ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

খালেদা জিয়া মুখ খুলেছেন, অতঃপর?

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৮ এপ্রিল ২০১৭

খালেদা জিয়া মুখ খুলেছেন, অতঃপর?

বেগম জিয়ার কম কথা বলার অভ্যাস নতুন কিছু নয়। তিনি যখন মুখ খোলেন তখন হয় রেগে নয়ত কোন বিশেষ কারণে। অনেকদিন পর দেখলাম তিনি নির্বাচনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেছেন। নির্বাচন যে একটি যুদ্ধ তা জানলেও ভুলে গিয়েছিলাম। দেশে এখন রাজনীতির ধারা অন্য ধরনের। বলতে গেলে মাঠে কোন রাজনীতিই হয় না। যখন থেকে বিশ্বায়ন আর মানুষ নিজের হাতে দুনিয়া পেয়েছে তখন থেকে আর সব বিষয়ের মতো রাজনীতিও মুঠোয় ঢুকে আছে। লোকজন ভাড়া করে বা প্রলোভন-ভয় দেখিয়ে মাঠে নিতে পারলেও আসলে মানুষ আর পুরনো ধাঁচের এসব পছন্দ করে না। খালেদা জিয়া শুধু না আওয়ামী লীগের বেলায়ও এটা সত্য। তাই এখন লড়াই হয় যন্ত্র মাধ্যমে। মিডিয়ায় বা সামাজিক কোন মাধ্যমে। খালেদা জিয়া নির্বাচনী যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা বলার ঠিক আগে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন বিএনপি প্রার্থী। বেশ ভাল ব্যবধানে ধানের শীষের কাছে নৌকার এই হার নিশ্চয়ই ইঙ্গিতবাহী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজেই বলেছেন দলে কাউয়া ঢুকেছে। এই কাউয়া বা কাকেরা উচ্ছিষ্টভোগী। এরা জিতলে আছে, হারলে নেই। যে কোন নির্বাচনে দলের পরাজয়ের পেছনে থাকে নিজেদের মানুষ। এ কারণে লীগের ভিত শক্ত হলেও তাদের কপালে শান্তি নেই। এ দেশের ভৌগোলিক অবস্থান এমন এক পাশে ভারত আর আরেক পাশে মিয়ানমার। উভয় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ অমুসলিম। তাতে কোন অসুবিধা ছিল না। অসুবিধা তৈরি করেছে দেশের নষ্ট রাজনীতি। তার ইন্ধনের জায়গা সাম্প্রদায়িকতা। সাতচল্লিশের পাপ এখনও টেনে চলেছে দেশ। সঙ্গে আছে পাকিপ্রেম। পাকিস্তানের ভাবধারায় দেশ চালানো ওপরে প্রতীকগুলো ঠিক রাখা কোন মৌলবাদী দলের দ্বারা অসম্ভব। মৌলবাদী দলগুলোকে আমরা যত দোষারোপ করি না কেন তাদের একটা আদর্শ আছে। তারা সেটা বিশ্বাসও করে। ফলে একটা দল চায়Ñ যাতে সাপ মরবে আবার লাঠিও ভাঙবে না। সে চালের কারণে দেশে বিএনপির রমরমা। যে যাই বলুক প্রান্তিক নামে পরিচিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভেতর এদের একটা ভাল জায়গা আছে। নানাভাবে তাদের লাভবান হওয়ার পেছনে আছে বিদেশী মদদ। বিএনপি আবার যে নড়েচড়ে বসতে চাইছে তার পেছনে কলকাঠি নাড়ার মানুষের অভাব নেই। গজিয়ে ওঠা সুশীল সমাজ ইনিয়ে-বিনিয়ে এদের কথা বলে। আজ যারা আওয়ামী লীগের প্রসাদভোগী তাদের অনেকেই ভেতরে ভেতরে বিএনপিমুখী। সমাজে একটা বিশাল রোগের নাম অন্ধত্ব। সেটা ধর্মের নামে, সামাজিক অবদমনের ভেতরে, একমুখী দলবাজির কারণে গড়ে ওঠে। রাজনীতি তাকে এমনভাবে এস্তেমাল করেছে এখন এটা মহামারী। আওয়ামী লীগ দেশ ভাল চালাচ্ছে না খারাপ চালাচ্ছে সেটা এখানে বিষয় নয়। উন্নয়ন বা অগ্রগতিও কেউ ধর্তব্যে আনে না। সবার মনে মনে জঙ্গীবাদের নাটক রূপটা কিন্তু পপুলার। এই প্রিয়তা ভিত্তিহীন হলেও এটাই যেন বিশ্বাস। জনাব আজাদের মতো দেশপ্রেমিকের মৃত্যুও এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। চুপ করে থাকা মানুষের মনের এই নীরব ভাষা বুঝেই বিএনপি সরব হতে চাইছে। খালেদা জিয়ার মাথার ওপর ঝুলছে আইনের খাঁড়া। বিচার প্রক্রিয়ায় মামলাতে হাজিরা দেয়ার সময় বাড়াতে বাড়াতে মামলাই তামাদি হওয়ার পথে। এমন হলে কে বিচার প্রক্রিয়াকে ভয় পাবে? সরকারে থাকার পরও আওয়ামী লীগ কেন এসব সামাল দিতে পারে না? প্রশাসনের কত জায়গায় যে দালাল আর দুশমনেরা ঢুকে আছে সেটা তারাও জানে না। একবার সিনারিওটা উল্টোদিক থেকে ভাবুন। এই মামলা ইত্যাদি এতদিনে দশবার রায় পেয়ে যেত। কিন্তু কোথাও না থেকেও বিএনপি ঠিকই ম্যানেজ করে নিতে পারে। গতবারের নির্বাচনে না গিয়ে তারা যে ভুল করেছিল সেটা বোধ করি এবার তারা আর করবে না। দেশের রাজনীতিতে সঠিক নির্বাচনের বিকল্প নেই। সেখানে যার যা জায়গা সে তা পাবে এটাই নিয়ম। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, বিএনপি যদি সত্যি তা চাইত কেন তারা গতবার ইলেকশনে না গিয়ে এতগুলো মানুষের জীবন ও সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলল? যা তারা পাবে না তার জন্য যান জান নিয়ে খেলাধুলা করতে? অথচ এরপরও তাদের পপুলারিটি কমেনি। খালেদা জিয়া যখন মুখ খুলেছেন বুঝতে হবে তারা প্রস্তুত হচ্ছে। রাজনীতিহীন মাঠে অনেক গ-গোল অনেক ধ্বংস আর জঙ্গীবাদের জন্ম হয়। সে কারণে সবাই থাকুক সবার যোগে রাজনীতি দেশের হাল ধরুক সবাই তা চায়। কিন্তু আগেভাগে বলে রাখা প্রয়োজন, দেশ ও জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার নেই কারও। উন্নতি-অগ্রগতি চলমান সমৃদ্ধি যেন ব্যাহত না হয়। একটা বিষয় জনগণের বোঝা জরুরী। বিশ্ব আবহ আর দুনিয়ার দেশে দেশে যে রাজনীতি তার বাইরে চলার সুযোগ নেই। চললে দেশের কাঠামো, দেশের আদল পাল্টে দেবে মুরব্বিরা। খালেদা জিয়ার দল অনেক বছর সরকারের বাইরে। তাদের নেতাদের বয়স বেড়েছে। গদিতে আসলেও তারা আর আগের মতো চলমান থাকতে পারবেন বলে মনে হয় না। বাকি নেতৃত্ব বা তারুণ্য কোথায়? আপাতত আমরা শেখ হাসিনার সরকারের যত নিন্দা বা সমালোচনা করি না কেন মানতে হবে তিনি এখন এক অনন্য উচ্চতায়। তাকে কেন্দ্র করে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি বিদেশেও ইমেজ বেড়েছে আমাদের। আছে ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতার বিষয়। এগুলো মাথায় না রেখে খামোখা অন্ধ সাম্প্রদায়িকতা বা পাশের দেশের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত সিদ্ধান্ত কোনভাবেই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। তারপরও সাবধানতার বিকল্প নেই। খালেদা জিয়ার দল জিতুক, হারুক বা ইলেকশনে আসুন চাই না আসুক আমাদের দেশ ও প্রগতির যেন কোন লোকসান না হয়। বাংলাদেশের জয়ে তার শান্তিতেই সকলের শান্তি। ম্যাডাম জিয়া রিজভী-ফখরুলরা যত তাড়াতাড়ি তা বুঝবেন তত ভাল। আর সরকারী দলও যেন মনে না করে কোন কিছু গ্যারান্টেড। একবার পদস্খলন হলে কে কোথায় তলিয়ে যেতে পারে সেটা যেন ভুলে না যান তারা। সবার ওপরে দেশÑ এই হোক সত্য।
×