ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মেলানির্ভর জীবন-জীবিকা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৮ এপ্রিল ২০১৭

মেলানির্ভর জীবন-জীবিকা

গাইবান্ধার গ্রামীণ মেলা অতীত ঐতিহ্য এবং একান্ত নিজস্ব কৃষ্টিকে ধারণ করে এখনও নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট সময়ে উদযাপিত হয়। যেখানে পল্লীর চারু ও কারুশিল্প পণ্যের সমারোহ ঘটে, বেচাকেনা হয়। আবার এসব মেলাকে নির্ভর করেই পেশাদার মৃৎশিল্পী, চারু-কারু শিল্পী এবং মেলার বিশেষ মিষ্টির অনেক কারিগর তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। গাইবান্ধায় চৈতালী, বৈশাখী মেলা, দুর্গা, কালীপূজা এবং অষ্টমী স্নানোৎসবের ওপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট এলাকায় এক থেকে দু’দিনব্যাপী মেলা বসে। অষ্টমীর স্নান উপলক্ষে নির্দিষ্ট দিনে নদীর পাড়ে বসে মেলা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের তিস্তামুখ পয়েন্ট ও বালাসীঘাট, মহিষবান্দি, ঘাঘট নদীর পাড়ে কামারের কুড়া, ওকড়াবাড়ির মেলা। এ ছাড়া অনেক মেলা রয়েছে যা পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হয়ে মাস জুড়েই চলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সদর উপজেলার দারিয়াপুরের মীরের বাগান, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ঠাকুরবাড়ির মেলা, গোবিন্দগঞ্জের গাংনগরের মেলা, কামদিয়ার রাজাবিরাটের মেলা, সাঘাটা উপজেলার ভরতখালির কাষ্টকালীবাড়ির মেলা অন্যতম। এছাড়া তিন থেকে সাত দিনব্যাপী মেলা বসে গোবিন্দগঞ্জ, ফুলপুকুরিয়া, চড়কবাড়ি, ফাঁসিতলা, বড়ুয়াহাট, সাঘাটার জুমারবাড়িসহ সাদুল্যাপুর, পলাশবাড়ি এবং সুন্দরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। এসব মেলার পণ্য সম্ভারের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। গাঁয়ের নিয়মিত হাট-বাজারে এসব পণ্য পাওয়া যায় না। শুধু মেলাতেই বিশেষ চিহ্নিত কিছু পণ্যের আমদানি হয়। সে জন্য সব শ্রেণীর ক্রেতার এসব পণ্য কেনার বা সংগ্রহের বিশেষ আকর্ষণ থাকে। বিচিত্র বর্ণের এসব চারু-কারু পণ্য কিনতেই নানা বয়সের মানুষের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে মেলা। নদীতীরে, ফসলকাটা ক্ষেতে, নয়ত পরিত্যক্ত কোন মাঠে বসে গ্রামীণ মেলা। চারু-কারু পণ্যের পাশাপাশি মাটি, শোলা, বাঁশ ও তালপাতার তৈরি নানা খেলনা মেলার অন্যতম আকর্ষণ। গাইবান্ধায় এসব খেলনা তৈরি করে গাঁয়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পেশাদার মৃৎ ও খেলনাশিল্পী। সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ও খোলাহাটী ইউনিয়নের পালপাড়া, শিবপুর, কলাকোপা, ধুতিচোরা, ফুলছড়ির রসুলপুর, কঞ্চিপাড়া, সাঘাটার ঝাড়াবর্ষা, পুটিমারী, সুন্দরগঞ্জের বেলকা, পাঁচপীর, ধুবনী, চ-িপুর, কঞ্চিবাড়ী, শ্রীপুর, ধর্মপুর, সাদুল্যাপুরের রসুলপুর, দামোদরপুর, পলাশবাড়ীর হিজলগাড়ী এবং গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর, আরজিশাহপুর ও শক্তিপুর গ্রামে মাত্র চারশ’ ৪০ পরিবার এখনও মেলানির্ভর মৃৎশিল্প ও খেলনা তৈরির কাজে নিয়োজিত। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা এখনও পৈত্রিক পেশা আঁকড়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। এদের উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে মাটির তৈরি বর্ণালী খেলনা, পুতুল, শোলার তৈরি ফুল ও পশুপাখি, মাটি আর মৃত পশুর পেটের চামড়ায় তৈরি ঢোলগাড়ি, বাঁশের বাঁশি, তালপাতার ক্যাচ-ক্যাচি, পাখি ছাড়াও নানা জিনিস। মেলা মৌসুমের এসব চাহিদা পূরণে আগে থেকেই খেলনা বানিয়ে মজুদ রাখতে হয়। কিন্তু দরিদ্র খেলনা কারিগররা অর্থাভাবে চাহিদা মোতাবেক পণ্য মজুদ রাখতে পারে না বলে তারা তাদের চিরায়ত অভাব থেকে মুক্ত হতে পারছে না। এছাড়া এ জন্য পণ্য বাজারজাত-করণে মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নির্ভর করতে হয় বলে তাদের সীমিত লাভ নিয়ে খুশি থাকতে হয়। সে কারণেই মেলানির্ভর এসব কারিগর উন্নত প্রযুক্তি এবং রং ব্যবহারের কৌশল বিষয়ে সরকারী উদ্যোগে প্রশিক্ষিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। Ñআবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা থেকে
×