ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিন সিরিজেই বাঘ-সিংহ সমানে সমান

প্রকাশিত: ০৮:১০, ৭ এপ্রিল ২০১৭

তিন সিরিজেই বাঘ-সিংহ সমানে সমান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বিদায়ী টি২০ ম্যাচে স্মরণীয় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪৫ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৭৬ রানের ‘চ্যালেঞ্জিং’ স্কোর গড়ে টস জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। জবাবে ১৮ ওভারে ১৩১ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। সাকিব-আল হাসান (৩/২৪) ও মুস্তাফিজুর রহমানদের (৪/২১) সাঁড়াশি বোলিং আক্রমণের মুখে স্বাগতিকদের হয়ে চামারা কাপুগেদারা (৫০), উপুল থারাঙ্গা (২৩) ও থিসারা পেরেরা (২৭) ছাড়া আর কেউ দাঁড়াতেই পারেননি। এর মধ্য দিয়ে লঙ্কা সফরে টেস্ট-ওয়ানডের পর টি২০ সিরিজও ১-১এ ড্র করল অতিথি টাইগাররা। এই ম্যাচে টি২০ অভিষেক হয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের। তবে দুর্ভাগ্য, তাকে শূন্যহাতে সাজঘরে ফিরিয়েই হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছেন তারকা পেসার লাসিথ মালিঙ্গা! শুরুতেই ম্যাশের বিদায়ী টি২০তে দুর্দান্তভাবে জ্বলে ওঠেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। রান পেয়েছেন সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, সাকিব-আল হাসান। সিনিয়রদের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের দিন কম যাননি তরুণ মোসাদ্দেক সৈকত-সাব্বির রহমানরাও। কাঁধের ইনজুরির কারণে এই ম্যাচ খেলতে পারেননি দেশসেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। তবে তামিমের অভাবটা বুঝতে দেননি সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস। সিরিজ রক্ষার টি২০ ম্যাচে শুরু থেকেই এই দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান চড়াও হন লঙ্কান বোলারদের ওপর। সিরিজে প্রথমবার খেলতে নামা ইমরুল দারুণ আগ্রাসী ব্যাটিং করেছেন। অপরপ্রান্তে সৌম্যও খেলেছেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। প্রথম ৫ ওভারেই পঞ্চাশ রানের কোটা পার করে বাংলাদেশ। দলীয় ৭১ রানে ধৈর্য হারান সৌম্য সরকার। গুনারতেœর বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ওপেনার। আউট হওয়ার আগে ১৭ বলে চারটি চার ও দুটি ছয়ে ৩৪ রান করেন সৌম্য। পরের ওভারে ফিরেন ইমরুল কায়েসও। সেক্কুগে প্রসন্নর বলে দ্রুত এক রান নিতে চেয়েছিলেন সাব্বির রহমান। তবে শেষ পর্যন্ত ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি ইমরুল। ২৫ বলে চারটি চার ও এক ছয়ে ৩৬ রান করেন তিনি। এর পর দারুণ খেলতে থাকা সাব্বির রহমান ফিরে যান ১৯ রান করে। সঞ্জয়ার বলে বোল্ড হন এই ব্যাটসম্যান। উইকেটে এসে দারুণ খেলতে থাকেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব-আল হাসান। ৩১ বলে ৩৮ রান করে বাংলাদেশের স্কোরটাকে দুই শ’ রানের আশপাশে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন। তবে নুয়ান কুলাসেকারার বলে বোল্ড হয়ে ফিরে আসেন সাকিব। ১১ বলে ১৭ রান করা মোসাদ্দেক হোসেনও সাকিবের পথ ধরেন। এরপর দলের স্কোর বোর্ডটা সচল রাখার দায়িত্বটা পালন করেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৪*)। মাত্র ৬ বলে ১৫ রান করেন মুশি। দলের ১৯তম ও নিজের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে হ্যাটট্রিকের পথে দারুণ এক স্লোয়ারে মুশফিকের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন লাসিথ মালিঙ্গা। এরপর একইভাবে বোল্ড করে মাশরাফির বিদায়ী ইনিংসে তাকেও শূন্য রানে (০) ফিরিয়ে দেন। শেষ বলে মিরাজকে (০) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন মালিঙ্গা! ব্যক্তিগতভাবে টি২০ অভিষেকটা ভাল হলো না মিরাজের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি মালিঙ্গার চতুর্থ হ্যাটট্রিক। তবে টি২০ তে প্রথম। ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন । এরপর ২০১১ সালে বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন। সে বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় হ্যাটট্রিকটি করেন তিনি। এ তিনটি হ্যাটট্রিকের দুটিই ওয়ানডে বিশ্বকাপে! মালিঙ্গা বাধা হয়ে দাঁড়াতেই বাংলাদেশের স্কোরটা আর বড় হয়নি। ১৭৬ রানে শেষ হয় সফরকারীদের ব্যাটিংযাত্রা। বড় তারকা মাশরাফির ছোট্ট ফরমেটের বিদায়ের দিনে টি২০ তে অভিষেক মেহেদী মিরাজের। পেসার তাসকিন আহমেদের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান প্রতিভাবান এই ডানহাতি অলরাউন্ডার। কালকের আগে ধর্মশালায় গত টি২০ বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে জয়টাই ছিল ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে বাংলাদেশের সর্বশেষ আনন্দন্দের স্মৃতি। এরপর টানা আট হারের পর এলো এই ক্ষণÑ ম্যাশের টি২০ বিদায়টাকে রাঙিয়ে দিলেন সাকিব-সৌম্য-মুস্তাফিজরা। স্কোর ॥ বাংলাদেশ ১৭৬/৯ (২০ ওভার; ইমরুল ৩৬, সৌম্য ৩৪, সাব্বির ১৯, সাকিব ৩৮, মোসাদ্দেক ১৭, মাহমুদুল্লাহ ৪*, মুশফিক ১৫, মাশরাফি ০, মিরাজ ০, সাইফউদ্দিন ৬; মালিঙ্গা ৩/৩৪, কুলাসেকারা ১/৩০, গুনারতেœ ১/১৫, থিসারা ১/২৪)। শ্রীলঙ্কা ১৩১/১০ (১৮ ওভার; কুশল পেরেরা ৪, মুনাবিরা ৪, থারাঙ্গা ২৩, কাপুগেদারা ৫০, গুনারতেœ ০, শ্রবর্ধনে ০, থিসারা ২৭, সেক্কুগে ১১, কুলাসেকারা ২*, মালিঙ্গা ০, সঞ্জয়া ৬; মুস্তাফিজ ৪/২১, সাকিব ৩/২৪, মাশরাফি ১/৩০, মাহমুদুল্লাহ ১/১৫, সাইফউদ্দিন ১/২৪)। ফল ॥ বাংলাদেশ ৪৫ রানে জয়ী ম্যাচসেরা ॥ সাকিব (বাংলাদেশ) সিরিজ ॥ দুই ম্যাচ টি২০ ১-১ ড্র সিরিজসেরা ॥ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
×