ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এককালের উত্তাল পুনর্ভবা এখন ধু ধু বালুচর

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৯ এপ্রিল ২০১৭

এককালের উত্তাল  পুনর্ভবা এখন  ধু ধু বালুচর

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ৮ এপ্রিল ॥ পোরশা উপজেলার নিতপুর সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া এক সময়ের উত্তাল খরস্রোতা পুনর্ভবা নদী বর্তমানে নাব্য হারিয়ে ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। নদীটিতে এক সময় চলাচল করত অসংখ্য পালতোলা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। ভাটিয়ালী ও পল্লীগীতি গানের সুরে মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলতেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোমস্তাপুর, রহনপুর, নাচোলসহ অন্যান্য উপজেলার ব্যবসী মোকামে। এসব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বড়বড় হাট বাজারে ব্যবসার জন্য ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, কলাই, গমসহ প্রভৃতি পণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের ছোটবড় নৌকায় পাল তুলে মাঝিমাল্লা নিয়ে ছুটে চলতেন। শুধু ওইসব পণ্যই নয়, হাটবাজারগুলোতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। সে সময় প্রায় সারা বছরই পুনর্ভবা থাকত পূর্ণ যৌবনা। একে অবলম্বন করে অসংখ্য মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন জীবিকার শক্ত ভিত গড়ে তুলেছিলেন। অগণিত হাটবাজারই নয় এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ। এর পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সবুজ ফসল ফলাত। প্রকৃতি প্রদত্ত অফুরন্ত পানিতে নানা ফসলে ভরে উঠত ফসলের ক্ষেত। জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন ও পাশের গ্রামগুলোতে অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল। ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই পুনর্ভবা। মাছ পাওয়া যেত সারা বছর ধরে। জীবিকা নির্বাহের জন্য জেলেরা রাতদিন ডিঙি নৌকায় জাল নিয়ে চষে বেড়াতেন মাছ ধরার জন্য নদীতে। মাছ বিক্রি করে অসংখ্য জেলে পরিবারের সংসার চলত। সময় গড়িয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভরা যৌবনা পুনর্ভবা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। শুধু মরা খালই নয়। এ যেন পরিণত হয়েছে ধু ধু বালুচরে। জেলে পরিবারগুলো হয়ে গেছে প্রায় বিলীন, নদীর পাড়গুলো হয়েছে কৃষি জমি। নদীগর্ভে জেগে ওঠা চরে এলাকার শিশুরা খেলছে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলা। সে সময়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎসগুলো হয়ে গেছে চিরতরে বন্ধ। থমকে গেছে নদী, নিভে গেছে বিপুল সম্ভাবনা জাগানো কর্মকা-। নদী কেন্দ্রিক সম্ভাবনাগুলো নিভে গেলেও কেউ কখনও এসব নিয়ে ভাবেনি। খরা মৌসুমে সরকারীভাবে নদীটি খননের পদক্ষেপ নেয়া হলে অন্তত মরা খালে পরিণত হতো না। তাছাড়া নদীটি কখনও খনন বা ড্রেজিং করা হয়নি। এমনকি কর্তৃপক্ষ রক্ষণাবেক্ষণেরও কোন উদ্যোগ নেয়নি। খনন না করার ফলে নদীটি ফসলের জমিতে পরিণত হয়েছে। এ সুযোগে অনেকেই ধান চাষ করছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময়ের উত্তাল পুনর্ভবা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
×