ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেসামরিক লোকদের ওপর রাসায়নিক হামলার জবাব

সিরিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৮ এপ্রিল ২০১৭

সিরিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি শহরে রাসায়নিক হামলার জবাবে সরকারী বাহিনীর সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলায় অন্তত পাঁচ সিরীয় সেনাসদস্য নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে বহু সেনা সদস্য। নিহতদের মধ্যে একজন জেনারেল পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তাও ছিলেন বলে জানায় সিরিয়ান অবজারভেটরি। পেন্টাগন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোরে সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় হোমস প্রদেশের আশ-শাইরাত বিমান ঘাঁটির কয়েকটি অবস্থানে ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে মার্কিন বাহিনী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ রাতে আমি সিরিয়ার একটি বিমান ঘাঁটিতে সামরিক হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছি। ওই ঘাঁটি থেকে রাসায়নিক হামলা চালানো হয়েছিল।’ খবর বিবিসি, এএফপি ও সিএনএনের। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, মার্কিন টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় বিমানঘাঁটিটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ওই ঘাঁটিতে সুখোই-২২, সুখোই-২৪ এবং মিগ-২৩ বিমান ছিল। হোমসের গবর্নর তালাল বারাজি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ওই হামলায় হতাহতের সংখ্যা কম হলেও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘণ্টা ধরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এদিকে রাশিয়া জানিয়েছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরী বৈঠকের দাবি জানাবে তারা। রুশ ফেডারেশন কাউন্সিলের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির প্রধান ভিক্টর অজেরভ বলেন, রাশিয়া প্রথমে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরী বৈঠকের দাবি জানাবে। এ কর্মকা- জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মার্কিন আগ্রাসন বলেই বিবেচিত হবে। রাশিয়ার পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা কমিটি জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সংঘাত বাড়তে পারে। আরব দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে মার্কিন হামলাকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে সৌদি আরব। আসাদ সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরান এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থানরত মার্কিন নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস রোজ ও ইউএসএস পোর্টার থেকে সিরিয়ার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে ৫৯টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা জানিয়েছে মার্কিন বাহিনী। পেন্টাগনের মুখপাত্র জেফ ডেভিস সাংবাদিকদের বলেন, সিরিয়ার বিমান ঘাঁটিটির জঙ্গীবিমান, বিমান রাখার স্থান, জ্বালানি ও রসদের ভা-ার, সমরাস্ত্র সরবরাহ বাঙ্কার, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং রাডার লক্ষ্য করে এসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, সিরিয়ার ভবিষ্যতের বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের আর কোন ভূমিকা থাকতে পারে না। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছিল যে, বাশার আল আসাদের পদচ্যুতির বিষয়টি তাদের সিরিয়া নীতিতে আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। হামলার ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সিরিয়ার ওই শায়রাত বিমানঘাঁটি থেকেই মঙ্গলবার রাসায়নিক হামলা চালানো হয়েছিল এবং তিনিই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে ফ্লোরিডার অবকাশযাপন কেন্দ্র মার-এ লাগোতে দেয়া বিবৃতিতে তিনি সিরিয়ায় যুদ্ধ শেষ করতে বিশ্বের সব ‘সভ্য দেশের’ সহযোগিতাও চেয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশের খান শিখুনে চালানো ওই রাসায়নিক গ্যাস হামলায় অন্তত ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। এদের মধ্যে বহু শিশু রয়েছে। এরপর বুধবার জর্দানের বাদশা আব্দুল্লাহর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, বেসামরিক লোকের ওপর বিষাক্ত গ্যাস হামলা চালিয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সীমা অতিক্রম করেছেন। পেন্টাগনের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন জেফ ডেভিস এক বিবৃতিতে জানান, হামলার আগে তারা ওই বিমানঘাঁটিতে থাকা রুশ সেনাদের সরে যেতে বলেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসির বিদেশনীতি বিষয়ক সংবাদদাতা পল ম্যাকলরিও জানান, ঘাঁটিতে থাকা রুশ বাহিনীকে হামলার কথা আগেই জানিয়েছিল মার্কিন সেনাবাহিনী। হামলার খবর স্বীকার করেছে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনও। এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তারা জানায়, বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে মার্কিন বাহিনী সিরিয়ার সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আগ্রাসী হামলা করেছে। হামলার পর এক বিবৃতিতে হোমসের গবর্নর তালাল বারাজি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও ইসলামিক স্টেটের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সাহায্য করবে।
×