ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর শহরে ৫ লাখ লিটার পানি ঘাটতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৮ এপ্রিল ২০১৭

যশোর শহরে ৫ লাখ লিটার  পানি ঘাটতি

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই যশোর শহরে দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সঙ্কট। পৌরসভার পানি সরবরাহের লাইনে কল দিয়ে অনেকটা টিপ টিপ করে পানি পড়ছে। এতে গৃহস্থালির কাজকর্ম বিঘিœত হচ্ছে। ফলে যশোর পৌরসভার সরবরাহকৃত পানির ওপর নির্ভরশীলরা দুর্ভোগে পড়েছেন। তারা এ বিষয়ে এক্ষুনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যশোর পৌরসভা সূত্রমতে, ভূগর্ভের পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে যাওয়ায় পাম্প স্টেশনগুলোয় ঠিকমতো পানি উঠছে না। ২৯টি পাম্পের মধ্যে ৪টি বাদে ২৫টিতে পানি উত্তোলন হচ্ছে অর্ধেক। সূত্রমতে, স্ট্যাটিক ওয়াটার লেভেল (পানির স্থিতিশীল স্তর) ৩৬ ফিট নিচে নেমে গেছে। গত শুষ্ক মৌসুমে ৩১ ফিট নিচে নেমেছিল। এবার হঠাৎ অস্বাভাবিক স্তর পতনে পাম্পে পানি উঠছে কম। ফলে চাহিদার বিপরীতে পানি সরবরাহ কমেছে। আসছে বৈশাখ মাসে পানির স্তর আরও ২ ফিট নেমে যেতে পারে। তখন সঙ্কট আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, যশোর পৌরসভার ১৩ হাজার ৭০০ পানি সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগে দৈনিক পানির চাহিদা ১ কোটি ৬৫ লাখ লিটার। গত মাসেও প্রতিদিন সরবরাহের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭৫ লাখ লিটার। চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি সরবরাহ ছিল। তবে চলতি মাসে স্তর পতনের ফলে ৯৫ লাখ লিটারের বেশি পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। দশ দিন ধরে যশোর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ পানির লাইনে ধীরগতির খবর পাওয়া গেছে। শহরের রেলগেট, রায়পাড়া, ডালমিল, চাঁচড়া মোড়, খড়কির বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, ষষ্ঠিতলা, বেজপাড়ার কয়েকটি অংশ, লোন অফিস পাড়া, শংকরপুরস্থ বিভিন্ন স্থানে পানির সঙ্কটে দুর্ভোগে আছেন মানুষ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত মাসের শেষদিক থেকে পানি সরবরাহ কমতে থাকে। দিন যত যাচ্ছে গতি কমছেই। শহরের রায়পাড়া এলাকার দুই নারী হেলেনা পারভীন ও শারমিন আক্তার রীতা জানান, সপ্তাহ খানেক ধরে সরবরাহের পানির গতি কম। দিন দিন আরও কমছে। গোসল, কাপড়-চোপড় ধোয়া, বাসন কোসন ধোয়া, ঘর মোছার কাজে সমস্যা হচ্ছে। জানা গেছে, কয়েক বছর ধরেই গরমের দিনে পৌরসভার পানি সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিহীন প্রকৃতিতে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। পাশাপাশি যশোরে নদী-খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভের স্তরে পানি জমা হচ্ছে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত উত্তোলন বাড়ছে। এদিকে, নিয়মনীতি উপেক্ষা করে পৌরসভার অনুমতি ছাড়াই অনেকে সাবমারসেবল পাম্প বসিয়ে পানি তুলছেন। ফলে শহর এলাকায় ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নামছে। পাশাপাশি অনেকে পৌর পানির লাইনে মোটর বসিয়ে বাসার ট্যাংকে পানি তুলছেন। এ জন্য আশপাশের গ্রাহকরা পানির সমবণ্টনে বঞ্চিত হচ্ছেন। পানির গতি কমার এটিও অনেক কারণের একটি। যশোর পৌরসভার পানি সরবরাহ শাখার প্রকৌশলী (সহকারী) হাফিজুর রহমান বলেছেন, পৌরসভার পানির লাইনে মোটর বসিয়ে পানি তুলে নেয়া বেআইনী। এ কারণে অন্যরা পানির ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন। অসম বণ্টন হচ্ছে সরবরাহ করা পানির। পানির ধীরগতি, সময়তে সরবরাহ বন্ধ নিয়ে অভিযোগ করে বলেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। খড়কি হাজামপাড়া এলাকার হাফিজুর রহমান বলেন, পানির গতি একেবারেই কম সময়মতো থাকছে না। বেশ ঝামেলায় আছি। তীব্র খরার দিনে কি হবে এ নিয়ে চিন্তিত আছি। এ ধরনের দুর্ভাবনায় থাকা রায়পাড়া এলাকার বাসিন্দা তোহিদুল আজীম ও তেঁতুলতলার অধিবাসী ফিরোজ হক বলেন, আমাদের আশপাশের অনেকে পৌরসভার পানির লাইন থেকে মোটর দিয়ে পানি তুলে নেয়। পৌর কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এ ধরনের কার্যকা-ের কারণে আমরা অন্যরা পানির ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত হচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী পানি বিঘিœত ও প্রবাহের ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি সরবরাহ) হাফিজুর রহমান বলেন, ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত হলে স্তর স্বাভাবিক হলে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহে সমস্যা হবে না। পাশাপাশি পানির ধীরগতি দূর করতে পৌরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করে পানির পাইপ ওয়াশ করে নিতে গ্রাহকদের পরামর্শ দেন তিনি। কারণ হিসেবে তিনি জানান, অনেক সময় পাইপে আয়রন জমে পানি প্রবাহের গতি কমে যায়।
×