ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লিটন আব্বাস

শতবর্ষী শিক্ষানুরাগী রত্নগর্ভা গেদেরুন্নেসা

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৭ এপ্রিল ২০১৭

শতবর্ষী শিক্ষানুরাগী রত্নগর্ভা গেদেরুন্নেসা

৫ ইঞ্চি জমি ছাড় দিতে, দান করতে অপারগ অধিকাংশ মানুষ। সেখানে ৫ বিঘা জমি দান করে পিতৃমাতৃহীন কন্যা সন্তানদের জন্য কুষ্টিয়ার কুমারখালীর খয়েরচারা মাঠপাড়ায় হাজী কিয়ামত আলী বিশ্বাস ও গেদেরুন্নেসা এতিম বালিকা শিশু পরিবার প্রতিষ্ঠা করেছেন। যুগে যুগে কন্যা সন্তানেরা সমাজ ও রাষ্ট্রে অবহেলিত কী পরিবার কী সংসারে। নানা মাত্রিকতায় নারী নির্যাতন এখনও অব্যাহত। সেখানে মেয়ে শিশু তাও আবার এতিম তারা নিরাশ্রিত সমাজে। তাদের বাসস্থানের জন্য সচেষ্ট ও সজাগ শতবর্ষী ১৬ সন্তানের জননী সমাজচেতন শিক্ষানুরাগী গেদেরুন্নেসা। ১৮ জন এতিম বালিকা শিশুকে আশ্রয় দিয়েছেন তাদের ভরণপোষণ-লেখাপড়ার ভার নিয়েছেন তিনি। স্বামী হাজী কিয়ামত আলী বিশ্বাসকে হারিয়েছেন ২৫ বছর আগে। ১১ ছেলে ও ৫ মেয়ে মোট ১৬ সন্তানকে তিনি সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন-সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বড় ছেলে মোঃ মজিবুর রহমান বিশ্বাসের নামে পাথবাড়িয়া মজিবর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্নœ প্রতিষ্ঠানে তিনি অর্থ এবং জমি দান করেছেন। প্রতিটি সন্তান উচ্চ শিক্ষিত এবং কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কুষ্টিয়ার কুমারখালী সেরকান্দিতে অধিকাংশ সন্তানকে নিয়ে তিনি বসবাস করছেন। মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিয়েছেন, তারাও নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তার নাতি- নাতনিদের অনেকে দেশে ও দেশের বাইরে শিক্ষা গ্রহণ করে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আবার কেউ কেউ অর্জনের পথে। শতবর্ষী এই সমাজেসবক রতœগর্ভা মায়ের স্বপ্ন, স্বাধ ও সাধনা সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কল্যাণকর ও মঙ্গলময় কাজ করে যাওয়া। নিজস্ব ৫ বিঘা জমিতে এতিম বালিকাদের থাকা-খাওয়া, পড়াশোনার জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান। তার এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে এসেছে রুরাল অর্গানাইজেশন ফর রুরাল রিফর্মস (নর)। সম্প্রতি তাদের উদ্যোগে দুস্থ , বিধবা ও এতিম ছাত্রীদের মাঝে স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, শীতবস্ত্র বিতরণ করেন নর-এর নির্বাহী পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ, শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সরোয়ার হোসেন, সাবেক সদকী ইউপির চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান ও গেদেরুন্নেসার পুত্র কুমারখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান বিশ্বাস মধু। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্বে রতœগর্ভা মায়ের বড় ছেলে সমাজসেবক মজিবর রহমান বিশ্বাস, সহ-সভাপতি নাতি আশরাফুল আলম হিরো, নির্বাহী সদস্য ছেলে অধ্যাপক আঃ কাদের বিশ্বাস, আতিয়ার রহমান বিশ্বাস, মোঃ বজলুর রহমান বিশ্বাস। এই শতবর্ষী মায়ের বড় সন্তানও সমাজসেবক। তিনি কুমারখালী অন্ধকল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। প্রতিবছর গরিব, দুস্থ মানুষদের চোখের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠিত এই ধনাঢ্য পরিবার শুধু নিজেদের আয় উন্নতিতে নিয়োজিত নয় মানবমঙ্গলেও ব্রত রয়েছেন। কিভাবে আত্মত্যাগ করতে হয় এ পরিবারকে দেখলে বোঝা যায়Ñ অন্য অনেক ধনাঢ্য পরিবারের জন্য অনুকরণ এবং আদর্শ হতে পারে। রতœগর্ভা গেদেরুন্নেসা বলেন, আমাদের সমাজে নারীরা এখনও পিছিয়ে। তারা অবহেলিত তাদের জন্য সবার কর্তব্য কিছু না কিছু করা। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে এই সমাজে- এই দেশে প্রতিষ্ঠিত করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। আমিও কিছু করছি মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়। যত দিন বাঁচব মানুষের জন্য মানুষ করার জন্য কিছু করে যেতে চাই। [email protected]
×