ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফির অবসর ভাঙ্গার দাবি সমর্থকদের

সাফল্য নিয়ে দেশে ফিরেছে টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ এপ্রিল ২০১৭

সাফল্য নিয়ে দেশে ফিরেছে টাইগাররা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ১-১, ১-১ ও ১-১। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিনটা সিরিজের পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজে হারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কোনটাতেই। র‌্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের চেয়ে ওপরে থাকা কোন দলের বিরুদ্ধে (২০০৯ সালে দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যতীত) আগে কোন পূর্ণাঙ্গ সিরিজে এমন তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা সাফল্য নিয়ে ফিরতে পারেনি টাইগাররা। এবার শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ তিন সিরিজেই দাপটের সঙ্গে খেলে সমতায় শেষ করেছে বাংলাদেশ। এখন টাইগারদের মাঠের নৈপুণ্য ক্রমোন্নতির দিকে, গ্রাফটা নিচে না নেমে হু হু করে ওপরের দিকে উঠছে। তাই এ সাফল্যকে দেশের ভক্ত-সমর্থকরা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। তবে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি সীমিত ওভারের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার টি২০ থেকে অবসরের বিষয়টি। দ্বিতীয় ম্যাচে প্রেমাদাসাতেই অসংখ্য ভক্ত সেই অবসর ভেঙ্গে ফিরে আসার দাবি জানানো প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে এসেছিলেন। শুক্রবার সকালেই দেশে ফিরেছে টাইগাররা। বিমানবন্দরে এবং ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের বাইরে মাশরাফিকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ভক্ত-সমর্থকরা। কেউ কিছু আঁচ করতে পারেনি। গত বছর থেকেই মাশরাফি কবে অবসরে যাবেন এবং হুট করে অবসরে যেতে পারেন এ ধরনের গুঞ্জন ছিল। কিন্তু ওই সময় মাশরাফি নির্দিষ্ট করে কোন সময় জানাননি। উল্টো বলেছিলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখনও ভাবছি না।’ কিন্তু এবার সবাইকে চমকে দিয়ে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে প্রথম টি২০ ম্যাচের টস জেতার পরই মাশরাফি ঘোষণা দেন এই সিরিজের পর থেকে আর জাতীয় দলের হয়ে টি২০ খেলবেন না। দেশের ষোলো কোটি মানুষের হৃদয় জয় করা মাশরাফির নিজ কণ্ঠে এমন ঘোষণা শোনার পরই ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরদিন থেকেই মাশরাফির অবসর ভেঙ্গে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তার ভক্তরা মানববন্ধন ও মিছিল করেন। এমনকি প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামেও বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দলের ভক্ত-সমর্থকরা ‘অধিনায়ক আমরা তোমাকে টি২০ তে মিস করব’ ‘আমরা তোমাকে আরও দেখতে চাই মাশরাফি’ ‘মাশরাফি ফিরে এসো’ ইত্যাদি লেখা ব্যানার ও প্লাকার্ড নিয়ে আসেন। মাশরাফির এই চলে যাওয়ার ঘোষণাটা ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। কারণ নিজে যেমন ফর্মে ছিলেন, তেমনি বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেটে ভয়ঙ্কর এক দলে পরিণত করেছেন তিনি। গত ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে টি২০ সিরিজে সর্বশেষ ইনজুরিতে পড়েছিলেন মাশরাফি। সেখান থেকে ফিরে এবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজের পুরোটাই খেলেছেন। দারুণ নৈপুণ্যও দেখিয়েছেন। কিন্তু আবেগী এ ক্রিকেটার সাবেক হয়ে ফিরেছেন শুক্রবার দল নিয়ে। অবশ্য ওয়ানডে ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন। কিন্তু টি২০ ফরমেটে আর টাইগারদের জার্সিতে তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যাবে না। এবারও মাশরাফির নেতৃত্বে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ড সফরে শতভাগ ব্যর্থতা ও ভারতের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টে পরাজয়ের হতাশা থেকে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ নিজেদের শততম টেস্টে। ঐতিহাসিক সেই ম্যাচে দারুণ এক জয় তুলে আনে। প্রথমবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট জয়ের গৌরব নিয়ে নিজেদের ফিরে পায়। ওয়ানডে সিরিজের শুরুতেই সেটার রেশ দেখা যায়। মাশরাফির নেতৃত্বে ওয়ানডে ক্রিকেটে গত দুই বছর ধরেই দারুণ শক্তিধর দলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। সেটা টানা ৬ সিরিজ জয়ের মাধ্যমে প্রমাণও দিয়েছে। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে মাশরাফির দল নিজেদের সেরা ৭ নম্বর অবস্থানে উঠে এসেছে। তবে হোঁচট খাওয়া শুরু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গত অক্টোবরে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারের মধ্যে দিয়ে। এরপর নিউজিল্যান্ড সফরেও ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে ও ৩-০ ব্যবধানে টি২০ সিরিজ হারে মাশরাফির দল। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জিতেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের স্বপ্নটা বড় হতে থাকে। দ্বিতীয় ওয়ানডে পরিত্যক্ত হওয়ায় সুযোগ ছিল তৃতীয় ওয়ানডেতে। কিন্তু এবার পরাজিত হয়। টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচেই হার দেখেন মাশরাফি। তারচেয়ে বড় বিষয় ছিল এদিনই টসের পর মাশরাফি টি২০ থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। দ্বিতীয় ও শেষ টি২০তে মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচে জয় পাওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষা নিয়ে মাঠে নামেন দেশের ক্রিকেটাররা। প্রত্যাশিত জয় পাওয়াতে টি২০ সিরিজও ১-১ সমতায় শেষ করে। এবারই প্রথম নিজেদের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দলের বিরুদ্ধে তিন ফরমেটেই অপরাজেয় থেকে সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ দল। এ কারণে অভিভূত মাশরাফি। বিশেষ করে তার টি২০ বিদায়ের ম্যাচে জয় তুলে নিতে পেরে বেশ গর্বিত তিনি। মাশরাফি বলেন, ‘আমি সবসময় বিশ্বাস করি, ভাগ্য বলে কিছু আছে। আমার খুব গর্ববোধ হচ্ছে, শেষ ম্যাচটি অধিনায়ক হিসেবে জিতলাম। তবে এই জয় সম্ভব হয়েছে আমার সতীর্থদের জন্য। সব কোচিং স্টাফের জন্য এবং আপনারা যারা সমর্থক, তাদের আকাক্সক্ষার জোরে। আমি আশা করব আপনারা সবসময়ই এভাবে বাংলাদেশ দলের পাশে থাকবেন।’ ২০০৯ সালের পর থেকে টেস্ট খেলেননি দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচে ফিটনেস না থাকায়। নিয়মিত খেলেছেন ওয়ানডে ও টি২০। এবার সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ফরমেটের সাবেক হয়ে দেশে ফিরলেন। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘একটা পর্ব শেষ হয়ে গেল, একটু খারাপ তো লাগবেই। তবে ওয়ানডেতে আরও কিছুদিন আছি। এই অসাধারণ ছেলেগুলোর সঙ্গে আরও কিছুদিন খেলার সুযোগ থাকছে। অমি নিজেকে খুব ভালভাবেই সামলেছি। তবে আমার সতীর্থদের সামলাতে একটু বেগ পেতে হয়েছে। ওদের অনেকের চোখেই ছিল জল। সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আমার জন্য কারোর চোখের পানি ফেলা আমার জন্য বিরাট পাওয়া।’ মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচের সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান। দলের ফিল্ডিংয়ের সময় সবাইকে বেশ পরামর্শও দিতে দেখা গেছে তাকে। পরবর্তী টি২০ অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারের কথাই শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘সাকিব যখন মাঠে এমন সক্রিয় থাকে তখন কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। এমন ম্যাচ আপনি আগেও দেখবেন। ভারতের বিপক্ষে টি২০ বিশ্বকাপের ম্যাচটাতে যেমন ছিল। সাকিব সক্রিয় থাকাতে আমি যখন ফাইন লেগে ফিল্ডিং করছিলাম, ও বোলারের সঙ্গে কথা বলে ফিল্ডিং সাজাচ্ছিল। তারজন্য আমার দৌড়ে দৌড়ে যেতে হয়নি। যেটা বললাম, নিজেকে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। সাকিব এগিয়ে আসাতে আমার জন্য ভাল হয়েছে।’
×