ কলকাতা থেকেও একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হওয়ার কথা রয়েছে। সব ঠিক এবার আরও সুন্দর আরও বিপুল বিস্তৃত আয়োজন দেখবে বাঙালী। মৌলবাদীদের হুংকার পেছনে পড়ে থাকবে। বাঙালিত্বের বোধ নিয়ে এগিয়ে যাবে দুই বাংলার মানুষÑ নতুন বছরে এই হোক চাওয়া।
×