ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশের বাজার চড়া, স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৮ এপ্রিল ২০১৭

ইলিশের বাজার চড়া, স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। দাম এত বেশি যে, স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে এ মাছটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পহেলা বৈশাখে যে, ইলিশ খেতেই হয়, এরকম কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ‘পান্তা-ইলিশ’ বাংলা নববর্ষের নব্য সংস্করণ। নববর্ষ উদযাপনে এই মাছটি খাওয়ার কোন ইতিহাসও খুঁজে পাওয়া যায় না। আর তাই এসব কারণে ইলিশ সংরক্ষণ এবং জাটকা নিধন বন্ধ করতে গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নববর্ষের খাবার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিলেন ইলিশ মাছ। সে সময় নববর্ষের সরকারী সব প্রোগ্রাম থেকেও বাদ পড়ে ইলিশ। ফলে গত বছর শেষ পর্যন্ত বাজারে ইলিশ নিয়ে খুব মাতামাতি চোখে পড়েনি। এদিকে, এবার বৈশাখের এক সপ্তাহ বাকি থাকতে ইলিশ মাছ নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে। দাম চলে গেছে নাগালের বাইরে। ইতোমধ্যে এ মাছটির দাম বাড়াতে তৎপরতা বাড়িয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। তবে প্রধানমন্ত্রী এবারও বৈশাখী খাবারের তালিকা থেকে ইলিশ বাদ দিতে পারেন বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া সার্বজনীন পহেলা বৈশাখ উৎসবের খাবার ম্যানু থেকে অনেকেই পান্তা-ইলিশ বাদ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পান্তা-ইলিশের পরিবর্তে বরং অনেক পরিবার বৈশাখী খাবার তালিকায় সাদা ভাত, ডাল, ভর্তা-শাকসবজি, দেশীয় মাছ, ডিম এবং গরু-মুরগির মাংস রেখেছেন। বাড়তি আয়োজনে থাকবে পিঠা-পায়েস ও মুড়ি-মুড়কি। জানা গেছে, গতবারের ন্যায় এবার বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পহেলা বৈশাখ উৎসবের ম্যানুতে পান্তা-ইলিশ আর রাখা হচ্ছে না। বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো নববর্ষের অনুষ্ঠানগুলোতে ইলিশ মাছ না রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। এছাড়া ইলিশ মাছ রক্ষায় সোচ্ছার হচ্ছেন দেশের সাংস্কৃতিক কর্মীরাও। ইলিশ মাছ রক্ষায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা ইতোমধ্যে নববর্ষে পান্তা-ইলিশের পরিবর্তে ভর্তা-শাকসবিজসহ দেশীয় ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে, বৈশাখ সামনে রেখে রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে শেষ মুহূর্তে ইলিশের সরবরাহ বেশ বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে বেড়ে গেছে ইলিশ মাছের দাম। শুক্রবার একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে অন্যান্য মাছের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও দেখা গেলেও বাড়তি ছিল ইলিশের দাম। বাজারগুলোয় ৬০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। ফকিরাপুল বাজারের মাছ বিক্রেতা রাশেদ জানান, গত সপ্তাহে ইলিশ (৬০০ গ্রাম) বিক্রি হয়েছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। বর্তমানে এর মূল্য ৮০০ থকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, (ইলিশ) মাছের যোগান এখন কমে গেছে, তাই দাম বাড়ছে। সামনে আরও কমবে। আগে এই সময়ে বাজারে প্রচুর জাটকা আসত। এখন অভিযান এর কারণে এটার সাপ্লাইও কমে গেছে। সামনে পহেলা বৈশাখে দাম আরও বাড়তে পারে কি না জানতে চাইলে ওই বাজারের আরেক বিক্রেতা জসিম জানান, পহেলা বৈশাখের ইলিশ বিক্রি শুরু হবে আরও দুদিন পর থেকে। এই বছর কেমন বেচা-বিক্রি হবে তা জানি না, তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় পাবলিক গতবছর (পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে) ইলিশ অনেক কম কিনেছিল। তবে নববর্ষের প্রথম দিনে খাদ্য তালিকায় ইলিশের বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অনেক ক্রেতা। মুগদা বাজারে মাছ কিনছিলেন মিজানুর রহমান রিংকু। তিনি বলেন, এবারের পহেলা বৈশাখের উৎসবে পান্তা-ইলিশ রাখা হবে না। বরং খাবারের তালিকায় থাকবে ভর্তা, শাকসবজি, দেশীয় ফলমূল এবং পিঠা-পায়েস। এদিকে, নিত্যপণ্যের বাজারে বেড়েছে চালের দাম। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৩ টাকায়। এছাড়া ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, আটা এবং ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গরু ও খাসির মাংস আগের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম।
×