ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ড. আসাদুজ্জামান চৌধুরী

যে বিষয়টি অবশ্যই ভাবা উচিত ॥ অভিমত

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৯ এপ্রিল ২০১৭

যে বিষয়টি অবশ্যই  ভাবা উচিত ॥ অভিমত

সময় বদলাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে মানুষের চিন্তাধারা। কিন্তু এই চিন্তাধারা যদি প্রথমেই অনেক বড় হয়ে যায় তবে তার প্রকৃতস্বরূপ উদ্ঘাটন করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা এরাই পরবর্তীতে দেশ ও দলের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দেয়। আবার পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গে এদের আদর্শ ও নীতি পরিবর্তন করতেও সময় লাগে না। কথায় আছেÑ বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে। বঙ্গবন্ধু নিজে কর্মী থেকে সংগঠক হয়েছেন। ধীরে ধীরে জনমানুষের রাজনীতিকে বুকে ধারণ করে তিনি সংগঠক থেকে নেতা হয়েছেন। তারপর জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। এভাবে তিনি নেতা থেকে হয়েছেন জাতীয় নেতা এবং স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তিনি জাতীয় নেতা থেকে জাতির পিতায় পরিণত হয়েছেন। আর এটি সম্ভব হয়েছে অসংখ্য কর্মীকে তিনি নেতা বানিয়েছেন, অসংখ্য নেতাকে স্থানীয় পর্যায় থেকে টেনে তুলে উন্নীত করেছিলেন জাতীয় নেতায়। ফলে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজও বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করেই টিকে আছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় সেটি হলোÑ একজন কর্মীর কাছে দেশের স্বার্থে দলের নীতি ও আদর্শ অক্ষুণœ রাখার জন্য আত্মত্যাগ ও অবদানকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। প্রকৃত কর্মী তার ত্যাগের বিনিময়ে নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখে না। তার মূল লক্ষ্য থাকে তার দলের আদর্শকে ধারণ করে দেশের স্বার্থে কাজ করা। কিন্তু সুবিধাবাদী চক্ররা প্রথমে অর্থ বিনিয়োগ করে দলে প্রবেশ করে, এখানে অর্থ ও ক্ষমতা মুখ্য বিষয় হিসেবে কাজ করে। কিন্তু নীতি ও আদর্শের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়। অল্প দিনের মধ্যেই তারা নেতা হয়ে যান। যদি এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি দলে ঘটে তখন তাদের অপকর্ম আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আবার প্রতিক্রিয়াশীলরা সুকৌশলে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে দলে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার প্রয়াস চালাচ্ছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করা ও সরকারের বিশ^াস ভাজন সেজে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের আধিপত্য বিস্তার করা। এভাবে ধীরে ধীরে প্রগতিশীল একটি দলের ভেতরে প্রবেশ করে কিভাবে তাদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা যায় তার একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা অবান্তর বলে ভাবা যায় না। দৈনিক জনকণ্ঠের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আখের গোছানো ও আধিপত্য বিস্তারই আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলের মূল কারণ। বিষয়টি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত। যদি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিষয়টি না ভাবা হয় তবে তা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে গবেষণা ও তা বিশ্লেষণ করে আগামী দিনের কর্মপন্থা গ্রহণ করা ও দিকনির্দেশনার বিষয়টি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে সরকারের মেয়াদ যতই শেষের দিকে যাচ্ছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যের বদলে কোন্দল ততই প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। সর্বশেষ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে দলের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনায় দলটির মধ্যে তোলপাড়ের সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের অশনি সঙ্কেতের মূল কারণ হচ্ছে আদর্শিক নেতারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। আর এই সুযোগে সুযোগ সন্ধানী ও অনুপ্রবেশকারীরা দলের মধ্যে ঢুকে দলের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা করে যাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল বলে মনে করা হলেও এর পেছনে কাজ করছে দলে অনুপ্রবেশকারী দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের এজেন্টরা। এদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল অর্জন ও সফলতা ব্যর্থ করে দেয়া। আওয়ামী লীগের মধ্যে এই শীতের পাখিরা ঢুকে প্রথমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও অসন্তোষের চেষ্টা চালাচ্ছে। শুধু তৃণমূলে নয়, এরা সুকৌশলে কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপিদের মধ্যেও তাদের প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, তাদের ষড়যন্ত্রের ও প্ররোচনার ফাঁদে পা দিয়ে অনেক মন্ত্রী এমপি নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। এসব আত্মঘাতী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই হতে পারেন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির একমাত্র আশা ভরসারস্থল। যে গভীর ষড়যন্ত্রের বীজ অনুপ্রবেশকারীরা দলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে রোপণ করার চেষ্টা করছে তা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই উপড়ে ফেলতে পারেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও কোন ধরনের অনৈক্য থাকলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। আর কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যখন ঐকমত্য গড়ে উঠবে তখন তাদের মাধ্যমে তৃণমূলে যে অনৈক্য রয়েছে তা দূর করা সম্ভবপর হবে। এছাড়া শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে সুযোগ সন্ধানী ও ষড়যন্ত্রকারী অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দল ও দেশের ভাল কাজে নেতা ও কর্মীদের উৎসাহিত করতে হবে। তৃণমূলের যারা প্রকৃত কর্মী তাদের নেতৃত্বের পর্যায়ে তুলে আনতে হবে। যাতে করে ভুঁইফোড় কোন ব্যক্তি কর্মী না হয়ে নেতা হয়ে যেতে না পারে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘করাপশন আমার দুঃখী দিনমজুর, কৃষক ও শ্রমিকরা করে না। করাপশন করে শিক্ষিত মানুষরা।’ এই বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে ভাবা দরকার। আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে কেউ ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কিনা তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এর কারণ হচ্ছে যখন একজন নেতার মধ্যে আদর্শের বদলে নীতিহীনতা জন্ম নেয় তখন অনুপ্রবেশকারীরা সহজেই দলের ভেতর ঢুকে পড়তে পারে। বিষয়গুলো ছোট করে ভাবার অবকাশ নেই। প্রকৃত বিশ্লেষণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের মধ্যে সাধু সেজে ষড়যন্ত্রকারীরা এসব অপকর্মের দায় দলের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে পোড়ামাটির নীতি নিয়ে যারা পেট্রোলবোমার রাজনীতি করেছিল তারা দলের ভেতরে অনুপ্রবেশ করছে কিনা বা ইতোমধ্যে করেছে কিনা তা আজ ভাবার সময় এসেছে। এর কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ আজ এগিয়ে চলেছে। জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিস্তার ঘটেছে। স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস প্রকাশিত হয়েছে। রাজাকার ও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীরা তাদের প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছে। জাতি হয়েছে আজ কলঙ্কমুক্ত। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। এখনই সময় তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত রাখা। আর এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই হচ্ছেন জনমানুষের একমাত্র আশা ভরসারস্থল। লেখক : শিক্ষাবিদ
×