ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিষ্টি নিয়ে চলে নানা আদিখ্যেতা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৮ এপ্রিল ২০১৭

মিষ্টি নিয়ে চলে নানা আদিখ্যেতা

মেলা ও মিষ্টি। আবহমান কাল থেকে একে অপরের পরিপূরক। মেলা মানেই মিষ্টির ছড়াছড়ি। যুগ পাল্টেছে। পাল্টে গেছে মেলার ধরণ-ধারণ। কিন্তু পাল্টায়নি মিঠাই মন্ডার ব্যবহার। বরং আরও বেড়েছে। মেলায় বন্ধু কিংবা আত্মীয়স্বজন আপ্যায়নে চলে মিষ্টি। স্বজনদের বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয় মিষ্টির হাঁড়ি। মিষ্টি নিয়ে চলে এমন নানা আদিখ্যেতা। কারিগরদের মধ্যেও দেখা দেয় প্রতিযোগিতা। এভাবে অসংখ্য মেলা রীতিমতো মিষ্টির মেলায় রূপ নেয়। তাইতো এখনও মেলার অনেকটা জুড়ে আছে মিষ্টির দখলদারিত্ব। যখন থেকে গাঁ-গেরামে মেলার আয়োজন শুরু হয়েছে, তখন থেকেই মেলায় মিষ্টির আয়োজন। পটুয়াখালী অঞ্চলে মেলা আয়োজনের ইতিহাস অন্তত তিন-চারশ’ বছরের। একটা সময়ে বাংলা নববর্ষে ধুমধাম করে বৈশাখী মেলার আয়োজন হতো। মেলা শুধু শহর-বন্দরেই নয়, প্রত্যন্ত গাঁয়েও হতো। বছরের অন্যান্য সময়েও নানা ধরনের মেলা হতো। কালের পরিক্রমায় অনেক মেলা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আবার অনেক নতুন মেলার সৃষ্টি হয়েছে। ধরণ-ধারণ পাল্টে গেছে। মেলার উত্থান-পতন, গড়ন-পেটন যাই হোক, মিষ্টির ব্যবহার প্রায় একই রয়ে গেছে। হয়তো মিঠাই মন্ডার নাম কিংবা আকার প্রকার পাল্টেছে। একটা সময়ে মেলায় বাতাসা আর কদমার দেখা মিলেছে বেশি। বাতাসা তৈরি হতো গুড় দিয়ে। আর কদমা চিনি দিয়ে। পরবর্তীতে বাজারে চিনির বাতাসা এসেছে। এখন বাতাসা কিংবা কদমা কালেভদ্রে দেখা মিলছে। বাতাসা-কদমার পরে এসেছে জিলিপি-আমৃতি জাতীয় মিঠাই। এখনও এর ব্যবহার আছে। তবে মেলায় এখন আধিপত্য বেড়েছে রসগোল্লা, পানতোয়া, লালজাম, কালোজাম, রসমালাই জাতীয় মিষ্টির। মেলা মানেই এসবের সারিবাঁধা দোকান। শহরের মেলায় মিষ্টির দোকান বসে চেয়ার টেবিলে। কিন্তু গাঁ-গেরামের মেলায় চটের বস্তায় মিষ্টির দোকানের ঐতিহ্য আজও বহমান। মাটি কিংবা সিলভারের পাতিলে রসে টই টুম্বুর মিষ্টির স্তুপ, যে কারও চোখ-মন জয় করে। একটা সময়ে রসের মিষ্টি বিক্রি হতো কুড়ি কিংবা গ-া হিসেবে। টাকায় মিলতো এক-দেড় কুড়ি। এখন পিস হিসেবে। মেলায় মিষ্টির দোকান নিয়ে কারিগর এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা, শতবর্ষ আগে যেমন ছিল; আজও তেমনি আছে। মেলার বেশ কয়েকদিন আগ থেকে কারিগরদের মধ্যে শুরু হয় ব্যস্ততা। কে কত পরিমাণ এবং কত সুস্বাদু মিষ্টি বানাতে পারে, যেমন এ প্রতিযোগিতা রয়েছে, তেমনি বিক্রিবাট্টা, খরিদ্দারদের প্রশংসা নিয়েও রয়েছে প্রতিযোগিতা। দক্ষিণাঞ্চলের অনেক মেলা কেবল মিষ্টির জন্যই বিখ্যাত। এসব মেলার পূর্ণতা হচ্ছে- হাঁড়ি ভর্তি মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ফেরা। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শী, বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে মেলার মিষ্টি বিলানোতেও রয়েছে নির্মল আনন্দ। Ñশংকর লাল দাশ, গলাচিপা থেকে
×