ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইপিইউ ঢাকা ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৮ এপ্রিল ২০১৭

আইপিইউ ঢাকা ঘোষণা

পাঁচ দফা ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে আইপিইউ সম্মেলন শেষ হলো বুধবার। এ ঘোষণার মধ্যে রয়েছেÑ বৈষম্য হ্রাস, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বন্ধ, পার্লামেন্টকে আরও প্রতিনিধিত্বশীল করা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি। এছাড়া জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে একটি কৌশলপত্র নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে আইপিইউ। ঢাকা ঘোষণায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরা ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সিরিয়ায় রাসায়নিক আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক আইনে রাসায়নিক অস্ত্র যে নিষিদ্ধ তা বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দেয়ার বিষয়টিও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বনেতাদের এই সম্মেলনের বড় একটি অর্জন দৃশ্যমান হয়ে উঠল সমাপনী দিনে। বর্ণাঢ্য ও সফল সম্মেলন আয়োজনের জন্য বিশ্বনেতারা বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। অপরদিকে স্বাগতিক বাংলাদেশ এ সম্মেলনকে দেখছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বের গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের আস্থার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। ঢাকায় প্রথমবারের মতো আইপিইউ (ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়া ছিল একটি চ্যালেঞ্জ। ১২৫ বছরের বনেদি এই সংগঠনটি বিশ্বের সংসদীয় রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবেই পরিচিত। এ সম্মেলন বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে তাতে কোন সংশয় নেই। একই সঙ্গে বাংলাদেশ এই সম্মেলনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে একটি ইতিবাচক বাংলাদেশের পরিচিতি দৃঢ়ভাবে তুলে ধরার সুযোগ ভালভাবে কাজে লাগিয়েছে। আমরা বলতে পারি, পৃথিবীর নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকদের সেতুবন্ধন রচনার পথে অগ্রগতি সাধিত হলো। আইপিইউ-এর মতো একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন বাংলাদেশে হওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এ সম্মেলনে প্রায় ১৭১টি দেশের প্রতিনিধিরা এসেছেন। এর মধ্যে ৯৫টি দেশের জাতীয় সংসদের স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকাররা ছিলেন। প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা হলো সংসদ সদস্যরাই একটি দেশের সাধারণ মানুষকে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। এখন যে বিশ্ব বাস্তবতা তার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিসর পেরিয়ে সংসদ সদস্যরা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার প্রতিনিধিত্ব বিস্তার করছেন কিংবা করার সুযোগ পাচ্ছেন। আর সেই সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে আইপিইউ। এবারের সম্মেলনে বিশ্বের উল্লেখযোগ্যস্যংখক দেশের সংসদ সদস্যরা ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ থেকে শুরু করে বিশ্বের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, লৈঙ্গিক অসমতা, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত বিবর্তনসহ প্রায় বিদ্যমান সব আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়েই আলোচনা করেছেন। সম্মেলনের সমাপনী ঘোষণা শেষে আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় সংসদের স্পীকার এবং ১৩৬তম আইপিইউ সম্মেলনের সভাপতি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশ যে সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়নের রোল মডেলÑ তা বিশ্বের জনপ্রতিনিধিরা সম্মেলনে এসে প্রত্যক্ষ করলেন। এত সফলতম আয়োজন বাংলাদেশের জন্য এবং জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানের ও গৌরবের বিষয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বের গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে এই সম্মেলনই তার বড় প্রমাণ। দশম জাতীয় সংসদের ওপর যে তাদের আস্থা রয়েছে সেটা প্রমাণিত হলো। ঢাকা ঘোষণায় বলা হয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৈষম্য কমাতে মানবাধিকার সুরক্ষায় আইনী কাঠামো শক্তিশালী এবং বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। সকলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্থান হিসেবে আইনসভাকে শক্তিশালী করতে হবে। বিশ্ব শান্তি বজায় ও সৌহার্দ্য- বিনষ্টির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে বিশ্বনেতারা আইপিইউ সম্মেলনে বিশ্ববাসীর সামনে আশার যে মশালটি জ্বালিয়ে তুলেছেন সেটি তুলনাবিহীন।
×